ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’ বাস্তবায়নে বিশাল কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৪ জুন ২০১৬

‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’ বাস্তবায়নে বিশাল কর্মযজ্ঞ

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা মহানগরীর টেকসই পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাইকা এবং সরকারের যৌথ অর্থায়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় বৃহৎ এই পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ২০১১ সালে একনেকে অনুমোদন লাভ করে। এর পর থেকেই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। পুরো প্রকল্পের ডিজাইন যৌথভাবে করেছে সরকার, এডিবি ও জাইকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে খুলনা ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি (খুলনা ওয়াসা)। নির্ধারত মেয়াদে ২০১৭ সালের মধ্যে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ‘ইমপাউন্ডিং রিজারভার ও সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ নামে রূপসা উপজেলার তিলক ও পাথরঘাটা নামক স্থানে ১১ কোটি লিটার পানি পরিশোধন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন শোধনাগার এবং অপরিশোধিত পানি সংরক্ষণের জন্য একটি বিশাল জলাধার নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ পানি শোধনাগার। বাগেরহাটের মোল্লাহাট ব্রিজ সংলগ্ন মধুমতি নদীর পাড়ে ইনটেক স্ট্রাকচার এ্যান্ড পাম্প হাউজ নির্মাণ করা হচ্ছে। খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৭টি অন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার ও ১০টি ওভার হেড ট্যাংক ও ১টি বোতল ওয়াটার প্লান্ট নির্মিত হচ্ছে। এছাড়াও রিভার ক্রসিংসহ ৩৬ কিলোমিটার অপরিশোধিত পানির ট্রান্সমিশন লাইন, ৬৫০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন, মোল্লাহাট উপজেলার মধুমতি নদী থেকে রূপসার শোধনাগারে পানি আনার জন্য ১৪০০ মি:মি: (৫৬”) ব্যাসের ৩৩ কিলোমিটার অপরিশোধিত পানির সঞ্চালন ডাকটাইল আয়রন পাইপ লাইন স্থাপন, ওয়াসার প্রধান কার্যালয় ও ২টি জোনাল বিল্ডিং নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ চলছে। প্রথম দিকে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ কিছুটা সমস্যা হলেও এখন সকল কাজই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। সূত্র জানায়, ৩০০ মিমি হতে ১২০০ মিমি ব্যাসের ডাকটাইল আয়রন পাইপ লাইনের মাধ্যমে রূপসা উপজেলার পানি শোধনাগার হতে রূপসা নদীর তলদেশ হয়ে খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে ৭টি রির্জাভার পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিমি পাইপ লাইন বসানো হবে। এই কাজের জন্য প্রায় ৩৩ কিমি ডাকটাইল আয়রন পাইপ ইতিমধ্যে আনা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। বানিয়া খামার, মিরেরডাঙ্গা, চরের হাট, লবন চরা, নতুন বাজার, ছোট বয়রা, রায়েরমহল, বয়রা হাউজিং, দেয়ানা এবং পাবলাতে নির্মাণ করা হচ্ছে আন্ডার গ্রাউন্ড রিজারভার ও ওভারহেড ট্যাংক। খুলনা ওয়াসার ১০ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট (প্রথম পর্যায়ে ৬ তলা) প্রধান ভবনের ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলার ছাদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর দেয়াল ও প্লাস্টারিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। টাইল্স স্থাপনের কাজ চলছে। খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ আব্দুল্লাহ পিইঞ্জ জানান, বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহিত ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ক্ষেত্র ভেদে শতকরা ৩৫ ভাগ থেকে ৯০ ভাগ। প্রকল্পের কিছু কাজ ২০১৬ সালের মধ্যে এবং সম্পূর্ণরূপে প্রকল্পর বাস্তবায়নের কাজ ২০১৭ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরাসরি ৮ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। আর এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের মানুষকে একটি টেকসই ও নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কাজেও গতি আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে খুলনা মহানগরীতে বসবাসকারী প্রায় ১৫ লাখ মানুষের দৈনিক পানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ কোটি লিটার। এ চাহিদা পূরণে খুলনা ওয়াসা ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে উত্তোলিত মাত্র ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহে সক্ষম। যা মোট চাহিদার ৪৫ শতাংশ মাত্র। বিদ্যমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পাশপাশি ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হলে এবং ফুলতলার অন্তর্বর্তীকালীন পানি সরবরাহ প্রকল্প চালু হলে নগরবাসীর পানি সংকট থাকবে না বলে তিনি মনে করেন। উল্লেখ্য, খুলনা শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ইতোপূর্বে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত ছিল। খুলনাবাসী দীর্ঘদিন যাবত নগরীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা কেসিসি থেকে পৃথক করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছে। খুলনাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খুলনা ওয়াসা স্বতন্ত্রভাবে যাত্রা শুরু করে।
×