ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেটের বিস্ময় বালক

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৩ জুন ২০১৬

ক্রিকেটের বিস্ময় বালক

কোন উপমা, কোন বিশেষণ এমনকি কোন প্রশংসাসূচক বাক্যে তাকে আটকে রাখা যায় না। সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে ক্রিকেটের বিস্ময় বালকটি। বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের কাছে তার অবস্থান উচ্চাসনে। এমন অভাবনীয় প্রতিভাবান বিশ্ব ক্রিকেটে এর আগে দেখা মেলেনি। বাংলাদেশী এই কাটার মাস্টার এবারের আইপিএলে উদীয়মান তারকার খেতাব জিতে গৌরবে বলীয়ান হয়ে উঠেছেন। সতেরোটি উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজ দ্য ফিজ এবারের আইপিএলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিভাত করেছেন। প্রথম অভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে সেরা উদীয়মানের পুরস্কারটাও জিতেছেন। বিশ্ব জয় এখনও করেননি মুস্তাফিজ। বিশ্ব জয়ের সময় এখনও তার সামনে পড়ে আছে। তবে আইপিএলে যা করেছেন, তা অবশ্য বিশ্বজয়ের চেয়ে কম নয়। মাত্র কয়েক মাসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গিয়েছিলেন সে আইপিএলে খেলতে। সেখানে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন ক্রিকেটের বিস্ময়, বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে। দলকে দফায় দফায় বিপদ থেকে উদ্ধার করে ম্যাচ জিতিয়েছেন। সবশেষে দলকে করেছেন চ্যাম্পিয়ন। সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণকারী কুড়ি বছরের টগবগে বালকটির এখন পর্যন্ত পুরো ক্যারিয়ারটাই বিস্ময় ও চমকে ভরপুর। এক বছর আগে, গত বছর জুন মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হঠাৎই পথচলা শুরু করেছিলেন। নেটে তার বিস্ময়কর বোলিং দেখে জাতীয় দলে এনেছিলেন কোচ ও নির্বাচকরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে চমকে দেয়া বোলিং দিয়ে শুরু এরপর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম দুই ম্যাচে ৬ ও ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি মুস্তাফিজকে। একটার পর একটা রেকর্ড ও বিস্ময় পায়ে লুটিয়েছে তার। ক্যারিয়ারের শুরুতে সবচেয়ে বেশি উইকেট, সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে তিনবার পাঁচ বা ততোধিক উইকেট এবং অনেক রেকর্ড। এই সময়ে তার চমকের মূল ব্যাপার ছিল দুটো কাটার ও সেøায়ার। ফাস্ট বোলারদের টার্ন নেয়া ডেলিভারি কাটার আগে থেকেই ক্রিকেট জগতে ছিল। জন্মগতভাবেই সেই কাটারের সেরা ব্যবহার করতে পেরেছিলেন দ্য ফিজ। সঙ্গে কাটার ডেলিভারি করেছিল কাটার ও সেøায়ার দুই ধরনে। এই দুই ধরনের পার্থক্য কেউ বুঝতেই পারছিল না। এর সঙ্গে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগের সময়ে মুস্তাফিজ পূর্ণ করলেন তূণে নতুন দুটো তীরÑ ফাস্ট ডেলিভারি ও ইয়র্কার। যে মুস্তাফিজ ১০৫-১৩৬ কিলোমিটারে বল করে অভ্যস্ত, তিনি হঠাৎ ১৪৪-১৪৬ কিলোমিটারে বল করতে থাকলেন। সঙ্গে দু’একটা বিধ্বংসী ইয়র্কার। মানে এখন তার কাটার ও ইয়র্কার একই এ্যাকশনে ১২৫ থেকে ১৪৫ কিমিতে ভিন্ন ভিন্ন গতিতে আসতে পারে। এই মুস্তাফিজকে ১ কোটি ৪০ লাখ রুপীতে কিনে নিয়েছিল আইপিএলের দল হায়দরাবাদ সান রাইজার্স। ফলও পেয়েছে তারা। পুরো আসরে ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট। ৬১ ওভার বল করে ৪২১ রান দিয়েছেন। আইপিএলের শীর্ষ দশ বোলারের মধ্যে দেয়া ইকোনমি মুস্তাফিজের। এমন পারফর্মেন্সে উদীয়মান সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা হাতে তুলেছিলেন তিনি। ৮৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট নিয়ে উদীয়মান সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে থাকার জন্য ভোট পেয়েছেন ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশাল ব্যবধান বটে। দ্য ফিজকে দলে ভিড়িয়েছে ইংল্যান্ডের বাউন্টি দল সাসেক্স। বিগ ব্যাসের গোটা কয়েক দলও তাকে নিতে আগ্রহী। পুরো বিশ্ব এখন মুস্তাফিজকে চায়। এমন বিস্ময়কর প্রতিভা যুগে যুগে খুব বেশি জন্ম নেয় না। এমন এক বিস্ময়ের হাত ধরে বাংলাদেশ অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্বমাপের কিছু অর্জনের জন্য। এই প্রতিভা যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য তার দেশ এবং সরকারপ্রধান সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জাতীয় বীর হিসেবে যেমন প্রশংসা করেছেন, গর্ব করছেন তেমনি সতর্ক হয়ে খেলার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন- তার খেলার গোপন কৌশলগুলো যেন প্রকাশ হয়ে না পড়ে, সেজন্য তাকেই সতর্ক থাকতে হবে। বেশি খেললে ইনজুরিতে পড়ার আশঙ্কাও থাকতে পারে। এমন ক্রিকেট প্রতিভার বিষয়ে দেশ সজাগ থাকবে এবং সব প্রতিবন্ধকতা অপসারণ হবে, এমন প্রত্যাশা সবার।
×