ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভুসির চেয়ে চালের দাম কম, গরুও ভাত খাচ্ছে!

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩১ মে ২০১৬

ভুসির চেয়ে চালের দাম কম, গরুও ভাত খাচ্ছে!

সমুদ্র হক ॥ একটা সময় চালের দামের ওপর নির্ভর করত রাজনীতির হাল। চালের দাম বেশি হলে সরকারকে কেউ ছেড়ে কথা বলত না। যন্ত্রচালিত কৃষির এতটাই দ্রুত এগিয়ে চলা যে গো-খাদ্য গমের ভুসির চেয়ে চালের দাম কম। বগুড়ার শিবগঞ্জ, সোনাতলা ধুনট গাবতলী এলাকায় গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬ থেকে ২৮ টাকা দরে। চালের খুদ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে। আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ১৯ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। এই অবস্থায় অনেক গৃহস্থ ও কৃষক তাদের গৃহপালিত পশু গরুকে খাদ্য হিসেবে ভুসির পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে ভাত নরম করে খাওয়াচ্ছে। শিবগঞ্জের কাঠগাড়া গ্রামের গেরস্থ আফসার আলী একটি মিনি ডেইরি ফার্ম দিয়েছেন। যেখানে ৬টি বিদেশী জাতের গরু আছে। প্রতিদিন গো-খাদ্যের জন্য ব্যয় হয় ৮শ’ টাকা। বর্তমানে ভুসির দাম বেশি হওয়ায় গরুগুলোকে অর্ধেক ভুসি ও অর্ধেক নরম ভাত খাওয়াচ্ছেন। এতে অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। ৪শ’ টাকার মধ্যে গো-খাদ্য মিলছে। দেউলী গ্রামের আব্দুল বাসেত বললেন, ভুসির দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদিত ধানের একটা অংশ রেখে দিয়েছেন। গরুর ভুসি খাওয়া কমিয়ে দিয়ে জাউভাত খাওয়াচ্ছেন। সোনাতলা রানীরপাড়া গ্রামের গৃহস্থ সোলায়মান বললেন, আজব কা-। মানুষের খাবারের চেয়ে পশুখাদ্যের দাম বেশি। তৃণভোজী প্রাণী গরু দিনে দিনে মানুষের খাবারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর আগে সবজির দাম কম হলে কৃষক গরুকে মূলা, কপি, বেগুন খাইয়েছে। এখন ভাত খাওয়াচ্ছে। কৃষক মন্তেজার বললেন ‘কলি, ঘোর কলি। কলিকালে কত কী যে দেখা লাগবি !’ বগুড়ার পশুখাদ্য ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বললেন ‘ইদানীং গো-খাদ্য বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি শুনেছেন গৃহস্থ , কৃষক ও ডেইরি ফার্মের মালিকরা গরুকে ভাত খাওয়াচ্ছেন নরম করে। মাসখানেক আগে প্রতি হাটবারে বিক্রি হতো ৫/৬ হাজার টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। গরুকে ভাত খাওয়ালে গরুর স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যা হবে কিনা এমন প্রশ্নে একজন ভেটেরিনারি সার্জন (পশু ডাক্তার) জানান। মধ্যম সাইজের একটি গরুকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ আধাকেজি চালের ভাত নরম করে খাওয়ানো যেতে পারে। এর বেশি খেলেই এসিডিটি বা অম্লসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরুর দীর্ঘদিনের ভুসি খাওয়ার অভ্যাসের মধ্যে হঠাৎ পরিবর্তন এলে সাময়িক অসুবিধা হতেও পারে। তবে পরিমিত খাবারে তেমন অসুবিধা করবে না। প্রবীণ কৃষকদের কাছে থেকে জানা যায়, একটা সময় যখন গোয়াল ঘরে হালের গরু ও গাভী ছিল তখন ভুসির মধ্যে বাসি ভাত খাবার দেয়া হতো। গমের ভুসির দাম তখন ছিল খুবই কম। ভুসির দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর খাদ্য তালিকায় ভাত যোগ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের চিত্র- কৃষক এবার ধানের দাম কম পাচ্ছে। ধান বেচে বেশিদামে ভুসি ও খুদ (চালের আঁকির) কিনতে না পারায় মানুষের সঙ্গে গো-খাদ্যেও ভাত চলে এসেছে।
×