ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাওন রহমান

এখন থেকেই ঈদ প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৩ জুন ২০১৬

এখন থেকেই ঈদ প্রস্তুতি

অপরূপ সুন্দর আমাদের এই বাংলাদেশ। এই সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে ষড়ঋতুর ছোঁয়ায়, ঋতুভিত্তিক বাংলাদেশ অনেক বেশি বর্ণিল। কতই না রং। কি অনবদ্য শিল্পীর ছোঁয়া, রং রূপের যেন এক মহাসম্মিলন ঘটে এই দেশে। যে দেখে সেই ভালোবেসে ফেলে এই দেশটাকে। সেই সাথে যদি যোগ হয় কোন উৎসব তাহলে তো কথাই নেই। উৎসবের রঙিন আকাশের বর্ণিল আভা যেন ছড়িয়ে পরে চারদিকে। তেমনি এক উৎসব হচ্ছে ঈদ-উল-ফিতর, মুসলমানপ্রধান ধর্মীয় উৎসব। যে কারণে মুসলিমপ্রধান এই দেশে এ উৎসবের মাত্রা যেন বহু গুণে বৃদ্ধি পায়, এ উৎসবে একে অপরকে উপহার দেয়াটাও একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আর এ উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় মাসখানেক আগে থেকেই। আর কিছুদিন পরেই শুরু হচ্ছে রোজা। এখন থেকেই রোজা এবং ঈদ দুটো প্রস্তুতিই সমানতালে চলছে। ঈদের প্রস্তুতির কথা মাথায় এলেই মনে পড়ে পোশাকের কথা। পোশাকের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে ঈদকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ বিশেষ করে বাচ্চাদের পোশাক অন্যতম। শাড়ি দেশীয় শাড়ির মধ্যে সর্বাধিক চাহিদা হলো টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ও জামদানি শাড়ির। এর পাশাপাশি মিরপুরের বেনারসি, কাতানের রয়েছে বিপুল সমাদর। জর্জেট, অর্গেসুতা, কামিতভরমসহ অভিজাত নামের সব বাহারি শাড়ি ও বিভিন্ন ড্রেস হাউসে। তবে এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি। টাঙ্গাইলের শাড়িতে সাম্প্রতিক ডিজাইনের বৈচিত্র্য এবং সহনীয় দাম নারীদের এই শাড়ির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার অন্যতম মূল কারণ। সুতি, সিল্ক, হাফসিল্কসহ নানা নামের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ঈদের সময় থাকে নারীর কালেকশন লিস্টের শীর্ষে। এর পরই থাকে জামদানি এবং মিরপুরের বেনারসি-কাতান। জামদানি কিছুটা বেশি দামের হলেও মিরপুরের বেনারসি-কাতানের দামটাও রয়েছে নাগালের মধ্যে। যার ফলে টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ তাঁত পল্লীসহ সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনার গাঁয়ের জামদানি ফ্যাক্টরি এবং মিরপুরের বেনারসি পল্লীতে চলছে তাঁত শিল্পীদের অবিশ্রান্ত ব্যস্ততা। ঈদের মাস কয়েক আগে থেকেই দেশীয় শাড়ির এই চেনা অঞ্চলগুলোতে গিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে তাই অনর্গল তাঁতের খটাংখট শব্দের মুখরতা কানে আসাটা স্বাভাবিক। যার তরঙ্গ-বীথি এই ঈদে এসে ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীসহ বিভাগীয় জেলা এবং উপজেলা শহরের শাড়ি সমৃদ্ধ শপিং হাউসগুলোতে। সুতির আটপৌরে শাড়ি থেকে শুরু করে জমকালো শাড়ি-সবই ডিসপ্লেতে সাজিয়ে বসেছে শাড়ি হাউসগুলো। আর সেখানে নারীদের ভিড়টাও লক্ষণীয়। সামর্থ্য অনুযায়ী পছন্দের শাড়িটি কিনে-তার পর যেন পরিতৃপ্তির নিশ্বাস ফেলে ঘরে ফেরার পালা। রোজার শুরু থেকে ঈদের পূর্বরাত পর্যন্ত চলবে এই মহা কেনাকাটা। সালোয়ার কামিজ মেয়েদের নিত্য ব্যবহার্য পোশাক সালোয়ার কামিজ ঈদে আনে বৈচিত্র্যতা। পাজামা, ওড়না ও কামিজের ভিন্নধর্মী নকশা সালোয়ার কামিজকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে যা সহজেই দৃষ্টি কাড়ে ক্রেতাদের । ভয়েল, পপলিন, প্রিন্ট, আদ্দি কটন, কটন জর্জেট, টিসি সিনথেটিক কালার ইত্যাদি কাপড়ের সমন্বয়ে এবার প্রস্তুত হয়েছে সালোয়ার কামিজ। (আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে সালোয়ার কামিজের কাপড় সিলেকশন করা হয়েছে। সালোয়ার কামিজের পাশাপাশি ওড়নার বৈচিত্র্য এবার লক্ষণীয়, এর কাটিং ডিজাইন এবং লেআউটে রয়েছে ভিন্নতা। সুতার কাজ, ক্রিস্টাল, মেটাল আইটেম এবং কড়ি দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে সালোয়ার কামিজ এবং ওড়নায়)তাছাড়া শিপন জর্জেটের স্ট্রাইপ পাঠানের হেভি কাজের সালোয়ার কামিজ প্রচুর উঠেছে বাজারে। স্টোন এবং স্ট্রিং পাইপের ডিজাইনের সালোয়ার কামিজ এবার বাজারে বেশ। সুতি কাপড়ের চাহিদাও এবার বেশ রয়েছে। পাইপিন এবং টারসোলর সমন্বয়ে কটন এবং এন্ডি কটনের ডিজাইন করা হয়েছে। কটন ও তাঁত কাপড়ে তৈরি সালোয়ার কামিজের মূল্য পড়বে ৮৫০ টাকা থেকে ১৮৫০ টাকা, জর্জেট এবং শিপনের মাঝারি সাইজের সালোয়ার কামিজ পড়বে ১১০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা এবং হেভি কাজ পড়বে ১৬০০ টাকা থেকে ৪২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও আদ্দি ভয়েল, এপ্লিক মোটা সুতার কাজ পড়বে ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা। দেশীয় ফ্যাশন হাউজ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি শপিং মলেই বিক্রি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ও সমন্বয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সালোয়ার কামিজের। পাঞ্জাবি ঈদে ছোট-বড় সবার দৃষ্টি আটকে থাকে পাঞ্জাবির দিকে। আর সে কারনেই প্রায় প্রতিটি শো-রুমেই দেখা মেলে ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবির। আড়ং, কে-ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, রঙ, ডিমান্ড, বালুচর, বিবিয়ানা, দেশীদশ থেকে শুরু করে দেশের প্রায় প্রতিটি আউটলেটেই দেখা মিলবে গর্জিয়াস পাঞ্জাবির। আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাঞ্জাবির ফেব্রিক নির্ধারন করা হয়েছে। দামও হাতের নাগালে। নরমাল পাঞ্জাবিগুলো পাওয়া যাবে ৮০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকার মধ্যে। আর গর্জিয়াস গুলো ২২০০ টাকা থেকে ২৫০০০ টাকার মধ্যে মিলবে। ছোটদের পোশাক ছোট বড় সব শপিংমলেই সবচেয়ে বেশি যে পোশাক গুলো নজর কাড়ে তা হচ্ছে বাচ্চাদের পোশাক। গেঞ্জি সেট থেকে শুরু ফ্রক, সালোয়ার কামিজ এমনকি শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে বাচ্চাদের। দামও হাতের নাগালে। শর্ট শার্ট,টি-শার্ট এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শার্ট যেখানে প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে ঠিক সেখানেই টি-শার্টও পাওয়া যাবে। ব্যাক পকেটের স্বত্বাধিকারী রাজন বলেনÑতরুণরা তো এখন বেশ চালাক। তারা নিজের পছন্দকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। আগে একটা সময় ছিল যখন দোকানে আসলে একটু বুঝিয়ে বললেই বিক্রি করা যেত। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। সঙ্গে বদলেছে তরুণদের মন, রুচি। তাই তাদের কথা মাথায় রেখেই আমরা নতুন ডিজাইনের টি-শার্টের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। কোথায় যাওয়া যাবেÑশর্ট শার্ট এবং টি-শার্ট পাওয়া যাবে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলায়। মালিবাগ, মগবাজার রোডের বিভিন্ন শো-রুমে। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, নিউমার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার, মিরপুর-১০, এলিফ্যান্ট রোড এবং বিভিন্ন অভিজাত শপিং মলগুলোতে। দাম- নিউমার্কেটে শর্ট শার্ট হাফ হাতা এবং ফুল হাতার দাম পড়বে যথাক্রমে ৩৫০-৭০০ টাকা। ইজি-৬৫০-৯০০ টাকা। ক্রে-ক্যাফ্ট ৬০০-১২০০ টাকা। প্লাস পয়েন্ট নির্ধারণ করেছে ৭০০-১০০০ টাকা। ক্যাটস আই-১২০০ টাকা। টি শার্টগুলো বিভিন্ন জায়গায় বা শো-রুমে কম বেশি ১৮০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায় পাওয়া যাবে। মডেল : নাফিসা কামাল ঝুমুর, রুবেল, রিয়া ও ভাবনা
×