ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

একুশে পদকপ্রাপ্তিতে সংবর্ধিত মফিদুল হক

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১ জুন ২০১৬

একুশে পদকপ্রাপ্তিতে সংবর্ধিত মফিদুল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা গুণে সমন্বিত এক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক। মুক্তিযুদ্ধের পথরেখায় প্রগতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন নিভৃতে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের এই ট্রাস্টি মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ে লিখেছেন অসংখ্য রচনা। খ্যাতিমান প্রাবন্ধিক পরিচয়ের পাশাপাশি সৃজনশীল প্রকাশক, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক হিসেবেও রয়েছে তাঁর বিশেষ ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের সুবাদে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। আর এই প্রাপ্তি উপলক্ষে তাঁকে প্রদান করা হলো সংবর্ধনা। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয় এই সংবর্ধনা। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা, বই ও প্রতিকৃতি উপহার এবং তাঁকে নিবেদিত বিশিষ্টজনদের আলোচনায় সাজানো হয় অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সভাপতি ওসমান গনি। অনুষ্ঠানে মফিদুল হককে উপহার হিসেবে চিত্রকর্মের প্রতিকৃতি তুলে দেন আনিসুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর। আব্দুস শাহর আঁকা একটি তেলচিত্র তাঁর হাতে তুলে দেন শামসুজ্জামান খান। এছাড়াও সমিতির পক্ষ থেকে এক কার্টুন বইসহ নানা উপহার দেয়া হয়। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এদেশের গণহত্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণটি একমাত্র মফিদুল হকই দিতে পারেন। এ বিষয়ে অসংখ্য লেখাও লিখেছেন। সরকারের অনুমতি ছাড়া দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে নিজ উদ্যোগেই তিনি এ কাজটি করেছেন। তাঁর নানামুখী কর্মকা-ের আমি গর্ববোধ করি। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিল্প-সংস্কৃতি-প্রকাশনা কিংবা মুক্তিযুদ্ধসহ সর্বোপরি মফিদুল হকের কর্মক্ষেত্রের প্রত্যেকেই তাঁকে আপনজন মনে করেন। তিনি এতটাই নির্ভরযোগ্য যে এসব কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা সিদ্ধান্ত তাঁর উপস্থিতি ছাড়া হয় না। অনুভূতি প্রকাশে মফিদুল হক শত বছরের প্রকাশনাশিল্পের ইতিহাস তুলে ধরেন। শুভেচ্ছা বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, জীবনের বহুমাত্রিকতায় সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঋদ্ধ করে যাচ্ছেন মফিদুল হক। যুক্তি সমাজ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তরভাবে। দেশব্যাপী সংস্কৃতিকর্মীদের প্রেরণা জোগাতেও রয়েছে তাঁর বিশেষ ভূমিকা। নেপথ্যে থেকেও জোটের বিভিন্ন কর্মকা-ে বাড়িয়ে দিয়েছেন সহায়তার হাত। যুদ্ধাপরাধীর বিচার আন্দোলনে শক্ত লেখনীর মাধ্যমে নানামুখী প্রোপাগা-ার বিরুদ্ধে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেছেন বহির্বিশ্বে। দেশের বিভিন্ন সংকটময় মূহূর্তেও থেকেছেন সামনের সারিতে। শুভেচ্ছা বক্তব্যে জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত বলেন, একজন প্রকাশ হিসেবে নতুন লেখক তৈরিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন মফিদুল হক। এছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক আখতারুজ্জামান, শিশু একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন, শিশু সাহিত্যিক আহমেদ মাযহার, লেখক মোশতাক আহমেদ প্রমুখ। ‘ঢাকায় গেরিলাযুদ্ধ ১৯৭১’ বইয়ের প্রকাশনা ॥ এশিয়াটিক সোসাইটির একাডেমি ও গবেষণা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ঢাকার ৪০০ বছর উদযাপন কর্মসূচীর আওতায় প্রকাশিত হলো ‘ঢাকায় গেরিলাযুদ্ধ ১৯৭১’। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত বইটির প্রধান সম্পাদক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ। তাঁর সঙ্গে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। এছাড়া সম্পাদনা পরিষদে ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. এ এফ সালাহ্্উদ্দীন আহমদ ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। মঙ্গলবার বিকেলে এশিয়াটিক সোসাইটির মিলনায়তনে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব ও বইটির ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রকাশিত গ্রন্থটিতে রয়েছে ঢাকার ১৭ জন গেরিলাযোদ্ধার সাক্ষাতকার। সাক্ষাতকারের মধ্য দিয়ে গেরিলাযুদ্ধের বর্ণনা করেছেন এসব গেরিলাযোদ্ধা। পাশাপাশি বেশ কিছু ঐতিহাসিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। আছে গেরিলা যুদ্ধের ম্যাপ। বইটিতে যাঁদের সাক্ষাতকার লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তাঁরা হলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, আবুল সালেহ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান বাদল, হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক, সৈয়দ মাহবুব আলী, রাইসুল ইসলাম আসাদ, সাদেক হোসেন খোকা, মাসুদ সাদেক চুল্লু, ফতেহ আলী চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সৈয়দ আবুল বারক আলভী, আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন, নজরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম স্বপন। এসব গেরিলাযোদ্ধার বয়ানে সাজানো হয়েছে বইটি। অনুষ্ঠানে ওইসব গেরিলাযোদ্ধাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সম্মাননা জানান হয়। পরে তারা বইটির নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম গোলাম রব্বানী। সম্পাদকীয় বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। প্রধান সম্পাদকের বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী।
×