ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইরফানের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর জয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ জুন ২০১৬

ইরফানের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘মেঘলা মেঘলা এই দিনে, বড় ক্লান্ত গোল গুনে গুনে’... মঙ্গলবার মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে এক রসিক হকি দর্শক ছন্দ মিলিয়ে এমনটাই বলছিলেন। বলারই কথা, কেননা আবাহনী লিমিটেড যে মেঘলা আবহাওয়ায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝে অনুষ্ঠিত ম্যাচে গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। ‘গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লীগের দিনের একমাত্র ম্যাচে আবাহনী ৯-৩ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবকে। বিজয়ী দলের মোহাম্মদ ইরফান হ্যাটট্রিক করেন। প্রথমার্ধে ৩-১ গোলে এগিয়ে ছিল আবাহনী। ৬ খেলায় এটা আবাহনীর চতুর্থ জয়। এছাড়া ২ ম্যাচে ড্র করেছে। তাদের সংগ্রহ ১৪ পয়েন্ট। অবস্থান পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয়। ঊষা ক্রীড়া চক্র ৫ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষ অবস্থানে। পক্ষান্তরে ৬ খেলায় ওয়ান্ডারার্সের এটা দ্বিতীয় হার। ৩ জয় ও ১ ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ১০। অবস্থান পঞ্চম (১২ দলের মধ্যে)। আবাহনীর পাঁচ বিদেশী (পাকিস্তানী) খেলোয়াড়ের সঙ্গে পেরে ওঠেননি ওয়ান্ডারার্সের তিন বিদেশী (ভারতীয়) খেলোয়াড়রা। এখানেই রচিত হয় পার্থক্যটা। এর আগে আবাহনী হারায় বাংলাদেশ এসসিকে ৩-১, ওয়ারীকে ১০-৩ এবং রেলওয়েকে ১৪-০ গোলে। ড্র করে ২-২ গোলে মোহামেডান এবং ৩-৩ গোলে মেরিনারের সঙ্গে। এ পর্যন্ত দলীয় সবচেয়ে বেশি গোল করেছে তারাই, ৪১টি। হজম করেছে ১২টি। পক্ষান্তরে ওয়ান্ডারার্স এর আগে হারায় সাধারণ বীমাকে ৬-১, আজাদ এসসিকে ৩-২ এবং সোনালী ব্যাংককে ৭-৪ গোলে। আর হেরে যায় ঊষা কেসির কাছে ৮-২ গোলে। ২-২ গোলে ড্র করে এ্যাজাক্স এসসির সঙ্গে। তাদের দলীয় গোল ২৫, আর হজম করে ৩৪ গোল। মঙ্গলবারের খেলায় ১৩ মিনিটে আবাহনীই প্রথমে গোল করে ‘গোলের হালখাতা’ খোলে। রুম্মন সরকারের ফিল্ড গোলে এগিয়ে যায় দলটি (১-০)। এর দুই মিনিট পরেই শাফকাত রাসুল আরেকটি ফিল্ড গোল করলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয় (২-০)। ১৮ মিনিটে ওয়ান্ডারার্সের খলিলুর রহমানের ফিল্ড গোলে ব্যবধান কমে (১-২)। ২৫ মিনিটে শাকিল আব্বাসি ফিল্ড গোল করলে আবাহনী আবারও এগিয়ে যায় (৩-১)। বিরতির পরও গোলবন্যা অব্যাহত থাকে আবাহনীর। আগের চেয়েও আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে তারা। ৪২ মিনিটে শাকিল আব্বাসি ও ৪৫ মিনিটে তৌাশিক আরশাদ পর পর দুটো ফিল্ড গোল করলে আবাহনী এগিয়ে যায় ৫-১ গোলে। ৪৮ মিনিটে যশিন্দর সিং পেনাল্টি কর্নার (পিসি) থেকে গোল করলে কিছুটা ব্যবধান কমায় ওয়ান্ডারার্স (২-৫)। পরের মিনিটে মাকসুদ আলম হাবুল (ক্লাব কাপ হকির সর্বোচ্চ গোলদাতা) ফিল্ড গোল করলে আবারও এগিয়ে যায় আবাহনী (৬-২)। এরপর ৫২ ও ৫৭ মিনিটে টানা দুটি পিসি থেকে গোল করেন আবাহনীর মোহাম্মদ ইরফান। ফলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৮-২। ৬৩ মিনিটে ওয়ান্ডারার্সের জগজিত সিং ফিল্ড গোল করেন (৩-৮)। ৬৬ মিনিটে পিসি থেকে দলের নবম এবং নিজের হ্যাটট্রিক গোলটি করেন আবাহনীর ইরফান। খেলা শেষ হলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট পাবার তৃপ্তি নিয়ে টার্ফ ছাড়ে আবাহনী শিবির। এদিকে এই ম্যাচ চলাকালে খেলোয়াড়দের ছাউনিতে কিছু ক্লাব অফিসিয়ালদের প্রকাশ্যে ধূমপান করার দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে! ম্যাচ শেষে এ নিয়ে কথা হয় ওয়ান্ডারার্সের সহ-সভাপতি, ওল্ড ঢাকা নাগরিক সমাজের মহাসচিব, সাবেক ফুটবলার সানি মাহতাবের সঙ্গে। ২০১১ সালে সেরা ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সানি জনকণ্ঠকে একরাশ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘চোখের সামনে দেখলাম টেন্টে বসে আমার নিজের ক্লাব ওয়ান্ডারার্সের অফিসিয়ালরা ধূমপান করেছেন! এটা ভীষণ অন্যায় ও দুঃখজনক। আমি বিরতির সময় টেন্টে গিয়ে ধূমপায়ীদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দেন! শুধু আজকের ম্যাচে নয়, ওয়ান্ডারার্সের আগের পাঁচ ম্যাচেও তারা ধূমপান করার মতো গর্হিত অপরাধ করেছেন। এখন ফেডারেশন যদি এ বিষয়টি সুরাহা করার জন্য কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আমি অচিরেই সংবাদ সম্মেলন করে ওই অফিসিয়াল এবং অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা হকি ফেডারেশনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করবো।’ এখন দেখার বিষয় আদৌ হকি ফেডারেশন ওই ধূমপায়ীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে কি না।
×