ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হায়দরাবাদের বাজিমাত

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১ জুন ২০১৬

হায়দরাবাদের বাজিমাত

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নবম আসরে বাজিমাত করল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেই শিরোপা উঁচিয়ে ধরল ডেভিড ওয়ার্নারের দল। এম চিন্মাস্বামীর উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে ৮ রানে হারায় তারা। ৭ উইকেটে ২০৮ রানের বড় স্কোর গড়ে হায়দরাবাদ। জবাবে সমান উইকেটে ঠিক ২০০ রানে থামে ব্যাঙ্গালুরুর ইনিংস। ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ফাইনালে ম্যাচসেরা হয়েছেন বেন কাটিং। তবে বড় স্কোর গড়ার পথে ভীতটা গড়ে দিয়েছেন ওয়ার্নারই। ৩৮ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৯ রানের চমৎকার ইনিংস উপহার দেন অধিনায়ক। পুরো টুর্নামেন্টে দলকে একাই টেনেছেন তিনি। ৯ হাফ সেঞ্চুরিরর সাহায্যে করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৪৮ রান। বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পেসার ভূবনেশ্বর কুমার (সর্বাধিক ২৩ উইকেট) ও মুস্তাফিজুর রহমানের (পঞ্চম সর্বাধিক ১৭ উইকেট)। বিশ্লেষকদের মতে ওয়ার্নার, ভূবনেশ্বর ও মুস্তাফিজের নৈপুণ্যেই হায়দরাবাদের এই শিরোপা। তবে অধিনায়ক কৃতিত্বটা দিলেন সবাইকে। ওয়ার্নার বলেন, ‘এই সাফল্য দলীয় প্রচেষ্টার ফসল। রান করতে পেরে, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পেরে অবশ্যই ভাল লাগছে। তবে সবার প্রচেষ্টা ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। আমরা মোটেই ফেবারিট ছিলাম না। ফাইনালে ২শ’র ওপরে রান করার পর সন্তুষ্ট ছিলাম, কিন্তু নিশ্চিন্ত থাকতে পারিনি। কারণ প্রতিপক্ষ দলে বিরাট কোহলি-ক্রিস গেইলের মতো ব্যাটসম্যান ছিল। তবে আমার বোলাররা ভাল করেছে। ভূবনেশ্বর ও মুস্তাফিজের কথা আলাদা করে বলতে হয়। মুস্তাফিজ তরুণ ও বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সত্যিকারের এক সম্পদ। আমরা এখন শিরোপা উদযাপনটা উপভোগ করতে চাই।’ অন্যদিকে ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক কোহলিও। ফাইনালেও খেলেছেন ৩৫ বলে ৫৪ রানের দুরন্ত ইনিংস। ৪ সেঞ্চুরি ও ৭ হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে করেছেন রেকর্ড ৯৭৩ রান! টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার উঠেছে আরসিবি অধিনায়কের হাতে। বেশি রান সংগ্রহের জন্য ‘অরেঞ্জ ক্যাপ’ পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। কোহলি বলেন, ‘ব্যাট হাতে ব্যাঙ্গালুরুকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পেরে আমি গর্বিত। ঘরের মাটিতে শিরোপা জিততে পারলে আরও ভাল লাগত। এখানে ২শ’র ওপরে রান চেজ করে জেতা সম্ভব ছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ ভাল বোলিং করেছে। ট্রফিটা ওয়ার্নারদের প্রাপ্য। হায়দরাবাদকে অভিনন্দন।’ সাধারণে বলবেন, ট্রফিটা কোহলি ও তার দলেরই প্রাপ্য ছিল। কিন্তু টি২০ এমনই। যেখানে শুরুতে আলোচনায় না থেকেও শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ! এবারের আইপিএলের পুরস্কারগুলো হচ্ছেÑ (১) ফেয়ারপ্লে ট্রফি: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (ট্রফি) (২) সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার সিজন-২০১৬ : মুস্তাফিজ, ১০ লাখ রুপী এবং ট্রফি (৩) দ্রুত হাফ সেঞ্চুরি : ক্রিস মরিস (১৭ বলে), ১০ লাখ রুপী এবং ট্রফি (৪) ইয়েস ব্যাঙ্ক ম্যাক্সিমাম সিক্স : কোহলি (৩৮ ছক্কা), ১০ লাখ রুপী এবং ট্রফি (৫) সেরা ফিল্ডার : এবি ডি ভিলিয়ার্স (সর্বোচ্চ ১৯ ক্যাচ), ১০ লাখ রুপী এবং ট্রফি (৬) সবচেয়ে বেশি গ্ল্যামার্স শট: ডেভিড ওয়ার্নার, ১০ লাখ রুপী এবং ট্রফি (৭) টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচ: সুরেশ রায়না, ট্রফি এবং ১০ লাখ রুপী (৮) অরেঞ্জ ক্যাপ (সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক) : কোহলি (৯৭৩ রান), ১০ লাখ রুপী এবং ক্রেস্ট (৯) পার্পল ক্যাপ (সর্বোচ্চ উইকেট ২৩টি) : ভূবনেশ্বর কুমার, ১০ লাখ রুপী এবং ক্রেস্ট (১০) মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার : কোহলি, ১০ লাখ রুপী এবং ট্রফি (১১) রানারআপ (ফাইনালে হার) : ব্যাঙ্গালুরু দল, ১০ কোটি রুপী (১২) চ্যাম্পিয়ন : হায়দরাবাদ, ১৫ কোটি রুপী। বিরাট কোহলির কথা আলাদা করে না বললেই নয়। অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ক্রেজী বয়’। অনেকে তার মাঝে গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরের ছাঁয়া দেখেন। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে এক আসরে ৫০০Ñর বেশি রান করেছিলেন শচীন। সেটি ভেঙে দেন কোহলি। কেবল তাই নয়, আইপিএলের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে তিন আসরে ৫০০-র বেশি রানের অনন্য রেকর্ডও গড়েন ‘সুপার’ উইলোবাজ। ২০১৩ আইপিএলে করেছিলেন ৬৩৪, যেটি অধিনায়ক হিসেবে এক আসরে সবচেয়ে বেশি রান তোলার রেকর্ডও। গত আইপিএলে করেছিলেন ৫০৫। এক মৌসুমে ৫০০-এর বেশি রান তোলা বাকি দুই অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর ও ডেভিড ওয়ার্নার। দু’জনই সেটি করেছিলেন একবার করে। ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক কোহলি এবার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক আসরে চার-চারটি সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়লেন।
×