ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিমত ॥ উপকূলবাসীর গর্ব নোবিপ্রবি

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১ জুন ২০১৬

অভিমত ॥ উপকূলবাসীর গর্ব নোবিপ্রবি

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীতে প্রকৃতি ও জনপদের মাঝে যে বিপুল ও অমিত সম্ভাবনা লুক্কায়িত রয়েছে তার পরিপূর্ণ বিকাশ কেবল আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল সৃষ্টির মাধ্যমেই সম্ভব। বস্তুত এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ২০০১ সালে নোয়াখালীতে একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং যার আলোকে ঐ বছরের ৫ জুলাই সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১’ জারি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২২ জুন, ২০০৬। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রাগ্রসর বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও আধুনিক জ্ঞানচর্চা; বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে, পঠন-পাঠন ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। দক্ষিণ বাংলার অবহেলিত এই উপকূলীয় অঞ্চলের জীবনধারায় নতুন গতিবেগ সঞ্চার করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। একশ’ একর ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত নোবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন তিনটি ফ্যাকাল্টি, দুটি ইনস্টিটিউট ও ১৭টি বিভাগ রয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার দেশসেরা মেধাবী শিক্ষার্থীর পাঠদানে নিয়োজিত অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ১৬০ শিক্ষক। সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মহলের চেষ্টায় ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তথা অবকাঠামোগতভাবে উন্নত, একাডেমিকভাবে আধুনিক ও গবেষণাবান্ধব করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন দক্ষ, সৎ একাডেমিশিয়ান ও সর্বোপরি নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক উপাচার্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ, একজন উপাচার্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণপুরুষ যার সুদক্ষ নেতৃত্বে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে চলে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তেমনি এক প্রবাদপ্রতিম উপাচার্য হলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান। তিনি একাধারে প্রথিতযশা শিক্ষাব্যক্তিত্ব, মিডিয়া মুখ, কলাম লেখক ও গবেষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এডুকেশনাল এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং আইইআর থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ডিপ্লোমাসহ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে শিক্ষা প্রশাসনে এমএড সম্পন্ন করেন। তিনি ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর ডব্লিউ জে মর্গানের অধীনে যথাসময়ের আগে কৃতিত্বের সঙ্গে পিএইচডি (২০০৫) সম্পন্ন করেন। এবং ২০০৪ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। ড. অহিদুজ্জামান বিশ্বাস করেন কাজে। অফুরন্ত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ শক্তিমান মানুষটির আজন্ম ইচ্ছা এ দেশটিকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা রূপে গড়ে তোলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছেন। সে বিশাল কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবেই নোবিপ্রবির গুরু দায়ভার নিয়ে ড. অহিদুজ্জামান গত ২ জুন ২০১৫ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি একটি স্থবির, বিশৃঙ্খল, কথায় কথায় তালাবদ্ধ করার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত করে নোবিপ্রবিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আসছেন। যোগদান করার পরই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন পাঁচটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এবং একটি অনুষদ চালু করেন তিনি। নতুন বিভাগসমূহ হলো- (১) বাংলাদেশ এ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগ (২) ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ এবং (৩) স্ট্যাটিসটিক্স বিভাগ। ইনস্টিটিউটসমূহ হলো-(১) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সেস (আইআইএস) এবং (২) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি)। নতুন অনুষদ হলো- সোশ্যাল সায়েন্স এ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নোবিপ্রবিতে উপাচার্যের একান্ত চেষ্টায় ১২ নবেম্বর ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ এ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ’ বিভাগের দ্বার উন্মোচিত হয়। শুধু নতুন কোন বিভাগ বা ইনস্টিটিউট খোলা নয়, তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাডেমিক মানোন্নয়নে পৃথিবীর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গেও এর শিক্ষা সমন্বয় কার্যক্রম চালু করেছেন। নোবিপ্রবির একাডেমিক কাজে গতিশীলতা বাড়াতে উপাচার্য সম্প্রতি পিএইচডিধারী বিজ্ঞানী ও গবেষণায় অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত স্কলারদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুম, সেমিনার রুম, রিডিং রুম, ইন্টারনেট সুবিধা, পরিবহন সুবিধা, নতুন হল নির্মাণ ও ল্যাব ফ্যাসিলিটি বৃদ্ধিসহ নানা উন্নয়নমুখী কর্মকা- পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একনেকে ২৩৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। এর আওতায় রয়েছে ১১তলাবিশিষ্ট হাউস টিউটর ও প্রভোস্ট কোয়ার্টার নির্মাণ, ১০ তলাবিশিষ্ট সুবিশাল ও অত্যাধুনিক নতুন একাডেমিক কাম ল্যাব ভবন নির্মাণ, ১০ তলাবিশিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টার, ১০ তলাবিশিষ্ট একটি কর্মচারী কোয়ার্টার নির্মাণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপেয় পানি সরবরাহে কেন্দ্রীয় পানি সরবরাহ কমপ্লেক্স ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, মেডিক্যাল সেন্টার ও সুদৃশ্য মসজিদ নির্মাণ। একটি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নোবিপ্রবিকে গড়ে তুলতে তিনি বিশদ উন্নয়নবান্ধব প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। নোবিপ্রবি আঙ্গিনায় প্রবেশ করলেই এর দৃশ্যমান রূপ ধরা পড়বে। ইতোমধ্যে ছাত্রীদের পাঁচ তলাবিশিষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নির্মাণ কাজ বিশ শতাংশ শেষ হয়েছে। একটা উন্নত আধুনিক গ্রন্থাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে চারতলা বিশিষ্ট লাইব্রেরী ভবনের নিচ তলার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। অবকাঠামোগত ও একাডেমিক কার্যক্রমের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। আরও কিছু ভবিষ্যত কর্মসূচী ও প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা গবেষণা ইনস্টিটিউট।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরেই ৮৭৫ একর জায়গায় এ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। এর আওতায় একটি পরিবেশবান্ধব ও উন্নতমানের ‘টুরিস্ট জোন’ ও ‘ভূ-ইকোনমিক’ জোন গড়ে তোলা হবে। এখানে বিশাল এলাকাজুড়ে ইকোপার্ক থাকবে। বিদেশী টুরিস্ট ও স্কলাররা আসবে। এছাড়া এতে ১২৫ একর জায়গাজুড়ে সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বন ও সাফারি পার্ক। ইনস্টিটিউট থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে একটি অত্যাধুনিক জেটি নির্মাণ করা হবে। এতে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ গঠনের যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়নে এ ইনস্টিটিউট অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এটি হবে বিশ্বে প্রথম কোন একটি একক ইনস্টিটিউট যেখানে সমুদ্র বিজ্ঞান, সামুদ্রিক সম্পদ, ডেল্টা গঠন, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, এনভায়রনমেন্টাল ইকোলজি এবং মহাকাশ গবেষণা। বলা যায় একাডেমিক ও অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনয়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন।
×