ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আহমদ রফিকের ৩ গ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩১ মে ২০১৬

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আহমদ রফিকের ৩ গ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৃষ্টির ঐশ্বর্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতটাই বিস্তৃত যে এক জীবনে পুরোটা পড়া হয়ে ওঠে না। তবে কেউ কেউ হয়ে থাকেন ব্যতিক্রম। তেমনই একজন আহমদ রফিক। কবি, লেখক, গবেষক, ভাষাসৈনিকসহ বহুমাত্রিক পরিচয়ের এই মানুষটি গোটা জীবন কাটিয়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গী করে। বিশ্ব কবির সৃষ্টির বাঁকে বাঁকে খুঁজে নিয়েছেন আনন্দের আস্বাদ। অধ্যায়নের গভীরতায় কবিগুরুর জীবন ও সাহিত্যকর্মের মূল্যায়ন ও গবেষণার ভিত্তিতে লিখেছেন অনেকগুলো গ্রন্থ। সেই স্রোতধারায় এবার শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে লিখেছেন দুটি বই। সেই সঙ্গে নানা সময়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা প্রবন্ধ থেকে প্রকাশ করেছেন আরেকটি গ্রন্থ। নতুন এই তিনটি গ্রন্থ হলো ‘শিশুদের রবীন্দ্রনাথ’, ‘কিশোরদের রবীন্দ্রনাথ’ এবং ‘নির্বাচিত রবীন্দ্রনাথ’। বই তিনটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। সোমবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শন কক্ষে বই তিনটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও কবি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ ও প্রাবন্ধিক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। অনুভূতি প্রকাশ করে আহমদ রফিক বলেন, শিশু ও কিশোরদের জন্য রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক দুটি বই লিখতে আমাকে প্রচ- পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রাত্যহিক জীবনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটিয়ে এবং অন্যান্য লেখা বাদ দিয়ে দেড় মাসের মধ্যে গ্রন্থ দুটির কাজ শেষ করেছি। শিশুদের জন্য লেখা সহজ নয়। বেশ কঠিন। ওদের জন্য ভাষা, শব্দ নির্বাচন ও বাক্যগঠনে বিশেষ মনোযোগী হতে হয়, লিখতে হয় সহজ করে। এই ৮৭ বছর বয়সে এসে সহজভাবে লেখার মতো সেই কঠিন কাজটি করেছি। মূল্যায়নের ভার রইল পাঠকদের ওপর। গ্রন্থের মূল্যায়ন বিষয়ক আলোচনায় প্রাবন্ধিক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, আহমদ রফিকের তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে- আমার কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নয়। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- তিনি গোটা রবীন্দ্রনাথ পাঠ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের নানা বিষয় নিয়ে অবিরাম গবেষণা করেছেন এবং তা বই আকারে প্রকাশ করেছেন। দেশে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি বই তিনিই লিখেছেন। এমনকি দুই বাংলায়ও রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে তাঁর লেখা সবচেয়ে বেশি। এভাবেই তিনি ইতিহাসের দায় পরিশোধ করেছেন। এবার ৮৭ বছর বয়সে শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে রবীন্দ্রনাথকে উপস্থাপন করেছেন। আর শিশু-কিশোররা রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে পারলে, দেশ-জাতি ও রাজনীতি হবে উপকৃত। রবীন্দ্রনাথের জীবনের ইতিাসে আছে নানা বাঁক। শিশুদের কাছে এ বিষয়গুলো তুলে ধরা কঠিন। আহমদ রফিক যেন শিশু হয়েই যেন সেই কঠিন কাজটি করেছেন সহজ করে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ছোটদের জন্য লেখা কঠিন। আহমদ রফিক সেই কঠিন কাজটি করেছেন খুব সহজে। তাঁর রচিত শিশুদের জন্য রবীন্দ্রবিষয়ক বইটি পড়তে গিয়ে আমি নিজেই যেন আমার ছেলেবেলায় চলে গিয়েছিলাম। আমার বিশ্বাস, শিশু-কিশোরদের জীবন আনন্দময় করতে বই দুটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। রবীন্দ্রচর্চা প্রসঙ্গে বলেন, রবীন্দ্রনাথের যে বিস্তৃতি তা নিয়ে যত আলোচনা হবে ততই মঙ্গল। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে আজ অপশক্তি আঘাত হানছে। এই অস্থিরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধে রবীন্দ্রনাথ অবশ্যম্ভাবী। এ লক্ষ্যেই রবীন্দ্রচর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে। কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বাঙালী তিনবার জেগেছে। প্রথম বার উনিশ শতকে। এই শতকের বাঙালীর বুদ্ধিভিক্তিক চর্চার অন্যতম পুরুষ রবীন্দ্রনাথ। দ্বিতীয়টি হলো-বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। এ সময়ে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন আহমদ রফিক তাদের একজন। সর্বশেষ জাগরণ-১৯৭১। এ জাগরণে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আর বলেন ‘আমাদের শিশুদের মেধাবী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওইসব মেধাবী প্রজন্ম যদি বাঙালীর প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথকে না জানে তাহলে এই মেধা আমাদের কাজে আসবে না। স্বাগত বক্তব্যে মাজহারুল ইসলাম বলেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা বই আছে। কিন্তু শিশু-কিশোরদের জন্য তেমন বই নেই। আহমদ রফিক শিশুদের জন্য লিখেছেন, কিশোর জন্য আকর্ষণীয় ভাষায় রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রসাহিত্যের মতো রবীন্দ্র-জীবনও বিচিত্র। সাহিত্যের বাইরে একজীবনে কত কী করেছেন তিনি, কত দেশ ঘুরেছেন। তাই লেখক রবীন্দ্রনাথ ও মানুষ রবীন্দ্রনাথকে জানা প্রয়োজন শিশু-কিশোরদের। অথচ এ ধরনের গ্রন্থ বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত কম। সেই প্রয়োজন মেটাতেই সহজ ভাষায় আহমদ রফিক লিখেছেন ‘শিশুদের রবীন্দ্রনাথ’ ও ‘কিশোরদের রবীন্দ্রনাথ’। দুটো বইতেই রয়েছে ভিন্ন ধারায় নানা বয়সে সাহিত্য সৃষ্টিকর্মে ব্যস্ত রবীন্দ্রনাথের জীবনের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা। রয়েছে ঠাকুর পরিবারের সদস্যসহ নানা বিশিষ্টজনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এবং ঘটনার ছবি। অন্যদিকে ‘নির্বাচিত রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থটি রবীন্দ্রনাথ-বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন। গত তিন-চার দশকে বিভিন্ন উপলক্ষে রবীন্দ্রভাবনা ও রবীন্দ্রসাহিত্য সৃষ্টি সম্বন্ধে আহমদ রফিক যেসব প্রবন্ধ লিখেছেন সেগুলো থেকে বাছাই করে বিশেষ বিশেষ প্রবন্ধগুলোকে এ সংকলনের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বিষয় বিবেচনায় এগুলোর মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্বদেশভাবনা, সমাজভাবনা, পল্লী উন্নয়ন-ভাবনা ও কর্মযজ্ঞ, বিশ্বশান্তি, মানবধর্ম ও মানবহিত-ভাবনা, তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা ও চিত্রভাবনা বিষয়ক রচনা। তবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীন বাংলাদেশে রবীন্দ্র-প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিতর্কভিত্তিক প্রবন্ধটি। আরও একটি বিতর্কিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘গীতাঞ্জলি’ তথা ‘সং অফারিংস’ কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার লাভ এবং এর নেপথ্যে সক্রিয় বিচিত্র ঘটনাবলি। তাছাড়া রোমান্টিক, ভাববাদী কবি রবীন্দ্রনাথের শেষ দশকের প্রগতিবাদী চরিত্রটিও লেখক তুলে ধরেছেন গ্রন্থের শেষ প্রবন্ধটিতে। বই তিনটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য যথাক্রমে ৩০০, ৩০০ ও ৪৫০ টাকা। ‘নূপুর বেজে যায়’ ॥ সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো সাধনা আয়োজিত মাসিক নৃত্যানুষ্ঠান নূপুর বেজে যায়। এটি ছিল সাধনার মাসিক আয়োজনের ৫১তম নৃত্যানুষ্ঠান। এতে পরিবেশিত হয় মার্কিনি নৃত্যশিল্পী ক্যাথেলিন ওয়েইট্স পরিচালিত সৃজনশীল নৃত্য। এছাড়া উপস্থাপিত হয়ে নবীন বাংলাদেশী নৃত্যশিল্পীদের সমসাময়িক নৃত্য পরিবেশনা এবং কল্পতরু পরিবেশিত ভরতনাট্যম নৃত্য। নাচের পাশাপাশি সাধনার গত দুই দশকের কাজ নিয়ে দুই দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনী সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
×