ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গাজী গ্রুপকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সুপারলীগে প্রাইম দোলেশ্বর, সিসিএসকে হারিয়েও সবার নিচে কলাবাগান সিএ

প্রাইম ব্যাংককে হারিয়ে সেরা তিনে আবাহনী

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২ জুন ২০১৬

প্রাইম ব্যাংককে হারিয়ে সেরা তিনে আবাহনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কি দারুণ উন্নতি আবাহনীর। সাত ম্যাচ শেষে যেখানে সুপারলীগে ওঠা নিয়েই ছিল সংশয়। সেখানে কিনা ১০ ম্যাচ শেষে সেরা তিনে এখন আবাহনী! ভারতের ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান দলের সঙ্গে যোগ দিতেই যেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে আবাহনী। বুধবার প্রাইম ব্যাংককে সহজেই ৫ উইকেটে হারিয়ে এখন ১২ পয়েন্ট আছে আবাহনীর ঝুলিতে। শেষ ম্যাচে জিতলেই সুপারলীগ খেলবে। না জিতলেও সুপারলীগে ওঠার সুযোগ ভালভাবেই থাকছে। আবাহনীর সুপারলীগে ওঠা এখনও শেষ ম্যাচের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও, প্রাইম দোলেশ্বর সেই গ-ি অতিক্রম করে ফেলেছে। গাজী গ্রুপকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ১০ ম্যাচ শেষে সর্বোচ্চ ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে সুপারলীগে খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে দোলেশ্বর। সুপারলীগে খেলার কোন সম্ভাবনা নেই কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি (সিএ) ও ক্রিকেট কোচিং স্কুলের (সিসিএস)। তবে জয়ের ভা-ারতো মজবুত করাই যেতে পারে। সিসিএসকে বৃষ্টি আইনে ৫ উইকেটে হারিয়ে সেই কাজটি করলও কলাবাগান সিএ। তবে পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচেই থাকল। বুধবার যে তিনটি ম্যাচ হয়েছে, প্রতিটিতেই জয়ের ব্যবধান ছিল একই। ৫ উইকেটের জয় মিলেছে। সাকিব, তামিম, পাঠানের ঝলক ছাপিয়ে সৈকত ॥ জিততেই হবে। এমন কন্ডিশনে এসে যেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আরও ঝলসে উঠলেন। সাত ম্যাচ শেষে ৩ জয় পেয়েছিল আবাহনী। সুপারলীগে খেলতে হলে বাকি চার ম্যাচের প্রতিটিতেই জিততে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আর কেউ ভাল খেলুক না খেলুক; সৈকত ব্যাট হাতে ক্যারিশমা দেখিয়েই চলেছেন। সামনে যত বড় তারকা ক্রিকেটারই থাকুক। তার ব্যাটে রান আছেই। সবশেষ ম্যাচে শেষ দুই বলে ছক্কা-চার হাকিয়ে আবাহনীকে জেতানোর পর বুধবার প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষেও দলকে জয়ের স্বাদ এনে দিলেন সৈকত। প্রাইম ব্যাংক আগে ব্যাট করে সাকিব আল হাসানের (৪/৩৫) স্পিন ঘূর্ণির সামনে পড়ে। সঙ্গে সাকলায়েন সজিবের (৩/৩৭) নৈপুণ্যে ২৪০ রান করতে পারে প্রাইম ব্যাংক। বোলিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে আবাহনীর ব্যাটিং লাইনআপ এখন এতটাই শক্ত হয়ে উঠেছে যে এ রান করে সহজেই জয় তুলে নেয়ার কথা। কিন্তু খানিক কষ্ট হলো। শুরুতেই তামিম ইকবাল (৪০) নৈপুণ্য দেখালেন। এরপর ইউসুফ পাঠান ঢাকা লীগে খেলতে নেমেই ৪৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬০ রানের ঝড়োইনিংস খেললেন। পাঠানের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত (৩২) ৯৪ রানের জুটি গড়লেন। আবাহনী ততক্ষণে ১৫০ রান করে ফেলে। কিন্তু হঠাৎ করেই বিপত্তি ঘাড়ে চেপে বসে। ১৫০ থেকে ১৫৬ এই ৬ রানের মধ্যেই শান্ত, পাঠান ও সাকিব আউট হয়ে যান। ৫ উইকেট হারানোর পর যেন আবাহনীও খাদের কিনারায় পড়ে যায়। ২৮.৫ ওভার শেষ হয়। জিততে রান তখন দরকার ৮৫। হাতে উইকেট থাকে ৫টি। তবে বল থাকে ১২৭। রানের তুলনায় বল অনেক বেশি থাকে। জেতার সুযোগও থাকে। কিন্তু যদি টপাটপ উইকেট হারাতে থাকে আবাহনী, তাহলেই বিপদ। যদি কোনভাবে সৈকতও আউট হয়ে যান, তাহলে তো আবাহনীর হারও নিয়তি হতে পারে! এমন মুহূর্তে আবারও আসল কাজ করে দিলেন সৈকত। ব্যাট হাতে ৪৯ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৬৪ রান করে দলকে জিতিয়ে দিলেন। সঙ্গে ওপেনিং পজিশন হারানো লিটন কুমার দাসকে (২৫*) নিয়ে গড়লেন ৮৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। যে জুটিই জেতালো আবাহনীকে। তবে যাদের কাছ থেকে নৈপুণ্য আশা করা হয়েছে, ম্যাচটিতে প্রত্যেকে দেখিয়েছেন ঝলক। কিন্তু সাকিব, তামিম, পাঠানের নৈপুণ্যকেও ছাপিয়ে গিয়ে ম্যাচের নায়ক হলেন যথারীতি গত ম্যাচের মতো এবারও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। শেষদিকে তার ব্যাটিং নৈপুণ্যেই জিতল আবাহনী। পয়েন্ট তালিকায় সেরা তিনেও উঠে গেল। মেনারিয়ার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সুপারলীগে দোলেশ্বর ॥ প্রথম দুই ম্যাচে কিছুই করে দেখাতে পারেননি। সর্বসাকুল্যে ৭ রান করেছেন। পেয়েছেন ১ উইকেট। এমন ম্যাচে এসে ভারতের অশোক মেনারিয়া বোলিং-ব্যাটিং ঝলক দেখালেন, যখন তার নৈপুণ্যে সুপারলীগেই উঠে গেল প্রাইম দোলেশ্বর। বল হাতে ৩ উইকেট নিলেন। তার স্পিন দ্যুতিতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রানের বেশি করতে পারল না গাজী গ্রুপ। এ রান অতিক্রম করে জয় পাওয়া দোলেশ্বরের জন্য তো সময়ের ব্যাপার যেন। দলটি যে দুর্দান্ত খেলছে। ৪৯ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২১৭ রান করে জিতল দোলেশ্বর। তবে এ জয়ে ব্যাটিংয়েও মেনারিয়ার বিশেষ ভূমিকা থাকল। করলেন ৬১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৫৯ রান। তার সঙ্গে রনি তালুকদার ৪৩, নাসির হোসেন ৪০ রান করলেন। তবে বল-ব্যাট হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোতে মেনারিয়াই জয়ের নায়ক হলেন। গাজী গ্রুপ ১০ পয়েন্টেই পড়ে থাকল। সুপারলীগে খেলাও ধোয়াশায় পরিণত হলো। সাকসেনায় ভর করে আরেকটি জয় পেল কলাবাগান সিএ ॥ সব দল একাধিক জয় পেলেও একটি মাত্র জয় ছিল কলাবাগান সিএ’র ভা-ারে। দলটির বেহাল দশা তো ছিলই। সঙ্গে অন্তত আরেকটি জয়ের জন্য হন্যে হয়ে ছিল। সেই জয় অবশেষে মিলল। ভারতের যতিন সাকসেনার দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্যে ১০ ম্যাচে দ্বিতীয় জয় তুলে নিল কলাবাগান সিএ। আগে ব্যাট করে সিসিএস ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান করে। অমিত মজুমদার সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন। মাহমুদুল হাসান নেন ৩ উইকেট। জবাবে ২৬.৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১১১ রান করে কলাবাগান সিএ। এমন সময়েই বৃষ্টি হানা দেয়। তাতে খেলাও বন্ধ থাকে আধ ঘণ্টা। আবার যখন খেলা শুরু হয়, কলাবাগান সিএ’র সামনে ৪৯ ওভারে ১৮৪ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। এর আগেই সাকসেনা অর্ধশতক করে ফেলেন। শেষে সাকসেনার ৮৭ রানের সঙ্গে মাহমুদুলের ৪৬ রানে ৪০.১ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রান করে জিতে যায় কলাবাগান সিএ। তবে পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচেই থাকে দলটি। সিসিএস হেরেও কলাবাগান সিএ’র ওপরে ১১ নম্বরে আছে। স্কোর ॥ প্রাইম ব্যাংক ইনিংস ২৪০/৯; ৫০ ওভার (সোহান ৪৬, তাইবুর ৪৩, শুভগত ২৯, মেহেদী ২৬, মনির ২৫*, শানাজ ২৪; সাকিব ৪/৩৫, সাকলায়েন ৩/৩৭)। আবাহনী ইনিংস ২৪৩/৫; ৪৪.৩ ওভার (সৈকত ৬৪*, পাঠান ৬০, তামিম ৪০, শান্ত ৩২, লিটন ২৫*, সাকিব ৩; শুভগত ৩/৩৮)। ফল ॥ আবাহনী ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (আবাহনী)। গাজী গ্রুপ ইনিংস ২১৩/৮; ৫০ ওভার (ইলিয়াস ৪৬, শরীফ ৩৯*, মেহেদী ২৪, ফরহাদ হোসেন ২৩; মেনারিয়া ৩/২৯)। প্রাইম দোলেশ্বর ২১৭/৫; ৪৯ ওভার (মেনারিয়া ৫৯*, রনি ৪৩, নাসির ৪০, রবি ৩২)। ফল ॥ দোলেশ্বর ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ অশোক মেনারিয়া (প্রাইম দোলেশ্বর)। সিসিএস ইনিংস ১৮৫/৯; ৫০ ওভার (অমিত ৩৮, সাইফুদ্দিন ২৮, নবী ২৭; মাহমুদুল ৩/৩৭)। কলাবাগান সিএ ইনিংস (টার্গেট ৪৯ ওভারে ১৮৪) ১৮৬/৫; ৪০.১ ওভার (সাকসেনা ৮৭, মাহমুদুল ৪৬, ইরফান ১৯; মাসুম ২/৩১)। ফল ॥ কলাবাগান সিএ বৃষ্টি আইনে ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ যতিন সাকসেনা (কলাবাগান সিএ)।
×