ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাসীর মামুন

জয় বাংলা যেভাবে ছিনতাই হয়ে যায়

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২ জুন ২০১৬

জয় বাংলা যেভাবে ছিনতাই হয়ে যায়

(গতকালের চতুরঙ্গ পাতার পর) সেদিন কি ঘটেছিল? শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে নিয়ে অনেক ভার্সান তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খুব সহজ নয়। শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। তিনি সেলিম ওসমানকে ভগবান বলেছেন। সেটি বলতে তিনি বাধ্য। নারায়ণগঞ্জে বসবাস করলে তা বলতে হবে। তার প্রভাব বোঝা যায় যখন বিকেএমই তার পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে। শ্যামল বলেছেন, তিনি এক কোটি টাকা আদায় করতে চান তার তিন কন্যা বিয়ে দিতে। সেটি কেন বলেছেন তা অবশ্য খতিয়ে দেখা হয়নি। জানি না এ ধকলের পর তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে কিনা। কারণ, এর আগে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। সেলিম ওসমান তার বক্তব্য রেখেছেন, সংবাদ সম্মেলন করেছেন। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন অধিপতিরা তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। আরেক ট্রাইবের অধিপতি নারায়ণগঞ্জের মেয়র অবশ্য সব সময় সোচ্চার হলেও এখন মৌনব্রত গ্রহণ করেছেন। মূল ঘটনা পত্রিকা ও টিভির প্রতিবেদন পড়ে আমরা যা জেনেছি তা হলো- নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নাম শ্যামল কান্তি ভক্ত। ওই এলাকার সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমান। ওসমান গোষ্ঠীর প্রবল প্রতাপান্বিত পুরুষ। সেলিম ওসমানের মতে, শ্যামল কান্তি ইসলামের অবমাননা করেছিলেন। উন্মত্ত জনতা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলছিল প্রায়। তিনি খবর পেয়ে জনতার রোষ থেকে তাকে বাঁচান। ভিডিওতে দেখা গেছে, শ্যামল কান্তি কান ধরে উঠবস করছেন। আরও কয়েক মস্তান আশপাশে। ‘উন্মত্ত জনতা’ জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছে, যেন ব্যাপারটা খুব আমোদের। জানা গেছে, উপস্থিত পুলিশরাও নাকি বিষয়টি উপভোগ করছিল। ব্যাপারটির হয়ত এখানে ইতি হতো। ওই যে কী বলে না আধুনিক টেকনোলজি। কান ধরা শিক্ষকের ছবি ফেসবুকে আসামাত্র টিভিতে ছড়িয়ে পড়ল। সারাদেশ স্তম্ভিত। সারাদেশে ‘সরি স্যার’ নামে তীব্র প্রতিবাদ। ফেসবুকে দেখা গেল লেখা-কান ধরে আজ বাংলাদেশ। দিকে দিকে মানববন্ধন। এ রকমটি হবে সেলিম ভাবেননি। সরকার তার পক্ষে, সেখানে কে তাকে কী বলবে? ওই দিন বেতারের সংবাদে শুনেছিলাম প্রধানমন্ত্রী বলছেন, নবী (দ.)-এর অবমাননা সহ্য করা হবে না। কিন্তু কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিষয়টি বলেছেন বোঝা গেল না। কারণ, আমরা শ্যামল কান্তির ঘটনা জানতাম না। সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বেশ কড়া কথা বললেন। তার হঠাৎ দৃঢ় হওয়া দেখে সবাই আঁচ করল, হয়ত প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন। আগে হয়ত কেউ তাকে সেলিমের ভার্সান দিয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী বললেন তদন্ত হবে। সাংবাদিকরা জানালেন, মসজিদের ইমাম জানিয়েছেন, শ্যামল কান্তি ধর্মের অবমাননা করেননি। বলা হয়েছিল এক ছাত্রকে নিপীড়নের সময় তিনি ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন। সেই ছাত্র ও তার মা জানালেন, শ্যামল কান্তি ধর্মের অবমাননা করেননি। সেলিম কিন্তু তার কথা থেকে সরেননি। দম্ভোক্তি করে বলেছেন তিনি কারও কাছে ক্ষমা চাইবেন না। শ্যামল কান্তি বলছেন, সেলিম যা বলছেন তা সত্য নয়। দুই পক্ষের বক্তব্য সংবাদপত্র থেকেই উদ্ধৃতি করছি- ‘সেলিম ওসমানের কাছে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল- এ ঘটনায় সারাদেশের মানুষ ‘সরি স্যার’ বলছে। সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক মহল থেকে সাংসদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠেছে। আপনি ক্ষমা চাইবেন কিনা? এতে সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে সাংসদ বলেন, ‘আমি কার কাছে ক্ষমা চাইব? আল্লাহকে কটাক্ষকারীর সাজা হয়েছে। আমি যদি মরেও যাই, তাও ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। (চলবে)
×