সংসদ রিপোর্টার ॥ দশম জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন আজ বুধবার বিকেল ৫টায় শুরু হচ্ছে। এটি হবে দশম জাতীয় সংসদের একাদশতম অধিবেশন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে ১৯১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন। এটি হবে দেশের ৪৫তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রীর ১০ম বাজেট। একাধারে সর্বাধিক আটবার বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন। আগামী বাজেটের আকার হতে পারে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গত ১৫ মে সংসদের এ অধিবেশন আহ্বান করেন। এ অধিবেশনেই প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে। বাজেটের ওপর দীর্ঘ আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন। এ অধিবেশন হবে দীর্ঘতম। অধিবেশন উপলক্ষে সংসদের চারদিকে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
অধিবেশন শুরুর আগে আজ বিকেলে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হবে কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠক। এ বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে অধিবেশনের কার্যক্রম ও কত কার্যদিবস চলবে এ অধিবেশন। বাজেট পেশ ছাড়াও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হবে এ অধিবেশনে। সম্প্রতি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের মৃত্যুতে আজ অধিবেশনের শুরুটা হবে সংক্ষিপ্ত। কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী চলতি সংসদের কোন সংসদ সদস্যর মৃত্যু হলে প্রথম দিন শোক প্রস্তাব গ্রহণ এবং তা নিয়ে আলোচনা ছাড়া অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। আজ প্রথম দিন শোক প্রস্তাব গ্রহণ ছাড়াও স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকারের অনুপস্থিতিতে সংসদ পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের সভাপতিম-লীর সদস্য নির্বাচন করা হবে।
গত কয়েকবারের মতো এবারও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার সময় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখানো হবে। এবার নতুন করে যুক্ত হচ্ছে সাত মিনিটের এক ভিডিওচিত্র, সেখানে সরকারের সামগ্রিক সাফল্য তুলে ধরা হবে। বাজেট উপস্থাপনার আগে এ ভিডিওচিত্র সংসদকক্ষে দেখানোর ব্যবস্থা করতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রবিবার সংসদ সচিবালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেট বক্তৃতা, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, প্রজাতন্ত্রের সরকারী হিসাব, সংযুক্ত তহবিলপ্রাপ্তি, মঞ্জুরি ও বরাদ্দের দাবিসমূহ (উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন), বিস্তারিত বাজেট (উন্নয়ন), নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৪০টি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম, শিশুদের বাজেট ভাবনা, মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি, মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা হালিচিত্র-২০১৬ সংসদে পেশ করা হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রণীত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলী ২০১৫-১৬ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।
বাজেট সংসদে উপস্থাপনের আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন নেয়া হবে। প্রথা অনুযায়ী ওই দিন মন্ত্রিসভার বৈঠক সংসদ ভবনেই হওয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর প্রস্তাবিত বাজেটটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ওই সময় সংসদ ভবনে থাকার কথা রয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী তাঁর সংসদকক্ষে ‘রাষ্ট্রপতির বক্সে’ বসে বাজেট উপস্থাপন দেখার কথা রয়েছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে ধ্বংসাত্মক ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা- হতে বিরত থেকে সরকারের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ সমর্থন জানাতে বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রায় সমাপ্য চলতি অর্থবছর কোন রকম রাজনৈতিক বৈরী পরিস্থিতির মুখে পড়েনি। এ সময়ে রেকর্ড পরিমাণ রিজার্ভ, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জিডিপি অর্জন ও মুদ্রাস্ফীতির নিম্ন হারের মাধ্যমে অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে।
জানা গেছে, এ প্রেক্ষাপটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করবেন। তিনি ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছেন যে, আগামী বাজেটের আকার হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এতে কিছু মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের বিধান এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বর্ধিত বরাদ্দ থাকবে। পরবর্তী বাজেটে দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যের অনুসরণে অন্যান্য বিশেষ দিকও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আসন্ন বাজেটে দেশে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব থাকছে। এ বাজেটে সরকার যাতে অধিক অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারে এবং বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের বেশি না হয় সেজন্য নতুন মূল্য সংযোজন আইন ও কাস্টমস আইন চালু এবং রাজস্ব বোর্ডের প্রধান প্রধান কর্মকা- অটোমেশনের প্রস্তাব থাকতে পারে। এতে সম্ভাব্য করদাতাদের করের আওতায় এনে কর পরিধি বাড়ানোর কৌশল থাকবে। বর্তমানে ১৭ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে প্রায় ১২ লাখ আয়কর বিবরণী দাখিল করেন। আগামী চার বছরে সক্রিয় এ করদাতা ৩০ লাখে উন্নীতের পরিকল্পনার কথাও বাজেটে তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখা থেকে জানা গেছে, এ অধিবেশনে নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে মোট ২০টি বিল পাসের অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে পুরাতন বিল রয়েছে ১৮টি আর নতুন বিল হচ্ছে দুটি। দুটি নতুন বিল হচ্ছে রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) বিল-২০১৬ এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল বিল-২০১৬। এছাড়া অধিবেশন চলাকালে আরও দুটি নতুন বিল জমা পড়তে পারে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: