ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে ‘উত্থান-পতন’

বোলিংয়ে মাশরাফি, ব্যাটিংয়ে শুভ শীর্ষে

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৩ জুন ২০১৬

বোলিংয়ে মাশরাফি, ব্যাটিংয়ে শুভ শীর্ষে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুরুর দিকে ব্যাটিংয়ে মুশফিকুর রহীম উড়ছিলেন। একের পর এক ম্যাচে সেঞ্চুরি-হাফসেঞ্চুরি করে যান। প্রথম তিন ম্যাচ শেষে ব্যাটিংয়ে হঠাৎ করে তার পতন ঘটে। এমনই পতন হয়, পরের ৬ ম্যাচের মধ্যে ৫ ম্যাচে ব্যাটিং করে অর্ধশতক দূরে থাক, সবমিলিয়ে ৫২ রানের বেশি করতেই পারেননি! শীর্ষস্থানে থাকা এ ব্যাটসম্যানের এমনই অবস্থা হয়, পতন হতে হতে এখন ব্যাটিং তালিকায় ২৯ নম্বরে মোহামেডানের মুশফিকের অবস্থান! তবে দেখতে দেখতে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের শামসুর রহমান শুভ কিন্তু দুর্দান্ত প্রতাপে আছেন। দেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এখন শীর্ষে শুভই। তার রান ১০ ম্যাচে ৫৭.৩৩ গড়ে ৫১৬। দেশী ব্যাটসম্যানদের একমাত্র ব্যাটসম্যান শুভ, যিনি কিনা এখন পর্যন্ত ঢাকা লীগের এবারের আসরের ৫০০ রান করতে পেরেছেন। শুভ যেখানে ব্যাটিংয়ে শীর্ষে আছেন, সেখানে বোলিংয়ে দেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৯ ম্যাচে ২০ উইকেট পেয়েছেন মাশরাফি। লীগ শেষ পর্যায়ে আছে। দশম রাউন্ডের ছয় দলের মধ্যে তিন ম্যাচ আছে। এরপর একাদশ রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে। যে রাউন্ড শেষে সুপার লীগের ছয় দল মিলে যাবে। লীগ পর্বে দলগুলোর যেমন ‘উত্থান-পতন’ হয়েছে। ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত লড়াইয়েও একই অবস্থা দেখা গেছে। আবাহনী সেরা দল গড়েও শুরুতে সুপার লীগে খেলতে পারবে কি না, সেই সংশয়ে ছিল। এখন এমনই অবস্থা হয়েছে, সেরা দলের মান রাখছে। সেরা তিনে আছে আবাহনী। সুপার লীগে খেলা শুধু প্রাইম দোলেশ্বর নিশ্চিত করেছে। তবে ১২ পয়েন্ট বা তার বেশি যে দলগুলোর হবে, তাদের সুপার লীগে খেলার সম্ভাবনা বেশি। ১৪ পয়েন্ট হওয়া মানে নিশ্চিত হয়ে যাওয়া। দোলেশ্বরের তাই হয়েছে। মোহামেডান ও আবাহনীরও আছে ১২ পয়েন্ট করে। তাই বলেই দেয়া যায়, মোহামেডান ও আবাহনীও সুপার লীগে উঠেই আছে। সুপার লীগে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতি দলেরই অবশ্য শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সেই অপেক্ষা শেষ হবে ৮ জুন। এর মধ্যে ব্যক্তিগত লড়াইয়েও লীগ পর্ব শেষে ‘উত্থান-পতন’ আবারও দেখা দিতে পারে। শীর্ষস্থানে থাকা ব্যাটসম্যান-বোলারদের ঘাড়ে যে নিঃশ্বাস ফেলা ব্যাটসম্যান-বোলারের অভাব নেই। বোলিং তালিকায় ৯ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আছেন ভিক্টোরিয়ার শ্রীলঙ্কান স্পিনার চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা। তবে তিনি বিদেশী ক্রিকেটার। দেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষে আছেন মাশরাফি। দলকে একাই যেন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাট হাতে শতক করছেন। দল জিতছে। বল হাতে ৬ উইকেট নিচ্ছেন। তাতেও দল জিতছে। যে কলাবাগান ক্রীড়া চক্র একটি জয়ও শেষ পর্যন্ত পাবে কিনা, শুরুতে এমন শঙ্কা তৈরি হয়ে যায়। সেই দলটি এক মাশরাফির উপর ভর করে ৪ জয় তুলে নিয়েছে। সেই মাশরাফি আবার বল হাতে এতটাই দুর্দান্ত যে ২০ উইকেট নিয়ে ফেলেছেন। প্রথম ম্যাচে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই জ্বলে উঠেন। এক ম্যাচে ৪ উইকেটট, আরেক ম্যাচে ৩ উইকেট নেয়ার সঙ্গে সর্বশেষ ম্যাচে ৬ উইকেট নেন। দুই উইকেট করে একাধিক ম্যাচে নেন। তবে এ শীর্ষস্থান শেষপর্যন্ত থাকবে কি না, তা সময়ই বলবে। তার পেছনেই যে আছেন ১৯ উইকেট নেয়া ভিক্টোরিয়ার কামরুল ইসলাম রাব্বি, ১৮ উইকেট নেয়া মোহামেডানের নাঈম ইসলাম জুনিয়র, ১৭ উইকেট নেয়া শেখ জামালের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ১৬ উইকেট নেয়া গাজী গ্রুপের অলক কাপালী। এর সঙ্গে প্রাইম দোলেশ্বরের আল আমিন হোসেন (১৬ উইকেট), আবাহনীর তাসকিন আহমেদ (১৫), ক্রিকেট কোচিং স্কুলের সালেহ আহমেদ শাওন (১৫) আছেন। মাশরাফির সঙ্গে উইকেটের ব্যবধান খুব বেশি নয়। আর যদি মাশরাফির দল সুপার লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারে, তাহলে তো ‘নড়াইল এক্সপ্রেসে’র অবস্থান থেকে পতন নিশ্চিতই। মাশরাফির যেখানে সুপার লীগে খেলার উপর অনেকখানি নির্ভর করছে শীর্ষস্থান ধরে রাখা, সেখানে শুভরও অবস্থা একই। গাজী গ্রুপ ভাল অবস্থানে আছে। সুপার লীগে খেলার সম্ভাবনাতেও আছে। তবে না খেলতে পারলেই পতন নিশ্চিত। সুপার লীগে খেলতে পারলেও যে একই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এক শতক ও চার অর্ধশতক করে শীর্ষে থাকা শুভ, এমনটি নাও হতে পারে। তবে দ্বিতীয় স্থানে যিনি আছেন, সেই দোলেশ্বরের ইমতিয়াজ হোসেন (৪৯৪ রান) কিন্তু বরাবরই সেরা তিনে থাকছেন। এরপর গাজী গ্রুপেরই এনামুল হক বিজয় (৪৪৮ রান), ভিক্টোরিয়ার আল আমিন (৪৪৫ রান), শেখ জামালের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৪৩৫ রান) ও আবাহনীর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৪৩১ রান) ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেই রেখেছেন। তবে আপাতত যে দেশী বাঘা বাঘা বোলার, ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বোলিংয়ে মাশরাফি ও ব্যাটিংয়ে শুভ সেরার অবস্থান ধরে রেখেছেন, তা কম কিসের!
×