ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দিশারী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৪ জুন ২০১৬

দিশারী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী

১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিকূল পরিবেশে অনেক স্বপ্ন ধারণ করে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে গড়ে ওঠে দিশারী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। চলতি বছরের শুরুতে সংগঠনের রজতজয়ন্তীতে তিন দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক উৎসবের। এতে ৬ গুণীজনকে সংবর্ধনা প্রদান, স্কুল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, লাঠিখেলাসহ গ্রামীণ নানা খেলার আয়োজন, নাটক, পালাগান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মুগ্ধ করে হাজারো দর্শককে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ অগ্রসর প্রজন্ম তৈরির লক্ষ্যে গড়ে ওঠে দিশারী। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সাফল্য-ব্যর্থতার নানা জটিল পথ পেরিয়ে সংগঠনটি এখনও টিকে আছে এবং নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছে এটাই আশা জাগানিয়া বিষয়। দিশারী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন। কুড়িগ্রাম শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরের এই সংগঠনটি এলাকার শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাতিঘর হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে। নাটক, পালাগানসহ নানা ব্যতিক্রমী ও সাহসী পরিবেশনা দিয়ে শুধু এলাকায় নয়, সারা কুড়িগ্রামে সাড়া জাগানো সংগঠন হিসেবে এর সুনামও আছে। দিশারীর সাড়া জাগানো নাটক ‘গোলামের দরবার’ মঞ্চস্থ করার সময় রাজারহাটে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বাংলাদেশে এমন ঘটনা বিরল। সে সময় (১৯৯৪) শাসকদল এবং রাজাকাররা এই নাটককে খোদাদ্রোহের মিথ্যে অভিযোগ তুলে তাদের কলঙ্ক ঢাকতে চেয়েছিল। চেয়েছিল গোলাম আজম, সাঈদীর মতো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের কার্যকলাপ যাতে নতুন প্রজন্ম জানতে না পারে। আজ সেই সব যুদ্ধাপরাধীদের কারও ফাঁসি আর কারও আমৃত্যু কারাদ-ের রায় বলে দেয় দিশারীর সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। ‘তুই রাজাকার’ ‘চাঁন মিয়ার বায়োস্কোপ’ ‘রক্তক্ষুধা’ ‘পরামর্শ কেন্দ্র’ নাটকের পাশাপাশি ‘স্বাধীনতার পালা’, ‘বঙ্গবন্ধুর পালা’, ‘নববর্ষের পালা’ দিয়ে জেলা ও জেলার বাইরে অনেক স্টেজ শো করেছে দিশারী। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষে ও গণতান্ত্রিক চেতনার পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে দিশারী। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী রাজাকার বিরোধী নাট্যোৎসব প্রশংসা কুড়ায় সবার। এতে রংপুর, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার নাট্যদল অংশ নেয়। এর বাইরে ৯ জুন কাঁঠালবাড়ি গণহত্যা দিবসটির আবিষ্কার, শহীদদের তালিকা তৈরি, দিবসটি উদযাপন শুরুর কারণে ইতিহাসে দিশারীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দিশারী সঙ্গীত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে নতুন শিল্পী তৈরি ও দিশারী ক্রীড়াচক্রের মাধ্যমে খেলোয়াড় তৈরির কাজও হয়েছে এক সময়। শুরু থেকে দিশারীতে পাঠাগার চালু থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতায় তা ধারাবাহিকভাবে সক্রিয় ছিল না। ২০১৩ সাল থেকে নতুন উদ্যোমে পাঠাগারটি চালু হয়েছে। তিন শতাধিক বই সংগৃহীত হয়েছে। শতাধিক পাঠক নিবন্ধনভুক্ত হয়ে নিয়মিত পাঠাগারে আসে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সহায়তায় কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গুণীজন সংবর্ধনা, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে পাঠাগারের উদ্যোগে। লাইব্রেরিয়ান আছেন পাঠাগারের কার্যক্রমকে দেখভাল করার জন্য। মাত্র ২০ টাকায় পাঠাগারের সদস্য হয়ে এখান থেকে বই বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুযোগ পায় নিয়মিত সদস্যরা। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের আর্থিক অনুদানে পাঠাগারগৃহ সংস্কার, ফার্নিচার ক্রয়সহ পাঠের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতি শুক্রবার সকালে পাঠাগারে ইংলিশ লার্নিং ও স্পোকেন কোর্স বেশ সাড়া ফেলেছে। পাশাপাশি মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণসহ নানাভাবে সহায়তা করা হয়। এভাবেই নানা কর্মকা-ের মাধ্যমে দিশারী পাঠাগার সত্যিকারের আলোর দিশারী এবং অন্যান্য এলাকার জন্য উদাহরণ হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে দিশারী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ও দিশারী পাঠাগারের সভাপতি আবদুল খালেক ফারুক বলেন, তরুণ সমাজকে জাগিয়ে তুলে তাদের জ্ঞানভিত্তিক কর্মকা-ের দিকে নিয়ে আসার জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও পাঠাগার কার্যক্রম চলছে। দেশ ও বিদেশের শুভাকাক্সিক্ষদের সহায়তা পেলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই সংগঠনকে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। Ñরাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে
×