ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে না, প্যাকেজ বহাল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩ জুন ২০১৬

নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে না, প্যাকেজ বহাল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে আপাতত এক বছরের জন্য প্যাকেজ ভ্যাট পদ্ধতি বহাল রাখা হচ্ছে। তবে ভ্যাট আইন আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে পুরোপুরি কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, আগামী এক বছর ব্যবসায়ী সমাজ যে অতিরিক্ত সময় পেলেন সেই সময়ের মধ্যে তারা সকল স্তরে হিসাব রক্ষণের ব্যবস্থাটিকে পাকাপাকি করবেন। এই কাজটি বস্তুতই সকলের জন্য একটি উইন উইন অবস্থান প্রস্তুত করবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য কিন্তু বদলে যায়নি। আমরা আইনটি পুরোপুরি কার্যকর করব এক বছর পরে। মূসক ২০১২ আইনটি কার্যকর করার জন্য মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা ২০১৬ ইতোমধ্যে প্রণয়ন করে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও আইনটি কার্যকর করার জন্য ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন করদাতাদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও অনলাইন রিটার্ন সাবমিশন শীঘ্রই চালু করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অনলাইনভিত্তিক বিজনেস প্রসেস ডিজাইনের কার্যক্রম চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আইনটি কার্যকর করার উদ্দেশ্যে দেশে অনেক জায়গায় সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়লগ সম্পন্ন করেছে। এসব কার্যক্রম আগামী অর্থবছরও চলবে। শুধু তাই নয়, নতুন আইনের নিবন্ধন গ্রহণ থেকে শুরু করে রিটার্ন দাখিল, কর প্রদান ও কর রিফান্ড গ্রহণ সব ধরনের কার্যক্রম করদাতার যার যার অফিস থেকে বা ঘরে বসেই সম্পন্ন করতে পারবেন। মুহিত বলেন, আমি বহুবার বলেছি, নতুন ভ্যাট আইনটি রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম আইন। অবশ্য এটাকে উত্তম পর্যায়ে নিয়ে যেতে ব্যবসায়ীদেরও কাজ করতে হবে। বিভিন্ন স্তরে হিসাব রাখার কাজটি ব্যাপকভাবে উন্নত করতে হবে। এতে যেমন প্রত্যেক ব্যবসায়ী কম কর বা শুল্ক দেবেন ঠিক তেমনি সব স্তরে কর আদায় হওয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকে কম শুল্ক-করাদি দেবেন এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। দোকানের জন্য ভ্যাট ॥ বর্তমান যে হারে দোকানদার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটেও সেটি বহাল রাখা হচ্ছে। তবে যারা ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার দিতে আগ্রহী নন তাদের জন্য এলাকাভিত্তিক করহার ধার্য্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান তারা যে হারে কর দেন সেটি বৃদ্ধি করে এলাকাভিত্তিক যথাক্রমে ৭ হাজার টাকা, ১৪ হাজার টাকা, ২০ হাজার টাকা এবং ২৮ হাজার টাকার প্যাকেজ ভ্যাট কার্যকর করা হবে। এছাড়া পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার অন্যান্য সকল পর্যায়ে ৪ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর আদায়ের ব্যবস্থা বহাল থাকবে। তবে যেসব ব্যবসায়ী প্রকৃত মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে কর দিতে আগ্রহী হবেন-তাদের জন্য উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণের সুযোগসহ প্রমিত হারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রত্যাহার ও আরোপ হচ্ছে ॥ প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের পাউরুটি, বানরুটি ও এই ধরনের রুটি এবং হাতে তৈরি কেক বিস্কুুট, ১২০ টাকা পর্যন্ত প্লাষ্টিক ও রবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল এবং প্লাস্টিকের পাদুকা, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হার্ডবোর্ড, বৈদ্যুতিক জেনারেটর ইত্যাদি পণ্য এবং ট্রাভেল এজেন্সি, মেডিটেশন সেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া হস্তচালিত লুমের তৈরি ফেব্রিক্সের উপর বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রেখে পাওয়ার লুম হতে তৈরি ফেব্রিক্সের ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে মৃত্যু সংবাদজনিত বিজ্ঞাপন ব্যতীত পত্রিকায় প্রকাশিত অন্যান্য সকল ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনের উপর বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারপূর্বক ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনকে ভ্যাটের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্যই শুধু নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেটা ১৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর সঙ্গে সম্পূরক শুল্কহার ৪৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা এবং এর উর্ধে যে দুটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান আছে তাকে যথাক্রমে ৬১ এবং ৬৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬২ এবং ৬৪ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিড়ির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে ফিল্টারবিহীন ও ফিল্টারযুক্ত দু’ধরনের বিড়ির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্কহার যথাক্রমে ২৫ ও ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ ও ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার প্যাকেটের দাম পড়বে সাড়ে ১০ টাকা এবং ২০ শলাকার প্রতি প্যাকেটের দাম হবে ১২ টাকার একটু উপরে। এছাড়া ধোঁয়াবিহীন তামাকজাতপণ্য জর্দা এবং গুলের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইলের সিম ও রিম কার্ডের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার উপর বিদ্যমান ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে পাটজাতপণ্য এবং রবার উৎপাদন শিল্পকে। মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে রোগী ও লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স পরিবহন সেবাকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। দেশীয় ভাবে উৎপাদিত হুইট ক্রাশার যন্ত্র, গ্রে-কাপড় ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদনে উৎসাহ প্রদানের স্বার্থে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুন, ২০১৭ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পামওয়েল ও সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আগামী ৩০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে পাথর ব্যবহার হচ্ছে-এই কারণে মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনির পাথরের উপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ॥ প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত চালের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে আমদানিকৃত চালের দাম বাড়তে পারে। বর্তমান চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আছে। যদিও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য যেমন-ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি পণ্যে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহতি বা রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। রফতানিমুখী শিল্পখাতের অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। করমুক্ত আয়ের সীমায় পরিবর্তন আনা হয়নি ॥ বর্তমান করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আগামী অর্থবছরেও এই হার বহাল রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয় সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার, মহিলা ৬৫ বা তদুর্ধ বয়সের করদাতা ৩ লাখ, প্রতিবন্ধী করদাতা ৩ লাখ ৭৫ হাজার ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতা ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিদ্যমান ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের বাইরের অন্যান্য এলাকার কোম্পানি করদাতা ব্যতীত অন্য করদাতাদের যথাক্রমে ৫ হাজার, ৪ হাজার ও ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম কর পরিশোধ করতে হয়। অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম করের এ হার বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
×