ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ারের গোধূলিতে ইভানোভিচ

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১ জুন ২০১৬

ক্যারিয়ারের গোধূলিতে ইভানোভিচ

টেলিভিশনে মনিকা সেলেসের খেলা দেখে বাবা-মায়ের কাছে র‌্যাকেট কেনার বায়না ধরেন আনা ইভানোভিচ। পাঁচ বছর বয়সী ছোট্ট সেই বালিকার আবদার তখন ফেলে দিতে পারেনি তার পরিবার। টেনিসের প্রেমে সেই যে মজেছিলেন তা এখনও ধরে রেখেছেন ২৮ বছর বয়সী এই সার্বিয়ান। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করেছেন ইভানোভিচ। পেয়েছেন গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদও। কিন্তু পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি তিনি। চলতি মৌসুমের প্রথম দুই গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টেও নিজেকে ফিরে পাননি এই সার্বিয়ান। দীর্ঘ ৮ বছর গ্র্যান্ডসøামহীন ইভানোভিচ! তাই টেনিসবোদ্ধারা ধরেই নিচ্ছেন এবার হয়ত ফুরিয়েই গেছেন সাবেক নাম্বার ওয়ান এই তারকা। গত এক দশক ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন ইভানোভিচ। তবে স্বপ্নের গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পান ২০০৮ সালে। সে বছরই প্রথম কোন মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। সেবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করলেও স্বপ্নভঙ্গ হয় সার্বিয়ান তারকার। রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভার কাছে হেরে যান তিনি। তারপরও লড়াই চালিয়ে যান ইভানোভিচ। ফ্রেঞ্চ ওপেনে আবারও ফাইনালে জায়গা করে নেন টেনিস কোর্টের এই সুদর্শনা। এবার আর স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিপক্ষ। ফাইনালে দিনারা সাফিনাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো স্বপ্নের গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পান তিনি। টেনিস কোর্টে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স উপহার দেয়ার সৌজন্যে সে বছরই বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থানটি দখল করে নেন ইভানোভিচ। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ আট বছর। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে আর কখনোই গ্র্যান্ডসøাম জিততে পারেননি তিনি। তবে কখনোই হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েননি ১৫টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জেতা এই টেনিস তারকা। সবসময়ই কোর্টে থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বদা নিজের সেরাটা দিতে মত্ত ইভানোভিচ। কিন্তু কোর্টের লড়াইয়ে যেন বার বারই ব্যর্থ হচ্ছেন ২৮ বছর বয়সী এই তারকা খেলোয়াড়। নতুন মৌসুমে নতুন উদ্যমে শুরুর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। কিন্তু না, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নেন ইভানোভিচ। বছরের দ্বিতীয় মেজর টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেনেও একই চিত্রনাট্য! রোঁলা গ্যাঁরোতেও তৃতীয় রাউন্ড থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। তাও আবার ইউক্রেনের এলিনা ভিতলিনার কাছে হেরে। শনিবার ফরাসী ওপেনের ১৮তম বাছাই ভিতলিনা ৬-৪ এবং ৬-৪ সেটে পরাজিত করেন সাবেক চ্যাম্পিয়ন ইভানোভিচকে। ইভানোভিচের বিপক্ষে এর আগেও সাতবার মুখোমুখি হয়েছিলেন ভিতলিনা। কিন্তু মাত্র একটি সেট জিততে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। গত মৌসুমেও এই ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ইভানোভিচের কাছে হেরেই বিদায় নেন ইউক্রেনের এই তারকা। এবার সেই ইভানোভিচের বিপক্ষে জিতে দারুণ রোমাঞ্চিত ভিতলিনা। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আনার বিপক্ষে আমার এটাই প্রথম জয়। আমার জন্য এটা বিশেষ কিছু।’ তবে ইভানোভিচ নিজের বাজে পারফরমেন্সকেই দোষারোপ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ফোরহ্যান্ড সঠিকভাবে কাজ করছিল না। অসংখ্য ইররস খেলেছি আমি। আর এজন্যই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছি।’ তবে বর্তমানে শুধু ইভানোভিচ একাই যে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন তা নয়। আমেরিকান টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস ছাড়া বাকিরা ব্যর্থ হচ্ছেন আলো ছড়াতে। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছেন মারিয়া শারাপোভা। রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপ, বেলারুশের ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার সামান্থা স্টোসার, ডেনমার্কের ক্যারোলিন ওজনিয়াকি কিংবা পোল্যান্ডের এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কা সকলেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন। তবে কোর্টের লড়াইয়ে সার্বিয়ার ইভানোভিচ নিষ্প্রভ থাকলেও প্রেমের মাঠে কিন্তু দারুণ সময় কাটছে তার। প্রেমিক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্মান তারকা বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগার। দুই জগতের দুই তারকা হয়েও দারুণ উপভোগ্য সময় পার করছেন তারা। একজন টেনিসে আরেকজন ফুটবলে। দুই তারকা দুই দেশের হলেও মনের টানে মিলে গেছেন একই বিন্দুতে। প্রথম প্রথম গুঞ্জন ছিল। কিন্তু সঠিক কোন প্রমাণ মিলছিল না তাদের। তবে গত বছরের ফ্রেঞ্চ ওপেনই খুলে দিল সব জটলা। টেনিস কোর্টে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সার্বিয়ান তারকা ইভানোভিচ যখন ঝড় তুলেন গ্যালারিতে বসে বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগার তখন হাততালি দিয়ে দারুণভাবে অনুপ্রেরণা যোগান। তাদের প্রেমের রসায়ন বুঝতে এই চিত্রটাই ছিল যথেষ্ট। তাদের প্রেমের সূত্রপাত ছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে। হাতে-হাত রেখে নিউইয়র্কের রাস্তায় আনা ইভানোভিচ আর বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগারকে হাঁটতে দেখা যায়। এরপর বড় চমকটা উপহার দেন জার্মান ফুটবলার নিজেই। ইভানোভিচের ২৭তম জন্মদিনে হাজির হয়ে যান তিনি। বিভিন্ন প্রতিবেদনে অনেকবার উঠে এসেছে, দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বিয়ের মাধ্যমে। তবে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিক কোন খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বর্তমানে ইংল্যান্ডে একত্রেই বসবাস করছেন তারা। টেনিস কোর্টে যখন নিষ্প্রভ ইভানোভিচ তখন শোয়েইনস্টেইগারও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হন। তাছাড়া মৌসুমের শেষ মুহূর্তে তো ইনজুরির কবলেই পড়েন তিনি। তবে এ সময় জার্মান তারকার পাশেই ছিলেন ইভানোভিচ। তবে জানিয়ে রাখা ভাল যে শোয়েইনস্টেইগার আর ইভানোভিচের কিন্তু এটাই প্রথম প্রেম নয়। এর আগে ইভান পাউনিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সার্বিয়ান টেনিস তারকা ইভানোভিচের। কিন্তু সেই সম্পর্ক টিকেনি খুব বেশিদিন। ২০১৩ সালের শেষ দিকে সেই সম্পর্কের ইতি টানেন বিশ্ব টেনিসের অন্যতম সুন্দরী এই তারকা। আর জার্মান মডেল সারা ব্র্যান্ডনার সঙ্গে প্রেমে মজেছিলেন সাবেক বেয়ার্ন মিউনিখের তারকা ফুটবলার বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টেইগারও।
×