ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী

একজন ‘কমিউনিস্ট মীরজাফরের’ আত্মসাফাই

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১ জুন ২০১৬

একজন ‘কমিউনিস্ট মীরজাফরের’ আত্মসাফাই

মীরজাফর কি শুধু বাংলাদেশেই জন্মায়? এর জবাব, না, সব দেশেই জন্মায়। গত শতকের শেষ দিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নেও দেখা দিয়েছিলেন। পাঠক, সাবেক এবং স্বাধীন সোভিয়েট ইউনিয়নের শেষ কম্যুনিস্ট নেতা মিখাইল গর্বাচভ সম্পর্কে এই মন্তব্যটি আমার নয়। মন্তব্যটি একজন ব্রিটিশ সাংবাদিকের। তিনি মন্তব্যটি করেছেন গর্বাচেভের আত্মজীবনীর শেষ খ-ের প্রকাশ উপলক্ষ করে। এই খ-ের নাম ‘দি নিউ রাশিয়া’। অবশ্য ‘দি নিউ রাশিয়াই’ যে গর্বাচেভের আত্মজীবনীর শেষ খ- তা তিনি বলেননি। বেঁচে থাকলে হয়তো আরও এক খ- লিখবেন। তাতে তিনি হয়তো বিশ্বের প্রথম কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ধ্বংস করার ব্যাপারে তার কোন ভূমিকা ছিল না বলে আরও আত্মসাফাইয়ের চেষ্টা করবেন। তাতে সফল হবেন কিনা সন্দেহ। যেমন সফল হননি তার ‘নিউ রাশিয়া’ গ্রন্থেও। এই বইটির রিভ্যুয়ু করতে গিয়ে এক ব্রিটিশ সমালোচক লিখেছেন, জার্মানদের কাছে তিনি এক মহানায়ক। কারণ, বার্লিন ওয়াল ভেঙে ফেলে দুই জার্মানির বিভক্তির তিনিই অবসান ঘটিয়েছিলেন। আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে তিনি নয়নের মণি। কারণ, তাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সুপার পাওয়ার সোভিয়েট ইউনিয়নকে ধ্বংস করার কাজে তার ভূমিকা ছিল সর্বাধিক। সাদ্দাম হোসেনের ইরাকের কাছে তিনি একজন বিশ্বাসঘাতক। ইরাককে সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন যেসব সমরাস্ত্র দিয়েছিল, তার একটি তালিকা তিনি কিছু ডলারের বিনিময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের (সিনিয়র) হাতে তুলে দিয়েছিলেন। অথচ সাদ্দাম হোসেনের ইরাক ছিল সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের মিত্র। গর্বাচভ তার নিজের দেশ রাশিয়ার মানুষের কাছেও এখন পরিচিত একজন মীরজাফর হিসেবে। যিনি শুধু সোভিয়েট ইউনিয়নকে ধ্বংস করেননি, তার জনগণকে নিদারুণ দুঃখ কষ্ট ও নির্যাতনের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। সোভিয়েট ইউনিয়নের অস্তিত্ব ও আত্মমর্যাদা বিক্রি করে দিয়েছিলেন তার শত্রু পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে। আমি “দি নিউ রাশিয়ার” ইংরেজি অনুবাদটি পড়েছি। বইটিকে আত্মজীবনী না বলে আত্মসাফাই বললে অত্যুক্তি করা হয় না। তার আত্মজীবনীর আগের খ- দু’টিতেও তিনি সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নকে ধ্বংস ও বিভক্ত করার ব্যাপারে তার ভূমিকাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন এবং প্রমাণ করতে চেয়েছেন হবাবৎ রঃ ধিং সু ভধঁষঃ (এর জন্য আমি দায়ী নই)। চেরনোবিলের আণবিক কেন্দ্রের দুর্ঘটনা, আফগানিস্তানে লালফৌজের সামরিক বিপর্যয়, বার্লিন ওয়াল ভেঙ্গে বিনা শর্তে জার্মানির পুনরেত্রিকরণে রাজি হওয়া, মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের আকস্মিকভাবে পরিত্যাগ ইত্যাদি ঘটনাকে তার নিজস্ব প্রেক্ষিতে আলোচনা না করে তিনি এমনভাবে তুলে ধরেছেন যাতে মনে হতে পারে এসব ঘটনার জন্যই সোভিয়েট ইউনিয়ন ও কম্যুনিজমের বিপর্যয় ঘটেছে। পরবর্তীকালে কয়েকজন নিরপেক্ষ পশ্চিমা পর্যবেক্ষক অভিমত প্রকাশ করেছেন, গর্বাচভের যুক্তিগুলো সঠিক নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইউরোপের চাইতেও বেশি বিধ্বস্ত হয়েছিল সোভিয়েট ইউনিয়ন। ইউরোপ মার্কিন মার্শাল প্লান অনুযায়ী কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার নিয়ে পুনর্গঠিত হয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েট ইউনিয়ন মার্শাল প্লানের এক কানাকড়িও গ্রহণ করেনি। নিজস্ব শক্তি ও সম্পদ দ্বারা সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন শুধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলেনি, সামরিক শক্তিতে বিশ্বের দ্বিতীয় সুপার পাওয়ারে পরিণত হয়েছিল। এই সুপার পাওয়ার কেন চেরনোবিলের আকস্মিক বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলাতে পারেনি; তাকে পশ্চিমা সাহায্যের মুখাপেক্ষী হতে হয়েছিল? এখন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদেরই কেউ কেউ স্পষ্ট ভাষায় বলছেন, চেরনোবিলের আণবিক কেন্দ্রের বিস্ফোরণের ভয়াবহ ধাক্কা সামলাতে সোভিয়েট ইউনিয়নের জন্য পশ্চিমা আর্থিক ও কারিগরি সাহায্যের প্রয়োজন ছিল; কিন্তু গর্বাচভ এই সুযোগে মার্কিন সহায়তায় সোভিয়েট ইউনিয়নের একক শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট হওয়ার লোভে তার প্রশাসনে সিআইএ’র অনুপ্রবেশের ব্যবস্থা করে দেন। সিআইএ’র এজেন্টরা লালফৌজের ভেতরেও শক্ত ঘাঁটি গাড়ে। সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়কে সম্মুখ সমরে পরাস্ত করা যাবে না বুঝেই সোভিয়েটের কম্যুনিস্ট নেতৃত্বে ভাঙ্গন ধরানো ও কুইসলিং তৈরির ষড়যন্ত্র করে সিআইএ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্রপক্ষের সেনাপতি জেনারেল আইসেন হাওয়ার এবং সোভিয়েট সেনাপতি মার্শাল জুকভ এক সঙ্গে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে পরস্পরের বন্ধু হন এবং জুকভকে আইসেন হাওয়ার হাত করে ফেলেন। পরে আইসেন হাওয়ার যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, জুকভ তখন রেড আর্মির প্রধান। তার মাধ্যমে ক্রুশভের বিরুদ্ধে ক্যু ঘটানোর চেষ্টা করে সিআইএ। ক্রুশভ তা ব্যর্থ করে দেন এবং জুকভকে বরখাস্ত করে আইসেন হাওয়ারকে এই মর্মে বার্তা পাঠান, নববর্ষের উপহার হিসেবে মার্শাল জুকভকে তিনি আমেরিকায় পাঠিয়ে দিতে পারেন। অবশ্য ক্রুশভকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য সিআইএ’র দ্বিতীয় প্রচেষ্টা সফল হয় এবং গর্বাচভকে ক্ষমতায় বসানোর পথ প্রশস্ত করা হয়। গর্বাচভ সোভিয়েট ইউনিয়নে ক্ষমতায় আসার আগেই যে পশ্চিমা শক্তি তাকে রিক্রুট করেছিল তার প্রমাণ, একটি সোভিয়েট বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে তিনি প্রথম ব্রিটেনে আসেন এবং তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী (কট্টর কমিউনিস্ট বিরোধী) মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে বৈঠক করেন। মার্গারেট থ্যাচার বলেন, “ঐব রং ঃযব সধহ রিঃয যিড়স বি পড়ঁষফ ফড় নঁংরহবংং. (এই সেই ব্যক্তি, যার সঙ্গে আমরা সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি)। গর্বাচভ ক্ষমতায় এসে মার্গারেট থ্যাচারের কথাটাই সত্য প্রমাণ করেছিলেন। আফগানিস্তানে লালফৌজের সামরিক বিপর্যয় ঘটেছিল এ কথা সত্য। এই যুদ্ধে নাটের গুরু ছিল আমেরিকা। তারা সমাজতান্ত্রিক নজিউল্লা সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য মুজাহিদ, তালেবান ইত্যাদি ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে তোলে। এই সন্ত্রাসই আজ বিশ্বময় ছড়িয়েছে এবং আমেরিকার জন্যও ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নজিউল্লা সরকার অনগ্রসর আফগানিস্তানকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছিলেন এবং বিপুলভাবে সফলও হচ্ছিলেন। আমেরিকা ইসলাম রক্ষার নামে তালিবানদের যুদ্ধে নামিয়ে আফগান জনগণের এক বড় অংশকে প্রভাবিত করে এবং তারা তালেবানদের সমর্থন দেয়। আফগান-যুদ্ধ সোভিয়েটের আর্থিক সামর্থ্যরে উপর অবশ্যই চাপ সৃষ্টি করছিল। এই অবস্থায় নজিউল্লা সরকারকে হঠাৎ নেকড়ের মুখে ফেলে না দিয়ে গর্বাচভ আফগানিস্তান থেকে রেড আর্মি সম্পূর্ণ সরিয়ে না এনে নজিউল্লা সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য রেড আর্মির একটা টোকেন অংশ সে দেশে মোতায়েন রাখতে পারতেন। নজিউল্লা সরকারের সেনাবাহিনী তালেবানদের ঠেকানোর কাজে সম্পূর্ণ সক্ষম হলে তাদের প্রত্যাহার করতে পারতেন। যে নীতি বর্তমানে আমেরিকা ইরাকের ক্ষেত্রে অনুসরণ করছে। আফগান যুদ্ধের অনেক নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের মতে, গর্বাচভ আফগানিস্তানের নজিউল্লা সরকারকে হঠাৎ এবানডন বা পরিত্যাগ না করে সেই সরকারকে নিরাপত্তাদানের জন্য পর্যায়ক্রমে রেড আর্মি সরিয়ে আনার নীতি গ্রহণ করতে পারতেন। দুষ্টবুদ্ধিবশত তিনি তা করেননি। আমেরিকার সঙ্গে গোপন ডিল অনুযায়ী ‘সৈন্যদের বেতনদানে আর্থিক সঙ্কটের’ অজুহাত দেখিয়ে রেড আর্মিকে দ্রুত সরিয়ে এনে আফগানিস্তানকে তালেবানদের হাতে তুলে দেন এবং মার্কিন সহায়তায় তালেবানরা সেখানে সরকার গঠন করেছিল। গর্বাচভ একই ধরনের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন ইরাকের মিত্র সাদ্দাম হোসেন সরকারের সঙ্গে। সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মৈত্রীর জন্যই আমেরিকা দীর্ঘসময় ইরাক আক্রমণে সাহসী হয়নি। তাদের আরও ভয় ছিল রাশিয়ার সমরাস্ত্রে সজ্জিত ইরাকের রিপাবলিকান গার্ডের সঙ্গে যুদ্ধে ন্যাটো বা পশ্চিমা শক্তি সহজে পেয়ে উঠবে না। কিন্তু গর্বাচভ মিত্র ইরাককে পরিত্যাগ করেন এবং সাদ্দাম হোসেনের কাছে যে সব সোভিয়েট অস্ত্র আছে তার একটি তালিকা তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়রের হাতে তুলে দেন। বিনিময়ে বুশ একটি মোটা অঙ্কের ডলারের চেক গর্বাচভের হাতে ধরিয়ে দেন। এই অস্ত্রের তালিকা এবং ডলারের চেক বিনিময়ের ছবি মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিলো। জার্মানির পুনরেত্রিকরণের ব্যাপারে গর্বাচভের রাজি হওয়া বিশ্বময় প্রশংসিত হয়েছে, কিন্তু তার পদ্ধতিটা নয়। তিনি এই ব্যাপারে তৎকালীন কম্যুনিস্ট পূর্ব জার্মানির সরকার এ কম্যুনিস্ট পার্টির পরামর্শ গ্রহণের কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। তিনি রাতারাতি বার্লিন ওয়াল ভেঙ্গেছেন। একত্রীকরণের আগে মিলিত জার্মানিতে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাননি। পশ্চিম জার্মানি থেকে পশ্চিমা সামরিক ঘাঁটি ও সৈন্য অপসারণের দাবি করেননি। দেশটিকে বিনা শর্তে পশ্চিমা সুপার পাওয়ারের হাতে তুলে দিয়েছেন। আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার দোষ চাপিয়েছেন কমিউনিজমের ব্যর্থতার উপর। এখন এটা প্রমাণিত, তার ইচ্ছা ছিল কমিউনিজম ব্যর্থ প্রমাণিত হোক, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাক। তিনি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী বলয়ের অন্তর্ভুক্ত একটি নতুন রাশিয়া গঠন করে তাদের সমর্থনে দেশটির প্রেসিডেন্ট হয়ে পার্টি ও পলিটব্যুরোর তোয়াক্কা না করে সর্বময় ক্ষমতার লাঠি ঘোরাবেন। গর্বাচভ তার স্মৃতিকথার সাম্প্রতিক খ-ে নিজের ব্যর্থতা ও বিচ্যুতিগুলো স্বীকার করেননি। তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তিনি যে পেরেস্ত্রয়কা নামের সংস্কার নীতি গ্রহণ করেছিলেন তার উদ্দেশ্য ছিল সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নকে একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র থেকে একটি সোস্যাল ডেমোক্রেসিতে পরিণত করা। তার সমালোচকেরা এই যুক্তি মেনে নেননি। তারা বলেছেন, ইউরোপে সোস্যাল ডেমোক্রেসির অভ্যুদয় এবং কতো দ্রুত তারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তা তিনি দেখেছেন। দেখেছেন, ত্রিশের জার্মানে ও ইতালিতে ন্যাশনাল সোস্যালিজম কিভাবে বর্বর ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়। সুতরাং কমিউনিজম থেকে সোস্যাল ডেমোক্রেসিতে রাশিয়াকে রূপান্তরের চেষ্টার যুক্তি তোলা একটা প্রচ- ধাপ্পা। তার পেরেস্ত্রয়কার ধাক্কায় যে সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেল এটাও তিনি স্বীকার করতে চাননি। দোষ চাপিয়েছেন, যে স্টেটগুলো সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে গেছে সে সব স্টেটের জনগণের উপর। লিখেছেন, “জনগণের বন্ধুত্ব ও সংহতির ব্যাপারে আমরা একটু বেশি আশা ও আস্থা পোষণ করতাম। সেই আশা ও আস্থা টেকেনি।” এখানেও সোভিয়েট ইউনিয়নের ভাঙনের জন্য জনগণের উপর নির্লজ্জভাবে দোষারোপ করেছেন। নিজের ব্যর্থতা ও মার্কিন চক্রান্তের ব্যাপারটা আড়াল করতে চেয়েছেন! এই মার্কিন চক্রান্ত বর্তমান ক্রিমিয়া ও ইউক্রেন সঙ্কটে কি প্রকট হয়ে ওঠেনি? রাশিয়ার বর্তমান অবস্থার জন্য গর্বাচভ সব দোষ চাপিয়েছেন পরলোকগত ইয়ালত্সিনের উপর। মার্কিন সহায়তায় একটা ক্যু ঘটিয়ে ইয়ালতসিন তার হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলেন। গর্বাচভ আগে বুঝতে পারেননি, বাংলাদেশে পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফরকে ব্যবহার করার পর ইংরেজরা যেমন তাকে পরিত্যাগ করেছিল, তেমনি গত শতকের শেষদিকে সোভিয়েট ইউনিয়নকে ধ্বংস করার জন্য পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা তাকে ব্যবহার করেছে। কিন্তু তলে তলে ইয়ালত্সিনকে তৈরি করেছে দুর্বল ও বিভক্ত রাশিয়ায় তাদের প্রকৃত তাঁবেদার একটি সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। বাংলাদেশে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা যেমন দু’শ’ বছরের জন্য সারা উপমহাদেশে বিদেশী শাসন ডেকে এনেছিল, এ যুগে গর্বাচভের চক্রান্তের ও সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণের নীতি শুধু সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের ক্ষতি করেনি, সারা বিশ্বে সতেরো শতকের ভালগার ও বর্বর ক্যাপিটলিজমের পুনরুভ্যুদয় ঘটানোর কাজে সহায়তা জুগিয়েছে। যার থাবা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত থাকতে পারেনি। আজ স্থানাভাব, বাংলাদেশে গর্বাচভ পন্থীদের কার্যকলাপ কিভাবে দেশটির গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে বিপথগামী করতে চেয়েছিল সে সম্পর্কে বারান্তরে আলোচনার ইচ্ছে রইলো। [লন্ডন ৩১ মে, মঙ্গলবার, ২০১৬]
×