ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যমান সংযোগে আর গ্যাসের চুলা বাড়ানো যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩১ মে ২০১৬

বিদ্যমান সংযোগে আর গ্যাসের চুলা বাড়ানো যাবে না

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যমান গ্যাস সংযোগের বর্ধিত চুলার অনুমোদনও বন্ধ করে দিল তিতাস। গত জানুয়ারি থেকে অলিখিতভাবে বাসাবাড়ির গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে আগে থেকে যেসব আবাসিক সংযোগ ছিল তাঁরা চাইলে বর্ধিত চুলা নিতে পারতেন। গত বৃহস্পতিবার তিতাসের তরফ থেকে সকল অঞ্চলের জিএমকে চুলা বর্ধিত করার আবেদন না নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মীর মশিউর রহমান সোমবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, আপাতত এই সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একটি সমন্বয় সভায় এ সংক্রান্ত নির্দেশনার ভিত্তিতে তিতাস এই নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান তিনি। মশিউর রহমান জানান, আমরা দেখছি এই চুলা বর্ধিত করার যে আবেদন আসছে তাতে নতুন সংযোগের মতোই গ্যাসের প্রয়োজন হচ্ছে। এর আগে সংযোগ বন্ধ থাকার সময় গ্রাহক অবৈধভাবে সংযোগ নেয়। পরে সরকার সকল গ্রাহককে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিল দিয়ে সংযোগ বৈধ করার অনুমোদন দেয়। এখনও সেই সব অবৈধ সংযোগই বৈধ করার কাজ শেষ করতে পারেনি তিতাস। নতুন করে এই সুযোগ বন্ধ করে দিলে তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের মাধ্যমে আবার অবৈধভাবে সংযোগ নিলে কি করবে তিতাস জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ভবিষ্যতে কি হবে সেটা এখন বলা কঠিন। তবে এ ধরনের সুযোগতো বার বার আসে না। তিতাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে সংযোগ বন্ধ থাকার সময়ই বেশিসংখ্যক গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। এখানে কোন অনুমোদনের প্রয়োজন না হওয়ায় শুধু তিতাসের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগ সাজশে ঠিকাদারদের সাহায্যে দ্রুত সংযোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছিল বাসাবাড়িতে আর গ্যাস সরবরাহ করতে চায় না সরকার। বিকল্প জ্বালানি এলপিজি দিয়ে বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ করা হবে। গত বছর শেষ দিক থেকে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখে তিতাস। গত জানুয়ারিতে জ্বালানি বিভাগে একটি সমন্বয় সভায় আর গ্যাস সংযোগ না দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় তিতাসকে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, হয়তো আর গৃহস্থালিতে নতুন করে কোন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে এখন গৃহস্থালিতে যেসব জরাজীর্ণ গ্যাস লাইন রয়েছে তাও পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকে আবাসিক এলাকায় নতুন গ্যাসের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে দেখা যায় আবাসিকে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকার পরও গ্যাসের চাহিদা এবং সরবরাহ বাড়াতে হচ্ছে। তখন বিদ্যমান সংযোগে চুলা বৃদ্ধির প্রসঙ্গটি আসে। বৈঠকে জানানো হয় সংযোগ বন্ধ থাকলেও চুলা বৃদ্ধি করার সুযোগ নিচ্ছে গ্রাহক। নতুন গ্যাস না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের অনুমোদন নেয়া হয়নি। ওই বৈঠকে বলা হয় সরকার বাসা বাড়ির রান্নার জন্য এলপিজিকে সহজলভ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে শুধু এলপিজি দেশের সর্বত্র পাওয়াই যাবে না বরং এখনের চেয়ে দামও কমে আসবে। সরকার এবং গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিতরণ পরিস্থিতি বলছে সবখানেই গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুত এবং সার উৎপাদনকে সব থেকে বেশি প্রাধান্য দিলেও চাহিদার পুরোটা সবরাহ করতে পারে না বছরের কোন সময়ে। শিল্প এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঘাটতির কারণেই গৃহস্থালির নতুন সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এখন সারাদেশে দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। তবে এখনও দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি রয়েছে। নতুন করে শিল্প সংযোগ দেয়া এবং বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তে এই চাহিদা দিন দিন আরও বাড়ছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা নতুন করে গ্যাস সরবরাহ আশানুরূপ বৃদ্ধি করতে পারছে না। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বলছে তাদের এলাকার বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর চাহিদা ৬৫২ মিলিয়ন ঘনফুট এর বিপরীতে বর্তমানে ৪০২ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ, টঙ্গি এবং ঘোড়াশালের তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। তবে আশুগঞ্জে একটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হয়েছে। কেন্দ্রগুলো চালু থাকলে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়লে সেক্ষেত্রে অন্যান্যখাতকে সঙ্কটে পড়তে হতো। তবে কৃষি মৌসুম হওয়ায় সারের সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিদিন তিতাসের আওতায় থাকা তিন সারকারখানায় ১০৪ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য সেবখাত মিলিয়ে সরবরাহ হচ্ছে এক হাজার ১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট।
×