ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৮ ঘণ্টা পর লাশ উদ্ধার

জলাশয় ভরাটের সময় বালিচাপায় শিশুর মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ৩ জুন ২০১৬

জলাশয় ভরাটের সময় বালিচাপায় শিশুর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের জলাশয় ভরাট করার সময় বালির নিচে চাপা পড়ে স্কুলছাত্র এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ২৮ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ওই গভীর জলাশয় থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। নিহত শিশুর নাম শ্রীবাস চন্দ্র (১১)। সে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার সোনাইমুখী গ্রামের এবং গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিক নীরাঞ্জন চন্দ্রের ছেলে। শ্রীবাস চন্দ্র স্থানীয় কোনাবাড়ি বর্ণমালা কিন্ডার গার্টেনের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবসী জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি জরুন এলাকার একটি জলাশয় ড্রেজার পাইপ লাগিয়ে বালি দিয়ে ভরাটের কাজ করছিল স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ওই জলাশয়ের পাশে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিল শ্রীবাস চন্দ্র। এ সময় প্রায় ২৫ ফুট গভীর জলাশয়ে পড়ে বালির নিচে চাপা পড়ে সে। এদিকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে না আসায় শিশুটির স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে জলাশয়ের পাড়ে শ্রীবাসের জুতা ও জামা পাওয়া যায়। এ সময় তার বন্ধুরা বালিচাপায় শ্রীবাস নিখোঁজের খবর নিশ্চিত করে। এ ঘটনার পর শিশুটির স্বজনরা জলাশয়ে শ্রীবাসের খোঁজ করতে চাইলে কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। পরদিন বৃহস্পতিবারও ওই জলাশয় ভরাটের কাজ অব্যাহত রাখে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার শিশুটিকে খোঁজ করার অনুমতি দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে এলাকাবাসী দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে উদ্ধার করতে পারেনি শিশুটিকে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটির খোঁজে উদ্ধার কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও ডুবুরিরা। তারা জলাশয়ের প্রায় ২৫ ফুট গভীরে তল্লাশি চালিয়ে শিশুটির খোঁজ পায়নি। পরে পাম্প দিয়ে জলাশয়ের পানি অপসারণ করা হয়। এরপর ওই জলাশয়ের তলদেশের বালি অন্তত আরও ৭ ফুট গভীর করে সরানোর কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে প্রায় ২৮ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বালির নিচে চাপা পড়া শ্রীবাসের লাশ উদ্ধার করে তারা। লাশ উদ্ধারের পর এলাকাবাসীর মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা এ ঘটনার জন্য স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের বাবা নীরাঞ্জন চন্দ্র জানান, বুধবার বিকেল ৫টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের জলাশয়ের পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ছেলে শ্রীবাস। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ওই রাত ৮টার দিকে জলাশয়ের পাড়ে শ্রীবাসের জুতা ও জামা পাওয়া যায়। তার বন্ধুরাও বালিচাপায় শ্রীবাস নিখোঁজের খবর নিশ্চিত করে। এ ঘটনার পর জলাশয়ে ছেলেকে খুঁজতে চাইলে কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। এ ব্যাপারে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান জানান, যথাসময়ে শিশুটির ব্যাপারে কেউ ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করেনি। ঘটনার পর ড্রেজারের লোকজন পালিয়ে যায়। শিশুটির লাশ শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
×