২০১২ সালের শুরুতে এ্যাপল ইনকর্পোরেটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা টিম কুককে এ্যাপলের ১০ লাখ শেয়ার পুরস্কার হিসেবে প্রদান করে। এই সকল শেয়ার ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত কার্যকর হবে। ২০১২ সাল পর্যন্ত এ্যাপল টিম কুককে প্রায় ৩৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে যা তাকে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নির্বাহীদের মধ্যে শীর্ষে নিয়ে গেছে। স্টিভ জবসের পর এ্যাপলের কাণ্ডারি হন টিম কুক। বেঁচে থাকতে জবস ভরসা করে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছিলেন কুকের হাতে। বন্ধুর বিশ্বাস রেখেছেন টিম কুক। এ্যাপলকে ধ্যানজ্ঞান করে পথ চলছেন। যদিও নিন্দুকরা বলেন, জবসের অনুপস্থিতিতে এ্যাপলকে ডুবিয়েছেন কুক। এসব কথায় কান না দিয়ে এগিয়ে চলছেন কুক। তার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। বেশ কিছুদিন আগে এ্যাপলের প্রধান নির্বাহী, টিম কুক যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তার সেই বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
হ্যালো জর্জ ওয়াশিংটন! অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রেসিডেন্ট কেনাপ, এ্যালেক্স, ট্রাস্টি, বিভিন্ন অনুষদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, আমার সম্মানিত সহকর্মীবৃন্দকে এবং বিশেষ করে ২০১৫ সমাবর্তনের সকল ছাত্রছাত্রীকে। ২০১৫ সালের স্নাতক, তোমাদের সবার জন্য রইল অভিনন্দন! অভিনন্দন তোমাদের বাবা-মা ও বন্ধুদেরও। তোমরা জানো, এটা এক বিস্ময়কর জায়গা। এর নাম ওয়াশিংটন, যাকে বলা হয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রস্থল। এটা সেই বিখ্যাত জায়গা, যেখানে মার্টিন লুথার কিং গণতন্ত্রের জন্য মার্কিনীদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। এটা সেই জায়গা, যেখানে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান আমাদের নিজেদের ভেতরের শক্তির ওপর বিশ্বাস রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রায় ২০ বছর পর আমি ওয়াশিংটন এলাম। এখানে একজন মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, যিনি আমার সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি স্টিভ জবস। বেশিরভাগ মানুষই ভুলে যায় ১৯৯৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সালের প্রথম অবধি এ্যাপল কী টালমাটাল অবস্থাতেই না ছিল! যাকে বলে দিশাহারা, ভাসমান। কিন্তু স্টিভ তখনও ভাবতেন, এ্যাপল আবার জগদ্বিখ্যাত হবে। আর এ রকম সময়েই তিনি আমার সাহায্য চেয়েছিলেন। আমি পড়াশোনা করেছি প্রকৌশলে এবং একটা এমবিএ ডিগীও নিয়েছি। এখন আমি জনা চল্লিশেক প্রাণবন্ত মানুষের সামনে বসে থাকি, যারা পৃথিবীকে বদলে দেয়ার কথা বলে। তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, সেই ’৯৮ সালে ক্যারিয়ারের শুরুতে আমার অবস্থাও ছিল দিশাহারা এবং ভাসমান। তবে আমি আমাকে ভালভাবেই চিনি। আমি তখন চোখ রেখেছিলাম আমার জীবনের ধ্রুবতারার দিকে। আমি চেয়েছিলাম পৃথিবীকে বদলে দিতে। স্টিভ ছিলেন গভীর ধী-সম্পন্ন। তিনি প্রথম মিটিংয়েই আমাকে এই বলে বশীভূত করলেন যে আমরা যদি কঠোর পরিশ্রম করি এবং ভাল পণ্য তৈরি করতে পারি, তবেই পৃথিবীকে বদলানো সম্ভব। সত্যিই বিস্ময়কর, আমি তার কথায় কুপোকাত হয়ে গেলাম। চাকরিটা গ্রহণ করলাম এবং জীবনটাকে বদলে ফেললাম। তোমার মূল্যবোধই তোমার সম্পদ। ওটাই তোমার জীবনের ধ্রুবতারা। কি রাষ্ট্রে কি ব্যবসায়-সব ক্ষেত্রে তোমাদের প্রজন্মের যারা সবচেয়ে ভাল এবং সবচেয়ে সম্ভাবনাময়, তাদের নেতৃত্ব প্রয়োজন। আমরা এমনটাই চাই। এতএব, খুঁজে বের কর তোমার জীবনের ধ্রুবতারা। তার আলোয় পরিচালিত কর তোমার জীবন। তোমরা কজন এই কথাগুলো গ্রহণ করবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে! তবে তাতে আমি মন খারাপ করছি না। শহরের মানুষগুলো সন্দেহপ্রবণ, এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এখানে বেশিরভাগ মানুষের উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের চরিত্র সন্দেহবাতিকগ্রস্ত এবং তুমি যদি আরও নিবিড়ভাবে তালাশ কর, তবে দেখতে পাবে, তারা মিথ্যা বলে। সম্ভবত তুমি যে পৃথিবীতে বাস কর, তার স্বরূপটাই এ রকম। ফিরে যাই নব্বইয়ের দশকে। তখন এ্যাপল একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করত ভিন্নভাবে ভাব। এই বিজ্ঞাপনের সঙ্গে আমাদের গ্রহের বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি যেত, যারা পৃথিবীকে বদলে দিতে সারাজীবন স্পর্ধা দেখিয়েছেন। যেমন মহাত্মা গান্ধী, জ্যাক রবিনসন, মার্থা গ্রাহাম, আইনস্টাইন প্রমুখ। তাঁরা আমাদের এই বিশ্বাস দিয়ে গেছেন, যে কোন কিছু করা সম্ভব। এ্যাপলে আমার এক বন্ধু বলত, একটা সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছেÑ এ্যাপলের প্রকৌশলীদের ঘরের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া এবং জোরে জোরে বলতে থাকা ‘এটা অসম্ভব’! সমস্যা দেখা দিলে সেটার সমাধান করা প্রয়োজন। সমাধান না করাটাই বরং ওই সমস্যার প্রতি অন্যায় করা। মানুষ রোগাক্রান্ত হলে সেটা নিরাময়ের চেষ্টা করে। এ বিশ্ব চায় তোমার কর্মস্পৃহা, তোমার একাগ্রতা, তোমার ধৈর্যের প্রবহমানতা। ঝুঁকি নিতে শঙ্কিত হয়ো না। নিন্দুকদের সমালোচনা কানে তুলো না। ইতিহাস একজন ব্যক্তিকে ধারণ করে এবং মনে রেখ, সেই ব্যক্তিটা তুমিও হতে পার। সেটা বরং নিশ্চিতভাবে তোমারই হওয়া উচিত! পুনরায় অভিনন্দন জানাচ্ছি ২০১৫ সালের স্নাতক শ্রেণীকে। আমি তোমাদের সঙ্গে একটি ছবি তুলতে চাই কারণ, এটা এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্বোত্তম দৃশ্য এবং মহান বললেও ভুল বলা হবে না! সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ!
শীর্ষ সংবাদ: