ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকায় বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২ জুন ২০১৬

আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকায় বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ়তর হচ্ছে। সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার ফলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিকভাবে দেশী-বিদেশী নাগরিকরা তাদের জীবনযাপন ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকার ফলে দেশে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। বুধবার ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে দশম জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরুর দিনে সংসদ সদস্য এমএ আউয়ালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকসহ জনসাধারণের সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তাসাধনে পুলিশবাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদসহ যেকোন ধরনের অরাজকতা রোধ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সব ধরনের জঙ্গীবাদ, নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ও হুকুমদাতাদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরস্পরের সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে জঙ্গী, সন্ত্রাসী, নাশকতামূলক, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছেÑ এমন ব্যক্তিদের কর্মকা- ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীসহ সকল অপরাধীর কর্মকা- রোধে তাদের অর্থের যোগানদাতা ও অর্থের উৎস সন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ঈদে নির্বিঘেœ জনগণ যাতায়াত করতে পারবে ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদ-উল-ফিতরে জনগণ যাতে যানজটমুক্ত ও নির্বিঘেœ বাড়ি আসা-যাওয়া করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্য আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভায় ৩২টি প্রস্তাব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পূর্ববর্তী ঈদ-উল-ফিতরগুলোর চেয়ে আগামী ঈদ-উল-ফিতরে জনসাধারণ আরও স্বচ্ছন্দে, আনন্দঘন পরিবেশে ও নির্বিঘেœ বাড়ি আসা-যাওয়া করতে পারবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উত্থাপন হতে পারে এমন সব প্রস্তাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে একমুখী যান চলাচল ব্যবস্থা চালু করাসহ আইন অমান্যকারী যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে এবং অবৈধভাবে পার্কিং করা যানবাহনের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মহানগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত ও সংস্কার করা। জাতীয় আঞ্চলিক মহাসড়কসমূহ যানজটমুক্ত রাখা। দুর্ঘটনায় পতিত গাড়ি দ্রুত অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক রেকার ও ক্রেন প্রস্তুত রাখা। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুসহ সকল টোল প্লাজার সব বুথ চালু রাখা হবে। তিনি জানান, ভিজিলেন্স টিম গঠন এবং ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ ও বহির্গমন মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখা হবে। ঈদে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা শহরে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং যাত্রী উঠানামা বন্ধ করা হবে। যত্রতত্র পার্কিং বন্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। ফেরিঘাটে পর্যাপ্তসংখ্যক যান্ত্রিক ত্রুটিমুক্ত ফেরির চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। নসিমন, করিমন, ইজিবাইক মহাসড়কে, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে বন্ধ নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া ঈদের ৭ দিন আগে ও ৩ দিন পরে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের চলমান উন্নয়ন কাজ জনস্বার্থে বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হবে। সকল সিটি কর্পোরেশন ও সকল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সড়কসমূহ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। সিএনজি স্টেশন সর্বক্ষণিক চালু রাখা হবে। জরুরী সার্ভিসসমূহ প্রস্তুত রাখা হবে। অস্থায়ী ভাসমান বাজার অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্পেশাল বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস চালু করা হবে। বিনা প্রয়োজনের মহাসড়কে যানবাহন থামানো যাবে না। নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে। গার্মেন্টসগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনে ছুটি প্রদান ও খোলার ব্যবস্থা রাখাসহ ৩২ প্রস্তাব আন্তঃমন্ত্রণালয়ে উঠছে। ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশ ॥ সরকারী দলের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বর্তমানে দেশে শিক্ষা, তথ্য, যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, গুণগত মানসম্পন্ন করা এবং এর সম্প্রসারণে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক মানোন্নয়ন করা হয়েছে।
×