ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৩১ মে ২০১৬

বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনা

নরওয়ের কোম্পানি নরডিক্রাফট কর্তৃক বাংলাদেশের উপকূলে ২৪০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনের প্রস্তাবটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। উক্ত কোম্পানি ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবও জমা দিয়েছে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে। তারা বলেছে, বঙ্গোপসাগর সৈকতের ২৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে উইন্ডমিল স্থাপন করে এই পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব এবং এর জন্য ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক টারবাইন। তবে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কেন যেন এ বিষয়ে আগ্রহী নয়। সংস্থাটি দেশের উপকূলীয় এলাকার আংশিক মানচিত্র তৈরি করে বলছে, দেশে বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাদের বক্তব্য, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের গতিবেগ কম। তবে পিডিবির এই সমীক্ষা ভুল এবং যথেষ্ট তথ্যভিত্তিক নয়। একই আবহাওয়া ও পরিবেশে প্রতিবেশী ভারত ও চীনে বায়ু থেকে যথাক্রমে ১৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ৯০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে এমন টারবাইন আবিষ্কৃত হয়েছে যে, বাতাসের গতিবেগ অল্প হলেও বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। নরওয়ের কোম্পানিটি এমন টারবাইন ব্যবহার করবে বলে জানা গেছে। জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক হুমকির মুখে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো বর্তমানে নবায়নযোগ্য ও বিকল্প জ্বালানি আবিষ্কার এবং ব্যবহারের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। বাংলাদেশের জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা সীমিত। কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্র থাকলেও অত্যধিক পলিমাটি জমার কারণে নাব্য না থাকায় উৎপাদন সীমিত। তবে সূর্যালোক ও বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনা বিশাল। কেননা গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল বিধায় এখানে সূর্যালোকের কোন অভাব নেই। অন্যদিকে সুবিশাল ও প্রলম্বিত সমুদ্র সৈকত বায়ুবিদ্যুতের এক অফুরন্ত উৎস হতে পারে। প্রাথমিকভাবে কিছু ব্যয়বহুল মনে হলেও আখেরে তাতেই বেশি লাভ। অন্যদিকে তেল, গ্যাস ও কয়লানির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র একদিকে ব্যয়বহুল, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। সরকার অবশ্য পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের দিকেও অগ্রসর হচ্ছে। তবে আপাতত সবিশেষ জোর দিয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের দিকে। আমদানিকৃত কয়লা ব্যবহার করে উৎপাদিত বিদ্যুত কতটা মূল্যসাশ্রয়ী হবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে অদূর ভবিষ্যতে দেশীয় কয়লার ভা-ার ব্যবহার করা সম্ভব হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সরকারের সোলার প্যানেল বা সৌরবিদ্যুত এবং বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের দিকেই অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে বায়ুবিদ্যুত নিয়ে বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা ভাল নয়। অনেকদিন আগে কুতুবদিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে একটি বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার অভাবে অচিরেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ফেনীতে দশমিক ৯ মেগাওয়াটের একটি বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে পিডিবির। ৮ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৪ সালে এটি পুনরায় চালু করা হলেও অভিজ্ঞতা ভাল নয়। অথচ এটি থেকে দৈনিক ৮০০ থেকে ৯০০ কিলোওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বায়ুশক্তি ব্যবহার করে পিডিবির ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে নরওয়ের কোম্পানি নরডিক্রাফটের বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবটি বিবেচনা করা যেতে পারে। নরওয়ের এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইউরোপের দেশ পর্তুগাল সম্প্রতি একটানা কয়েকদিন দেশের বিদ্যুত চাহিদার পুরোটাই মেটাতে সক্ষম হয়েছে সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুত ব্যবহার করে। বিশ্বকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে হলে সেদিকে আস্তে-ধীরে অগ্রসর হওয়া ব্যতিরেকে গত্যন্তর নেই। বাংলাদেশেও যেহেতু অফুরন্ত সূর্যালোক বিদ্যমান এবং সুবিস্তৃত সমুদ্রপোকূল রয়েছে, সেহেতু ওই দিকে অগ্রসর হওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
×