ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাশেদ আহমেদ শিপলু

প্রজন্মের উদীয়মান পোশাক ডিজাইনার

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৩১ মে ২০১৬

প্রজন্মের উদীয়মান পোশাক ডিজাইনার

ইফফাত-ই-ফারিয়া প্রজন্মের একজন উদীয়মান পোশাক ডিজাইনার। ১৯৯৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন এ কন্যা। অত্যন্ত স্বাধীনচেতা এ নারী ই-কমার্স নিয়ে অনলাইনে পড়াশোনা করেন। স্বপ্ন দেখেন নতুন কিছু করার। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণেই ই-কমার্স নিয়ে ফারিয়া আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রথম জীবনে তাঁর রান্নার প্রতি ঝোঁক ছিল কিন্তু পরবর্তীতে বেছে নেন বিয়ের পোশাক। এসব পোশাক তৈরির জন্য একটি কারখানা স্থাপন করেছেন। সেখানে বিয়ের সব রকমারি পোশাক করা হয়। কারখানায় জামার মাপ ও কাটার জন্য রয়েছে সুদক্ষ কর্মী। এ্যাম্ব্রয়ডারি ও নকশীকাঁথার কাজগুলোও করা হয় সুনিপুণভাবে। এ মুহূর্তে মোট আটজন এ ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। স্বাধীনচেতা এ তরুণী পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের কেমিকৌশল বিভাগে। প্রথম দিকে তাঁর কাজটি সহজ ছিল না। চারদিকে অসংখ্যা প্রতিবন্ধকতা ও সমালোচনা। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র নন ফারিয়া। নিজের ইচ্ছা শক্তিতেই এগিয়ে গিয়েছেন সামনের পানে। ছাত্র অবস্থাই সবাই যখন পড়াশোনা শেষ করে একটি ভাল কোম্পানিতে চাকরি খুঁজতেন তখন ফারিয়া হেঁটেছেন স্রোতের বিপরীতে। কাজটি খুব সহজ ছিল না। চারদিকে ব্যাপক সমালোচনা। একমাত্র বাবা ছাড়া তখন কারও সহযোগিতা পাননি। ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রথম ব্যবসার সূচনা। তার এই সূচনাও বেশ ইন্টারেস্টিং। এডমিশনের পরে ফারিয়া দেখে তার হাতে প্রায় ৬ মাস সময়। এ সময়টা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে একটি বিজনেস এডমিনিস্টেশনের সর্ট কোর্স করেন ফারিয়া। তখন ই-কমার্স নিয়ে তার ব্যাপক আগ্রহ জন্মায়। বিয়ের পোশাক নিয়ে ফরিয়ার একটি আক্ষেপ ছিল। বাংলাদেশীদের অধিকাংশ নারী বিয়ের শপিং করতে ভারত কিংবা পাকিস্তানের পোশাকের বিষয়ে আগ্রহী। এ ট্রেন্ড ফারিয়াকে আহত করত। ফারিয়ার ভাবনায় তখন এই বিদেশগামী নারীদের নিজের তৈরি বিয়ের পোশাক দ্বারা আকৃষ্ট করা। এ উদ্দেশ্যে একটি অনলাইন পেজ খোলেন ফারিয়া। পোশাক নিয়ে অনলাইনে পেজ খোলার পাশাপাশি ফারিয়া রান্নাবিষয়ক আরেকটি পেজ খোলেন। এ দুটি পেজ খোলার উদ্দেশ্য রান্না ও পোশাক দুটি বিষয়ের জনপ্রিয়তা যাচাই করা। শুরুতে মাত্র ৬০০০ টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন ফারিয়া। বর্তমানে ইসলামাবাদে তাঁর প্রতিষ্ঠানের একটি শাখা আছে। এজেন্টের মাধ্যমে সেখান হতে কাপড় আমদানি করেন ফারিয়া। ফারিয়ার ইচ্ছা দুই বিষয়ে স্নাতক করা। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ফ্যাশন ডিজাইন এরপর বিজনেস। বর্তমানে তার আয় মন্দ নয়। ক্লায়েন্ট ফিডব্যাকও খারাপ নয়। আশি শতাংশ ক্লায়েন্ট তার কাজে সন্তুষ্ট। যৎসামান্য যা ভুল হয় তা আবার শুধরে নেন ফারিয়া। শৈশব হতে নানা বিষয়ে আগ্রহ ছিল এ তরুণীর। নাচ-কবিতা ড্রয়িং-গান সবকটি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন ফারিয়া। নতুন কুঁড়ি, শিশু একাডেমি, শিল্পকলা, জেলা-বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায় অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি। ২০১২ সালে গ্রামীণফোন আই জিনিয়াস প্রতিযোগিতায় রাজশাহী বিভাগে রানার্স আপ হন। সামাজিক নানা সমস্যা নিয়েও চিন্তিত এ তরুণী। নতুন প্রজন্মের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে বেশকটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ইউনিসেফ, জাস্টিস ফর ওম্যান ফাউন্ডেশন. সেভ দ্য চিল্ডেন্স অস্ট্রেলিয়া, ন্যাশনাল চিল্ডেন্স টাস্ক ফোর্স, লাইটার ফাউন্ডেশন তাদের মধ্যে অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে চান তরুণ প্রজন্মকে।
×