ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চার্লিগঞ্জ থেকে খুলনা

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৩ জুন ২০১৬

চার্লিগঞ্জ থেকে খুলনা

বঙ্গোপসাগরের সন্নিকটে নারকেল-সুপারির দেশ সবুজ ‘খুলনা’। অপরূপ সমৃদ্ধ খুলনাকে বলা হয় শিল্পনগরী। এখানে যে ক’টি শিল্প-কারখানা স্থাপিত হয়েছে তার বেশিরভাগই বনজসম্পদনির্ভর। খুলনায় রয়েছে প্রচুর নদ-নদী। এই নদ-নদীর পানি খুলনাকে করে তুলেছে সবুজ শোভাম-িত। ফল-ফসলের দেশও বলা হয় খুলনাকে। একসময় খুলনার অধিকাংশ এলাকা চব্বিশ পরগনা ও যশোরের অধীনে ছিল। সময়ে সব পাল্টে গেছে। ইংরেজ আমলের প্রথমদিকে খুলনায় জন রড বরনী নামে একজন নীল কুঠিয়াল বাস করতেন। স্থানীয় জমিদারের সঙ্গে তার প্রায়ই দাঙ্গা-হাঙ্গামা হতো। এ দাঙ্গা প্রতিরোধের জন্য এখানে নয়াবাদ নামে একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৪২ সালে খুলনায় মহকুমা স্থাপিত হয়। ১৮৮২-তে খুলনাকে জেলায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়। চি কাব্যের নায়ক ধনপতির ‘লহনা’ ও ‘খুল্লনা’ নামে দুজন স্ত্রী ছিল। এই খুল্লনার নামানুসারে ‘খুলনা’ নামের উৎপত্তি হয়েছে। খুলনা নামের উৎপত্তি নিয়ে আর যেসব অভিমত আছে তা হলো- কপিল মুনির কাছে খুল্লনার পুল অবস্থিত ছিল। এই খুল্লনা থেকেই ‘খুলনা’ নাম হয়েছে অথবা শোনা যায়, ভৈরব নদী তীরে অবস্থিত খুলনেশ্বরী মন্দিরের নাম থেকে খুলনা নামের উৎপত্তি হয়েছে। চার্লি নামক একজন নীল কুঠিয়াল এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। তখন খুলনা পরিচিত ছিল চার্লিগঞ্জ ও সাহেবের বাজার নামে। যশোর, বেনাপোল এবং উত্তরবঙ্গের সঙ্গে স্থলপথে রেল-যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় খুলনায় শিল্প-স্থাপনার কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়েছে। খুলনা শহরে দেখবার মতো আছে, হাদিস পার্ক, ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, প্রেমকানন, রূপসা নদী, কবি কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ি। ভৈরব নদীর তীরে ছিল কবি কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ি। দূরে নয়, খুব কাছেই রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি দক্ষিণডিহি। এখানে যেতে যেন ভুলে না যান। এখানে গিয়ে দেখবেন বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ ভাস্কর্য, কবিপতœীর আবক্ষ ভাস্কর্য, শ্বশুরবাড়ির দ্বিতল ভবন। খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার উত্তরে গেলে ফুলতলা উপজেলা সদর। এখান থেকে আরও ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে দক্ষিণডিহি গ্রাম। এখানে রয়েছে সবুজ-শ্যামল ঘন বাগান। পান বরজ ও নার্সারিও দেখবেন। কিছু সময় হাতে নিয়ে দক্ষিণডিহিতে আসুন। একটা দিন না হয় এখানে কাটিয়ে যান। সন্ধ্যার আগেই খুলনায় ফিরে আসুন। অন্যান্য তথ্য : খুলনা জেলার উপজেলাগুলো হলোÑ খুলনা সদর, রূপসা, দৌলতপুর, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা, কয়রা, দাকোপা, হরিণটানা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, দীঘলিয়া, খালিশপুর, খানজাহান আলী আর সোনাডাঙ্গা। খুলনা জেলার আয়তন ৪,৩৯৪.৪৫ বর্গকিলোমিটার। ১৯৬১ সালে বিভাগের মর্যাদা পায় খুলনা। খুলনা সিটি কর্পোরেশন থানাগুলো হলোÑ খান জাহান আলী, দৌলতপুর, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর। পাশেই সুন্দরবন বনজঙ্গলে বেড়ানোতে এক ধরনের মজা আছে। আর তা যদি হয় সুন্দরবন তাহলে তো কথাই নেই। রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখা যায় এখানে। হরিণ, বানর, আরও কত কী সব বন্যপ্রাণী রয়েছে এই সুন্দরবনে। রয়েছে কত প্রজাতির পাখি। ঢাকা থেকে অনেক দূরে সুন্দরবনে কয়েক বন্ধু মিলে গেলে কম খরচে যেতে পারবেন। ভ্রমণের দিনগুলো হবে বেশ আনন্দময়। সুন্দরবনে আরেক আকর্ষণ সূর্যাস্তের শোভা। এখানে সূর্যের অস্তমিত ক্ষণটি আপনাকে বেশি মুগ্ধ করবে। গাছ-গাছালির ফাঁক দিয়ে আকাশ-লাল-করা সূর্যাস্তের অপূর্ব শোভা আপনাকে আরও বেশি অভিভূত করবে। নানা জাতের গাছপালা, বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবজন্তু, পাখি, সরীসৃপ এবং হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ। বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরত, হেমন্ত আর শীতে সুন্দরবনে বেড়ানোতে দারুণ আনন্দ রয়েছে। গরান, গর্জন ও ম্যানগ্রোভের ঘন জঙ্গলে ঘেরা সুন্দরবন। দেখবেন এই বনে জালের মতো বিছানো আছে ছোট ছোট খাঁড়ি ও নালা। সুন্দরবনে ভ্রমণের সেরা সময় আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। সুন্দরবন ৪টি রেঞ্জে বিভক্ত- খুলনা, সাতক্ষীরা, চাঁদপাই এবং শরণখোলা। গোটা সুন্দরবন দুটি দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। একটা অংশ পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে। বাকিটা আমাদের বাংলাদেশে। তবে আমাদের দেশের অংশই আয়তনে বড়। দুই দেশের মধ্যে সুন্দরবনের সীমানা হলো দুটি নদী- রায়মঙ্গল এবং হরিণভাঙ্গা। সাতক্ষীরা আর শরণখোলার রেঞ্জে বাঘ ও কুমিরের সংখ্যা বেশি। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় আছে কটকা এবং কচিখালী। এই দুই পয়েন্টে গেলে বাঘের সঙ্গে দেখাও হয়ে যেতে পারে। সুন্দরবনের বাঘের কথা : সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। গভীর অরণ্যে মধু সংগ্রহের সময় হলেই বাঘেরা ঘাপটি মেরে বসে থাকে মৌমাছির চাকের আশপাশে। ওই সময় মৌয়ালিরা আসবে মধু সংগ্রহ করতে। সুন্দরবনের বাঘেরা মধুরও পরম ভক্ত। মৌমাছির চাক থেকে যখন মধু উপচে পড়ে তখন তার প্রথম খাদক হলো ওই বাঘেরাই। পরম সুখে চেটে চেটে মধু খায় ওই রয়েল বেঙ্গল। সুন্দরবনের বাঘেরা মাছেরও পরম ভক্ত। এরা বড় মাছকে পানিতে ঝাঁপিয়ে শিকার করে। আর ছোট মাছ খাওয়ার পদ্ধতিটি ভারি সুন্দর। রয়েল বেঙ্গলের আরেকটি প্রিয় খাদ্য হলো- গোসাপ। গোসাপকে শিকার করার সময় পানিতে এবং ডাঙ্গায় চলে সমান তা ব। সুন্দরবনের বাঘ চমৎকার সাঁতারু। এরা খাঁড়ির পর খাঁড়ি পার হয়ে যায়, বেশ আনন্দের সঙ্গে সাঁতার কাটে।
×