ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরও তিন হাজার শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা

শিক্ষায় এবারেও সর্বাধিক

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩ জুন ২০১৬

শিক্ষায় এবারেও সর্বাধিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চলতি বাজেটের চেয়ে এ পরিমাণ ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৩১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকার কথা বলা হলেও পরে আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এর আগের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ২৯ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। এদিকে নতুন বাজেটে শিক্ষার সুষম সুযোগ বাড়ানোর জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সঙ্গে শিক্ষা সহায়তায় বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। জরাজীর্ণ বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট ২৬ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ২০ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ছয় হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে শিক্ষায় মোট বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ১৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় চার হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। প্রাথমিক স্তরে এবার মোট ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ১৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, উন্নয়ন ব্যয় সাত হাজার ৭১০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে প্রাথমিকে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ১১ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় পাঁচ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়নে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। তাই সামগ্রিক শিক্ষা খাতের ব্যয়কে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে এ খাতের উন্নয়নে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা সহায়তায় বেসরকারী শিক্ষকদের কল্যাণে ‘বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবসর সুবিধা বোর্ডর অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকার এনডাওমেন্ট ফান্ড এবং ১০০ কোটি টাকা এককালীন অনুদান প্রস্তাব করছি। আর ‘বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের কল্যাণ ট্রাস্টে’ ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছি। বাজেট বক্তৃতায় প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে নানা পরিকল্পনার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক চালু করাসহ কারিকুলাম প্রণয়ন, বই মুদ্রণ এবং প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করার কথা জানান তিনি। বলেন, আরও তিন হাজার শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে ৭৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী চালু করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, শিক্ষক নিয়োগ-প্রশিক্ষণ, বিদ্যালয়-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন অব্যাহত থাকবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এছাড়া ভর্তির হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে ধরে রাখার জন্য উপবৃত্তির পাশাপাশি স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের সম্প্রসারণ এবং বেসরকারী ও ব্যক্তি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জাতীয় স্কুল ফিডিং নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। নিরক্ষরতা মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ১৫-৪৫ বছর বয়সী নিরক্ষর জনগণকে মৌলিক সাক্ষরতা ও জীবন দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা খাতে একটি সেক্টর কর্মসূচী প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। ৬৩ হাজার শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের জন্য বিদ্যালয় নির্মাণ কাজে ব্যক্তি খাতে উদ্যোগ বাঞ্ছনীয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জরাজীর্ণ বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড হতে বৃত্তি প্রদানসহ গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রী এবং দুস্থ শিক্ষকদের এককালীন অনুদান দেয়া অব্যাহত থাকবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য অটিস্টিক একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। টেকসই ও মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, মানসম্মত শিক্ষার প্রসার এবং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে গড়ে তুলতে অব্যাহত রাখতে চাই সৃজনশীল প্রশ্নভিত্তিক প্রশ্ন পদ্ধতি। পাশাপাশি অব্যাহত থাকবে উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং, রিসোর্স সেন্টার ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের মতো চলমান কার্যক্রমগুলো। অর্থমন্ত্রী উচ্চ শিক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, উচ্চ শিক্ষা প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও কারিগরি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন।
×