ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আলোছায়ার খেলায় ফ্রেমবন্দী জীবনের জয়গান

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৩ জুন ২০১৬

আলোছায়ার খেলায় ফ্রেমবন্দী জীবনের জয়গান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নদীর কোলঘেঁষা কোন এক চরাঞ্চলের কিশোরী। হলদে হয়ে যাওয়া চুলগুলো বাতাসে উড়ছে এলোমেলো হয়ে। বস্ত্রহীন শরীরে হাসিমাখা মুখটিতে রেরিয়ে আছে উপরের পাটির সাদা দাঁতগুলো। আর চোখের ভাষা যেন বলে যায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কথা। ছবিটির শিরোনাম হ্যালো। পাশের ছবিটি যেন আরও বেশি প্রাণবন্ত। পদ্মা পারে নেমেছে সন্ধ্যা। বালুকাবেলায় বইছে গোধূলিলগ্ন। অস্তগামী সূর্যের আলোয় নদীতীরে খেলায় মেতেছে একঝাঁক কিশোর। নাচের ভঙ্গিতে চলছে তাদের বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি। ছোট ছোট প্রাণগুলোয় দৃশ্যমান চঞ্চলতা। ছবিটির শিরোনাম ফাইভ ফিঙ্গারস। আলো-ছায়ার খেলায় জীবনের জয়গান গাওয়া এমন সব ছবি ঠাঁই পেয়েছে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের লা গ্যারারিতে। এখানে চলছে লাইফ, লাইট এ্যান্ড কেওস শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। যাপিত জীবনের বিচিত্র অভিব্যক্তিকে ফ্রেমবন্দী করে আলোকচিত্রগুলো ধারণ করেছেন আলোকচিত্রী জয় কে রয় চৌধুরী। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রদর্শনী প্রাঙ্গণে কথা হয় জয় কে রয় চৌধুরীর সঙ্গে। প্রদর্শনীর ছবি প্রসঙ্গে বলেন, আমার ছবির মূল বিষয় হচ্ছে মানুষ। মানুষের উপস্থিতি আমার মাঝে প্রাণের সঞ্চার করে। সৃষ্টি হয় গতিময়তা। জীবনের নানামুখী অভিব্যক্তিগুলো আলোড়িত করে আমাকে। আর জীবন ও কর্মপ্রবাহের সেই প্রকাশটাই ফ্রেমবন্দী হয় আমার ক্যামেরায়। পুরো গ্যালারিজুড়ে দেখা মেলে বহুবিধ মানবিক অনুভূতি কিংবা অভিব্যক্তি। মায়ের বুকে লেপটে থাকা শিশুর ছবিটিতে উঠে এসেছে মমতার বর্ণনা। মেঘ কালো আকাশের নিচে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য গাছের ডাল সংগ্রহের ছবির মধ্যে উদ্ভাসিত হয়েছে জীবনের সংগ্রামী দৃশ্যকল্প। লাইন ইন এ মেট্রো নামের আলোকচিত্রে ভিন্নভাবে ধরা দিয়েছে পুরনো ঢাকার সাকরাইন উৎসব। সবুজ জিন্স পরিহিত মুখাবয়ববিহীন এক নারীর হাতে শোভা পাচ্ছে নাটাই। ওই নাটাইয়ে জড়ানো লাল সুতোর সঙ্গে মিলে গেছে তার কোমরে ঝুলে থাকা ব্যাগটির রং। এভাবেই বিচ্ছিন্ন মানুষের মুখ ও তাদের অভিব্যক্তি নিয়ে ভিন্নধর্মী গল্পের বয়ানে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনীটি। নির্দিষ্ট ফ্রেমের মধ্যে সময়কে ধারণ করে করেই জয় তার গল্প বলার চেষ্টা করেছেন। ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখে তুলে এনেছেন জীবনের বাস্তবতা, অনুভূতি, সুখ-দুঃখ ও আনন্দ। ৩১টি ছবি দিয়ে সাজানো প্রদর্শনীতে জীবনের সাদামাটা গল্পগুলো ভিন্ননভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন এই আলোকচিত্রী। ফটো প্রদর্শনীর পাশাপাশি একটি মোবাইল ফোন আর্ট প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে। ২৭ মে থেকে চলমান প্রদর্শনী শেষ হবে ৬ জুন। সোম থেকে বৃহ¯পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। কলকাতায় বাংলাদেশ গ্যালারির উদ্বোধন আজ ॥ ভারতের কলকাতায় অবস্থিত আর্টসএ্যাক্রে ফাউন্ডেশনে স্থাপিত ‘বাংলাদেশ গ্যালারি’ উদ্বোধন করা হবে আজ শুক্রবার। গ্যালারির উদ্বোধন ও ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত আর্ট ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণের জন্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সেখানে যাচ্ছেন। তিনি আজ সকালে কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আক্তারী মমতাজ ও অতিরিক্ত সচিব মোঃ মশিউর রহমান তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে কলকাতায় যাচ্ছেন। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আর্টসাএ্যাক্রে ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এ অঞ্চলের সমসাময়িক শিল্পকলার চর্চা, উন্নয়ন ও বিকাশে প্রতিষ্ঠাটি কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ চিত্রশিল্পীদের কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলার আবহমান, ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে এটি প্রতিষ্ঠানলগ্ন থেকে নানাবিধি উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের আর্ট জাদুঘরে এ অঞ্চলের আধুনিক ও সমসাময়িক শিল্পকর্মের বিশাল ভা-ার গড়ে তোলা হয়েছে। এটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে সেখানে বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্মের সমন্বয়ে স্থাপন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ গ্যালারি’। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সৈয়দ আবুল বারক্ আলভী, ফরিদা জামান, মাহমুদুল হক, শহীদ কবির, রফিকুন্নবী, রণজিৎ দাস, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, মনিরুল ইসলাম, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, মোঃ ইউনুস ও শেখ আফজালের প্রায় ২০টি চিত্রকর্ম দিয়ে বাংলাদেশ গ্যালারির উদ্বোধন করা হবে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ফাউন্ডেশনে স্থাপিত এ গ্যালারি উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উল্লিখিত শিল্পীগণ ও ফাউন্ডেশনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।
×