ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোহামেডান-ঊষা ম্যাচের বাকি অংশ আজ

হকি লীগে মেরিনারের কষ্টার্জিত জয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২ জুন ২০১৬

হকি লীগে মেরিনারের কষ্টার্জিত জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘মোহামেডান-মেরিনার্স ক্লাবের কারণেই দীর্ঘদিন হকি লীগ হয়নি। তাদের কারণেই দেশের হকি ধ্বংস হতে বসেছিল। এখন আবার খেলায় ফিরলেও তারা যা শুরু করেছে, মনে হচ্ছে আবারও তারা বড় ধরনের গ-গোল বাধিয়ে দিয়ে লীগটা বন্ধ করে দিতে চায়। হকিকে ধ্বংস করাই যেন তাদের মূল লক্ষ্য। এটা অবশ্যই দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়।’ বুধবার মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে এমনটাই মন্তব্য করেন অতুল হেমন্ত নামের এক হকিপ্রেমী। গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লীগে বুধবার দুটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ৩১ ও ৩২ নম্বর খেলার কোনটিই শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। প্রথমটি কোনমতে শেষ হলেও দ্বিতীয়টি তো শেষই হয়নি। প্রথম খেলায় ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাব ২-১ গোলে হারায় সোনালী ব্যাংক স্পোর্টস এ্যান্ড রিক্রেয়েশন ক্লাবকে। দ্বিতীয় ম্যাচে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড মোকাবেলা করে ঊষা ক্রীড়া চক্রের। গোলযোগপূর্ণ খেলাটি বার বার বন্ধ হয় এবং থেমে থেমে চলে। ২-২ গোলে ড্র থাকা অবস্থায় আলোস্বল্পতার দরুন ম্যাচটি স্থগিত হয়ে যায়। আজ ম্যাচের অসমাপ্ত ১৮ মিনিটের খেলা একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। নানা জল ঘোলা করে দীর্ঘ দুই বছর পর আবারও নীল টার্ফে গড়িয়েছিল হকি। এতে সবাই বুনেছিলেন আশার জাল। ক্লাব কাপ হকিতে ছোটখাট গ-গোল হলেও তা শেষ হয়েছিল শান্তিপূর্ণভাবেই। কিন্তু প্রিমিয়ার হকি লীগে যা হচ্ছে, তাতে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে লীগ আদৌ শেষ হবে কি না! বিদেশী আম্পায়ার দিয়ে খেলা চালানোর পরও তাদের সিদ্ধান্ত মানছে না খেলোয়াড়রা। শুধু তাই নয়, ম্যাচ চলাকালে খেলোয়াড়দের ছাউনিতে ক্লাব অফিসিয়ালদের প্রকাশ্যে ধূমপান, মোবাইল ফোন ব্যবহারের ঘটনা তো ডালভাত হয়ে গেছে! চোখের সামনে দিনের পর দিন এসব ঘটনা ঘটতে দেখেই দোষীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নিচ্ছে না হকিপ্রেমীদের ভাষায় ‘মেরুদ-হীন অযোগ্য-অদক্ষ-দুর্নীতিবাজ’ হকি ফেডারেশন! এবার লীগ শুরুর আগে সময় মতো বিদেশী খেলোয়াড় না আসায় শুরুতেই লীগ পেছানোর আবেদন করে ঊষা। যদিও ঊষার সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি ফেডারেশন। তবে টার্ফে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে প্রায়ই সমস্যার সৃষ্টি করছেন ‘অসহিষ্ণু’ খেলোয়াড়রা। কোন এক অজানা কারণে বিদেশী আম্পায়াররাও খেলায় কঠোর হতে পারছেন না। এমনই ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবারের খেলায়। আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করে মেরিনার-সোনালী ব্যাংকের খেলোয়াড়রা। এতে ম্যাচটি বন্ধ ছিল একঘণ্টার বেশি! মোহামেডান-ঊষা ম্যাচে ঘটে একই কা-! মেরিনার ২-১ গোলে জিতলেও আলোস্বল্পতায় মোহামেডানÑঊষার ম্যাচ শেষ হতে পারেনি। ২-২ ব্যবধানে ড্র থাকা অবস্থায় খেলা বন্ধ করে দেন দুই আম্পায়ার। আজ দুপুরে ওই অবস্থা থেকেই ম্যাচটি শুরু হবে। মেরিনার-সোনালী ব্যাংকের খেলা শুরু হয় আধঘণ্টা দেরিতে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ম্যাচটি শেষ হওয়ার কথা ছিল সাড়ে তিনটায়। কিন্তু সাড়ে চারটায়ও ম্যাচটি শেষ হয়নি! গতকালের প্রথম ঝামেলার সূচনা করে মেরিনারই। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আম্পায়ারের এক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে মেরিনারের কৌশিক লাথি মারেন সোনালী ব্যাংকের অজিত কুমার বিশ্বাসকে। এটা নিয়ে তর্কে জড়ান দুই দলের খেলোয়াড়রা। দুই আম্পায়ার সেলিম লাকি ও শাহবাজ আপ্রাণ চেষ্টা করে এদের থামান। পরে কৌশিক ও অজিতকে হলুদ কার্ড দেখান আম্পায়ার শাহাবাজ। মেরিনার্স কৌশিকের কার্ড মেনে নিলেও এর বিরোধিতা করে মাঠ ছাড়ে সোনালী ব্যাংক। ফলে খেলা বন্ধ থাকে ২০ মিনিট। খেলা শুরুর মিনিট পাঁচেক পরে আবারও পেনাল্টি কর্নারের সিদ্ধান্তে বেঁকে বসে সোনালী ব্যাংক। এবার তাদের মাঠে নামাতে ছুটে যান ফেডারেশন কর্মকর্তারা। তাদের অনুরোধে খেলা শুরু হলে ওই পেনাল্টি কর্নার থেকেই ২-১ গোলে মেরিনার্সকে এগিয়ে দেন খোরশেদ। কোনমতে প্রথম ম্যাচটা শেষ করা গেলেও পরের ম্যাচে শুরুতেই দুই বিদেশী আম্পায়ার নিয়ে অভিযোগ করে মোহামেডান। এখানেও ফেডারেশন কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করে। শুরুর পর আম্পায়ারের নেয়া প্রায় প্রতিটি সিদ্ধান্তে আপত্তি তোলে মোহামেডান। সবচেয়ে বেশি আপত্তি করেন রাসেল মাহামুদ জিমি ও আসাদুজ্জামান চন্দন। গোলযোগের এ ম্যাচেও কার্ড দেখাতে ‘কিপ্টেমি’ করেন দুই আম্পায়ার সিঙ্গাপুরের হরিসরন ও শ্রীলঙ্কার নওশাদ। আম্পায়ারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মেরিনারের জার্মান কোচ গেরহাড পিটার তো আম্পায়াদের মান নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন! সমালোচনা করেছেন তার সাবেক দুই শিষ্য চন্দন ও জিমির। আম্পায়ারদের ব্যাপারে প্রধান নির্বাচক কামরুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘আগের ম্যাচে আম্পায়াররা চাইলে আগেই খেলা শেষ করে দিতে পারতো। তারা কেন সেটা করলো না জানি না।’ লীগ কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মইনুজ্জামান পিলাও এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাদের নীরবতাই প্রমাণ করে হকির বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী কারা। গতকাল আলোকস্বল্পতায় বন্ধ হওয়া ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে গোল করেন জিমি ও সালমান হোসেন। ঊষার গোলদাতা হলেন কৃষ্ণ কুমার ও আলীম বেলাল।
×