ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন

গম ও ভুট্টা গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট তৈরির খসড়া আইন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩১ মে ২০১৬

গম ও ভুট্টা গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট তৈরির খসড়া আইন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গম ও ভুট্টা নিয়ে গবেষণার জন্য দিনাজপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট স্থাপনে নতুন আইনের খসড়া সরকারের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান আইন সময় উপযোগী করার লক্ষ্যে কারাদ- ও জরিমানার বিধান অপরিবর্তিত রেখে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) আইন ২০১৬-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি মন্ত্রিসভা সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন এবং বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করেছে। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, খসড়া আইনে নতুন ধারণা সংযোজন করে সংশোধন এবং বিদ্যমান আইনের মান উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে সামরিক শাসনের মেয়াদে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানসংক্রান্ত পরিবর্তিত বিষয়গুলো সন্নিবেশিত করে আইনটি সংশোধন এবং এর আগে সামরিক শাসনামলের সকল আইন অবৈধ ঘোষণা সংক্রান্ত সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশাবলী অনুসরণ করা হয়েছে। দিনাজপুরের নশিপুরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতায় গম গবেষণা কেন্দ্র আছে। এ গবেষণা কেন্দ্রকে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করার জন্য বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন নামে নতুন আইন করা হচ্ছে। ভুট্টা নিয়ে গবেষণার জন্য কোন ইনস্টিটিউট নেই জানিয়ে শফিউল বলেন, উত্তরবঙ্গে ভুট্টার চাষ বাড়ছে, তাই ভুট্টাও যুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) এখতিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, খসড়া আইন অনুযায়ী সংস্থার গঠন, ইনস্টিটিউটের পরিচালনা, নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ এবং বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করার বিষয়গুলো ইনস্টিটিউটের অধীনে থাকবে। এতে মান নির্ধারণ এবং লাইসেন্স অনুমোদন ও ইস্যু করার বিষয়গুলোও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের অনুরূপ কারাদ- ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নোটিস জারি ও লাইসেন্সের শর্ত সংক্রান্ত আইনের ২৩ ধারা কেউ লঙ্ঘন করলে এক বছরের কারদ- বা জরিমানা অথবা উভয় দ- প্রদান করা যাবে। এছাড়া ২৪ ধারা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চার বছরের কারাদ- এবং ২৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড এবং মালয়েশিয়ার দুটি কোম্পানির কনসোর্টিয়াম তেনাগা নাসিওনাল বেরহাদ (টিএনবি) এ্যান্ড পাওয়ারটেক এনার্জি সিন্ডিকেশন বেরহাদের মধ্যে যৌথ উদ্যোগ চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, টিএনবি পাওয়ারটেক এবং বিপিডিবি’র মধ্যে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ ভাগ যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ ॥ মালেশিয়ার সঙ্গে আরও একটি বৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করতে যাচ্ছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। মহেশখালীতে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া যৌথ উদ্যোগে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর মালেশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি তেনেগা ন্যাশনাল বারহেড এবং পাওয়ারটেক বারহেড সমন্বয়ে গঠিত কনর্সোটিয়ামের সঙ্গে পিডিবির এ চুক্তি হতে যাচ্ছে। ওই কোম্পানিটি মহেশখালী প্রস্তাবিত বিদ্যুত হাবে কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে, যাতে বাংলাদেশ এবং মালেশিয়ার সমান অংশীদারিত্ব থাকবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে তেনেগা এবং পাওয়ারটেকের মধ্যে একটি জেভিএ স্বাক্ষর হয়। যৌথ উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় কোম্পানির বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের তৃতীয় উদ্যোগ এটি। এছাড়াও পায়রায় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এবং রামপালে পিডিবি ভারতের সঙ্গে আরও একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করছে। এর মধ্যে পায়রায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ শুরু হয়েছে। আর রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। শীঘ্রই চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে। পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আগের দুটি কোম্পানির মতোই হবে এ কোম্পানিটি। বাংলাদেশ এবং মালেশিয়ার সমানসংখ্যক সদস্য পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে দুই দেশের প্রতিনিধি ভাগাভাগি করে দায়িত্ব পালন করবেন। সমঝোতার আলোকে গঠিত যৌথ মূলধনী কোম্পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য অর্থায়ন এবং দরপত্র আহ্বান করবে। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। রামপালের বিষয়ে পরিবেশবাদীদের আপত্তি থাকলেও মহেশখালীতে এখনও কোন আপত্তি তোলেনি। বিদ্যুত বিভাগ সম্প্রতি ওই এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করছে। এছাড়া মহেশখালী দ্বীপে ৫০ হাজার টনের কয়লাবাহী জাহাজ প্রবেশ করার মতো গভীরতা থাকায় সেখানেই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে কয়লা পরিবহনজনিত খরচ কম পড়বে। ইতোমধ্যে মহেশখালীকে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির জন্য একটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্র, কয়লাখালাসের বন্দর এবং অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এখানে জাইকা অর্থায়ন করছে। মহেশখালীর সম্ভাব্যতা জরিপে বলা হয়েছেÑ প্রতিটি ২৪০ মিটার দীর্ঘ জাহাজে কয়লা আনা হবে, যার ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এজন্য সমুদ্রে ১৩ মিটার পানির গভীরতা থাকতে হবে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য বছরে ৫৩ বার কয়লা আনার প্রয়োজন হবে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে উপকূলীয় এলাকায় ১০ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত উৎপাদন অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সব বিদ্যুত কেন্দ্র হবে ‘মেগা সাইজ’ প্রকল্প। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে। সরকার দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনা করছে তাতে এসব প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাইকাই চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশে নিযুক্ত মালেশিয়ার হাইকমিশনার চট্টগ্রামে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন। এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর প্রেরিত এক বিশেষ দূত বাংলাদেশ সফর করে বিদ্যুত-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ওই আলোচনার সূত্র ধরে তেনেগা প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সফর করেন। দেশের পিডিবি এবং বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা মালেশিয়া সফর করে বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ এবং যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে একটি সমঝোতা স্মারক এমওইউ স্বাক্ষর করে তেনেগা এবং পাওয়ার টেক। এবার যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করে কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রমোদ মানকিন ও নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে শোক ॥ সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন এবং বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করেছে। বিগত ১১ মে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রমোদ মানকিন। আর বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে নারীদের প্রথম সাপ্তাহিক বেগম’র সম্পাদক নূরজাহান বেগম মারা যান গত ২৩ মে। শফিউল আলম বলেন, পাঁচ টাকার নোট সরকারী মুদ্রা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পাঁচ টাকার নোট সংবলিত একটি ক্রেস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে ভূমিকার জন্য আইডিবি থেকে পাওয়া পুরস্কার কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন বলেও জানান তিনি। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে ভূমিকার জন্য ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ পুরস্কার পায় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। এছাড়া জাপানে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ এবং জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়েও মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে।
×