ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩৮৯৩৮ কোটি আর সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯৬১০ কোটি নেয়ার পরিকল্পনা

বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসই ভরসা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩ জুন ২০১৬

বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসই ভরসা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণও বেড়েছে। বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৫ শতাংশ। বড় অঙ্কের এই ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। এবারও ব্যাংকঋণের ওপরই বেশি ভরসা রাখছে সরকার। তবে সঞ্চয়পত্র থেকেও বড় অঙ্কের ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি বৈদেশিক উৎস্য থেকে বেশি ঋণ পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। তবে অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা যদি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক সহায়তা না আসে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও রাজস্ব আদায় কমে যায়, তার চাপ গিয়ে পড়বে ব্যাংকের ঘাড়েই। অতীতেও এ রকম ঘটনার নজির রয়েছে। ঘাটতি অর্থায়নে প্রতি অর্থবছরেই ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর বেশি নির্ভরশীল হতে হয় সরকারকে। আর ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারী বিনিয়োগ নিরুৎসাহিতের আশঙ্কা থাকে। এজন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেয়ার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস্য থেকে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা সংগ্রহের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। যা জিডিপি’র ৩.১ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। যা জিডিপি’র ২ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা বেশি। তবে মূল বাজেটের চেয়ে মাত্র ৪১৫ কোটি টাকা বেশি। এবার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ২৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। আর স্বল্পমেয়াদী ঋণ নেয়া হবে ১০ হাজার ২৮ কোটি টাকার। এদিকে, অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা জিডিপি’র ১.১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নিটঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৪ হাজার ৬১০ কোটি টাকা বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস্য থেকে ৩৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। যা জিডিপি’র ১.৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩০ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ধরা হয় ২৪ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এদিকে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৮৭ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। যা জিডিপি’র ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। তবে এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ চাহিদা কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকেই আসবে ২৮ হাজার কোটি টাকা।
×