ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেমিনার উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য এনএসডিআই গড়ে তোলা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ জুন ২০১৬

পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য এনএসডিআই গড়ে তোলা হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দেশের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে জিও ডাটা সংগ্রহ এবং ডিজিটাল ম্যাপিংয়ের জন্য শীঘ্রই ন্যাশনাল স্পেশাল ডাটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এনএসডিআই) গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, গুরুত্ব বিবেচনা করে শীঘ্রই এনএসডিআই গঠনে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ একটি দেশের পরিকল্পিত উন্নয়নে জিও ডাটা এবং তথ্যের প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে ভূমির বিজ্ঞানসম্মত তথ্য-উপাত্ত জানা প্রয়োজন।’ প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দু’দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল স্পেশাল ডাটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এনএসডিআই)’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের জমির গঠন-প্রকৃতি জানা থাকলে আমাদের জমি ব্যবহারের কার্যকর পরিকল্পনা করা সহজ হবে। আর এজন্যই আমরা ন্যাশনাল স্পেশাল ডাটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এনএসডিআই) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে ডাটার অপব্যবহার রোধেরও উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ন্যাশনাল স্পেশাল ডাটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এনএসডিআই) গঠনের লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। তিনি বলেন, ‘এনএসডিআই’ গঠনের মাধ্যমে দেশের সমগ্র ভূমির পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে, যাতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এজন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মকৌশল নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি এনএসডিআই গঠনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, বাংলাদেশের জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানবে এবং বাংলাদেশে জাইকার চীফ রিপ্রেজেনটেটিভ মিকিও হাতায়দা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সার্ভেয়ার জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আবুল খায়ের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এনএসডিআই’ গঠিত হলে দেশের সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানসহ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা জিও-স্পেশাল তথ্যপ্রবাহে যুক্ত হয়ে অবাধে ডাটা সংগ্রহ করতে পারবেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্নভাবে ভূপৃষ্ঠের তথ্য-উপাত্ত তৈরি এবং সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকে। ‘এনএসডিআই’ গঠন হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিনিময় সহজ হবে। এসকল তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে তথ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে একটি নীতিমালা অনুসরণপূর্বক একই ছাতার নিচে আনা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এনএসডিআই’র ফলে ডাটা প্রস্তুতে দ্বৈততা পরিহার করাসহ নিখুঁত ও হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত বিনিময় সহজতর হবে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি একই ডোমেইন থেকে ডাটা ব্যবহারের ফলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হবে। দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম গতিশীল ও ত্বরান্বিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্নভাবে জিও-স্পেশাল ডাটা প্রস্তুত ও ব্যবহার করছে। ‘এনএসডিআই’ গঠনের মাধ্যমে সকল জিও-স্পেশাল ডাটা একই প্ল্যাটফর্মে জিও-পোর্টালে সংরক্ষিত থাকবে। ফলে জিও-স্পেশাল ডাটা ব্যবহারকারী সকল প্রতিষ্ঠানের চাহিদানুযায়ী ডাটা ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য এবং ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশেষ বৈচিত্র্যময়। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা নদীমাতৃক বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত ও ম্যানগ্রোভ বনভূমি। পূর্বে উঁচু এবং উত্তরে ছোট ছোট পাহাড়। কিন্তু আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ছোট দেশ। কাজেই জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সারাদেশে এক শ’টি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সেক্ষেত্রেও চাষের জমি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে তাকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিসম্পন্ন এই ছোট্ট দেশের ব্যবহারযোগ্য জমির স্বল্পতা সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিজমি সংরক্ষণ প্রয়োজন, অন্যদিকে কলকারখানা স্থাপন এবং জনবসতির জন্য জমির প্রয়োজন। পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনের ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ জমি হারিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমাদের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন ভূমির বিজ্ঞানসম্মত তথ্য-উপাত্ত। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা এখন সহজেই আমাদের ভূ-প্রকৃতির গঠন এবং বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করতে পারি। প্রতিবছর যেমন ভাঙ্গনের ফলে কৃষিজমি নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আমাদের সমুদ্রে কিন্তু জমি জেগে ওঠছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জরিপের মাধ্যমে এসব জেগে ওঠা চর কিভাবে ব্যবহার উপযোগী করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগিয়ে এসব চরের বা দ্বীপের ভূমিক্ষয় বন্ধ করা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতরকে সমুদ্র উপকূলে নতুন জেগে ওঠা চর ও দ্বীপসমূহের টপোগ্রাফিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর উপকূলবর্তী এলাকার ৪৮টি মানচিত্র প্রণয়ন করে দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ অধিদফতর বিভিন্ন স্কেলের ডিজিটাল মানচিত্র প্রণয়ন সম্পন্ন করেছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের বৃহৎ স্কেলে ডিজিটাল মানচিত্র প্রণয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে ৯৮৮টি ম্যাপশীটের মধ্যে ৯০০টি ম্যাপশীট প্রস্তুত সম্পন্ন করেছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, এগুলোর পাশাপাশি ডিজিটাল এলিভেশন মডেল (ডিইএম) এবং ডিজিটল টেরেইন মডেল (ডিইএম) প্রস্তুতের কার্যক্রমও চলছে। এ মডেলগুলো বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি আজ খুবই দৃঢ় অবস্থানে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচক ইতিবাচক ধারায় এগোচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এ বছর জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ হবে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্যসেবা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ‘এনএসডিআই’ গঠিত হলে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও একধাপ অগ্রগতি হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করায় তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার মিরপুরের দামালকোটে স্থাপিত বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতরের ডিজিটাল ম্যাপিং সেন্টার উদ্বোধন করেন।
×