ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজিজুর রহমান

ঢাকায় পানির সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৩১ মে ২০১৬

ঢাকায় পানির সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে

ঢাকা মহানগরীর ভূগর্ভের পানি অতি দ্রুত কমে আসছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার অস্বাভাবিক চাপ সামলাতে পারছে না ঢাকা ও এর আশপাশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। গভীর নলকূপ দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বর্ষা মৌসুমে, বৃষ্টি বা বন্যায় পূরণ হচ্ছে না। ঢাকার প্রায় দেড় কোটি নাগরিকের প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে ভূগর্ভের পানির মজুদ যেমন ফুরিয়ে আসছে তেমনি মহানগরীতে ভূমি ধসের আশঙ্কাও সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার চারপাশের নদ-নদী, খাল-বিলসহ সকল প্রাকৃতিক জলাভূমি নাব্য হারিয়ে এবং দখলবাজদের কবলে নিশ্চিহ্ন বা পানিশূন্য হয়ে গেছে। তারপরও এসব জলাশয়ে অবশিষ্ট যে পানিটুকু আছে, তাতেও ভয়াবহ প্রাণঘাতী দূষণ ছড়িয়ে পড়ায় মানুষসহ সকল প্রাণীর ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকায় পানির কোন সমস্যা নেই, ভবিষ্যতেও হবে না। এমন ঢাকা ওয়াসা দাবি করলেও আগামীতে নগরবাসীর জন্য চরম পানি সঙ্কট অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঘাটতি পূরণে দীর্ঘ মেয়াদি কোন পরিকল্পনা না থাকায় ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাজধানী ঢাকার দিকে বানের জলের মতো ধাবমান বাড়তি জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরণ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। ওয়াসার একটি সূত্র মতে, ২০১০ সালে ঢাকার দৈনিক পানির চাহিদার পরিমাণ ছিল ১৯০ কোটি লিটার। এখন ২০১৫ সালে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩০ কোটি লিটার। আর ২০২০ সালে চাহিদার পরিমাণ আরও বেড়ে ৩০০ কোটি লিটার ছাড়িয়ে যাবে। ক্রমবর্ধমান এই বিশাল চাহিদা পূরণে বিকল্প ও নির্ভরযোগ্য কোন উৎস না থাকায় চাহিদার প্রায় পুরোটাই ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। আর এর পরিমাণ হচ্ছে মোট চাহিদার ৭৮ শতাংশ অর্থাৎ ১৭৯ কোটি ৪০ লাখ লিটার। ওয়াসার ৫৭৭টি গভীর নলকূপসহ বেসরকারী মিলিয়ে ৭০০টিরও বেশি গভীর নলকূপ ৭টি অঞ্চলে প্রতিদিন বিরামহীন ২০ ঘণ্টা চালিয়ে ভূগর্ভ থেকে এই পানি তোলা হচ্ছে। অবশিষ্ট ২২ শতাংশ অর্থাৎ মাত্র ৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে ভূউপরিস্থ অর্থাৎ বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দিয়ে। বুড়িগঙ্গার পানি ঢাকার সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাট এবং নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা ও গোদনাইলে অবস্থিত এই ৪টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করে সরবরাহ করা হয়। এদিকে, ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বিস্তৃতির প্রবণতা দ্রুত বেড়ে চলেছে। গত ২০ বছরে এর আয়তন বেড়েছে ৫৫ গুণ। ঢাকায় প্রতিবছর গড়ে ৩ মিটার অর্থাৎ ১০ ফুট পর্যন্ত পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। ফলে অর্ধেকের বেশি গভীর নলকূপে শুকনো মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। কয়েক বছর আগেও যেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ ফুট গভীর থেকে খুব সহজেই পানি উঠে আসত এখন সেখানে ৯০০ থেকে হাজার ফুট গভীর থেকেও পানি তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রতিবছর যে হারে দ্রুত পানির স্তর নেমে যাচ্ছে তাতে করে আগামী ১০ বছরে পানির এই স্তরটি আরও ৩০ মিটার গভীরে চলে যাবে। ফলে তখন একটি গভীর নলকূপেও পানি উঠবে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পরিবেশিত তথ্য থেকে জানা যায়, অপরিকল্পিত, মাত্রাতিরিক্ত ও অবাধে বিরামহীন পানি উত্তোলনের কারণে রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভের পানির স্তর বঙ্গোপসাগরের পৃষ্ঠের গড় উচ্চতার তুলনায় প্রায় ৫২ মিটার অর্থাৎ ১৭০ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে সাগরের লোনা পানি দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল পেরিয়ে মধ্যাঞ্চলসহ ঢাকা মহানগরীর দিকে এগিয়ে আসছে। দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামী দেড় থেকে দুই দশকের মধ্যে সাগরের লোনা পানি ভূগর্ভের শূন্যস্থান পূরণ করতে শুরু করবে। ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এত বেশি নিচে নেমে যাওয়ার ঘটনা পৃথিবীর অন্য কোন মেগাসিটিতে ঘটেনি। ঢাকার পানির চাহিদা জোগানোর প্রধান উৎস হতে পারত বুড়িগঙ্গা নদীসহ মহানগরীর চারপাশ ঘিরে থাকা অন্য আরও ৪টি নদ-নদী তুরাগ ও বালু নদ এবং শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদী। কিন্তু দখলে দূষণে এসব নদ-নদী এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, নাব্য হারানো এই নদ-নদীগুলোর নোংরা, বিষাক্ত ও প্রাণঘাতী পানি এখন পরিশোধনেরও অযোগ্য। কারণ এসব নদ-নদীর তীরে গড়ে ওঠা ১২ হাজারের বেশি শিল্প কারখানা থেকে প্রতিদিন ৬২ ধরনের কঠিন ও তরল বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য অবিরাম পানিতে ফেলা হচ্ছে। একই সঙ্গে তীরবর্তী শহরগুলোর বাণিজ্যিক বর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য, পয়ঃবর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, জীবজন্তুর মৃতদেহ অসংখ্য নৌযানের তেল-মবিল নিঃসরণসহ হাজার হাজার টন তরল ও কঠিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এসব নদ-নদীতে। ফলে দূষণে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে এসব নদ-নদীর পানি। এর সঙ্গে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ে’র মতো ভূমিদস্যু আর নদীখেকোদের বেপরোয়া দখল ও বালি উত্তোলনে ভরাট সঙ্কুুচিত হয়ে যাচ্ছে নদ-নদীগুলো। দখল হয়ে যাওয়া এসব নদ-নদীর ওপর গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, মার্কেট, শিল্পকারখানা, বাড়িঘর, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বস্তি, মসজিদ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার কাঁচা-পাকা স্থাপনা ও অবকাঠামো। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চরম সর্বনাশের মুখে পড়েছে ঢাকার প্রধান নদী বুড়িগঙ্গা। নদীটি এখন নোংরা ও বিষাক্ত ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ঢাকায় উৎপন্ন প্রতিদিন ৭ হাজার টন বর্জ্যরে ৬৩ শতাংশই ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। ঢাকা ওয়াসার সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার প্রায় দেড় কোটি মানুষের ১২ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্যরে ৮০ শতাংশই প্রতিদিন সরাসরি বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এই পয়ঃবর্জ্যরে ২০ শতাংশ, ৪০ শতাংশ সেপটিক ট্যাঙ্কের মাধ্যমে আংশিক পরিশোধিত আর বাকি ৪০ শতাংশ সম্পূর্ণ অপরিশোধিত। এছাড়া হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্প এলাকা থেকে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে ২১ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত কঠিন বর্জ্য ও ১০ থেকে ১৫ হাজার ঘনলিটার তরল বর্জ্য। একই সঙ্গে তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার ঘনলিটার এবং অন্যান্য শিল্প এলাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ ঘনলিটার তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত বর্জ্যরে ভারে ক্লেদাক্ত আর বিরামহীন অসংখ্য নৌযানের চলাচলের কারণে তেল-মবিল, রাসায়নিক, আবর্জনা, মলমূত্র আর কাদাপানির সঙ্গে মিলেমিশে বুড়িগঙ্গার পানি ভিন্ন প্রকৃতির এক তরল পদার্থে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। নদীটির কুৎসিত পানি এখন বিষাক্ত, অচ্ছুৎ। এই পানিতে সকল ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া নদীটির পানির প্রবাহও কমে গেছে মারাত্মকভাবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, বুড়িগঙ্গা নদীর উৎপত্তি যমুনা নদীর শাখা ধলেশ্বরী ও বংশী নদী থেকে। আরও কয়েকটি উৎস থেকেও এই নদীতে পানির প্রবাহ আসে। এগুলোর একটি হচ্ছে কালীগঙ্গা নদী আর অন্যটি হচ্ছে নাগপুরের সলিমাবাদ-বিনুনই থেকে ছোট নদীর প্রবাহ। তবে বুড়িগঙ্গা নদীর ৭০ ভাগ পানিই আসে তুরাগ নদ থেকে। দখলে দূষণে তুরাগ নদটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বুড়িগঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ঢাকার পাশের আরেকটি নদÑ বালু নদ। এই নদটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পানি নিয়ে টঙ্গীতে গিয়ে তুরাগ নদে নিয়ে ফেলত। কিন্তু অন্যান্য নদ-নদীর মতো বালু নদেরও একই করুণ পরিণতি ঘটায় এখন আর আগের মতো পানি বহন করে এনে তুরাগে দিতে পারছে না। ফলে বুড়িগঙ্গা আরও শীর্ণকায় হয়ে পড়ছে। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বালু নদ থেকে উৎপন্ন ছোট দুটি খাল বা নদ নরাই ও দেবধোলাই পানি এনে পৌঁছে দিত ঢাকার অভ্যন্তরে। কিন্তু এখন খাল দুটি পানির বদলে মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, গুলশান, তেজগাঁও, সবুজবাগ, মতিঝিল, ডেমরাসহ ঢাকার বিশাল এলাকার বর্জ্যও পয়ঃবর্জ্য বয়ে নিয়ে ফেলছে বালু নদে। এই নদীটিতে ঢাকা থেকে প্রতিদিন ১০ লাখ ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্য, বর্ষাকালে ৫৬ কোটি লিটার বর্জ্য যুক্ত পানি এবং বিভিন্ন শিল্প কারখানার ৪০০ ঘনফুট বর্জ্য প্রতিদিন মিশছে বালু নদে। এছাড়া, ঢাকার বর্জ্যরে ২৭ শতাংশ মিশছে বালু নদে, ১১ শতাংশ তুরাগ নদে এবং মিরপুর খালে মিশছে ১৩ শতাংশ। এই একই রকম বিপর্যয়ের শিকার শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীও। এককালে ঢাকার শরীরজুড়ে শিরা-উপশিরা ধমনীর মতো প্রবহমান টলটলে পানির ৪৭টি খালের মধ্যে ২৫টি বহুকাল আগেই দখলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বাকি ২২টি খালের অস্তিত্ব-কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে যে ২-৪টি খালের সন্ধান পাওয়া যায়, সেগুলোও এখন বর্জ্য নিষ্কাশনের ড্রেনে পরিণত হয়েছে। ঢাকার নদ-নদী বা খাল কোথাও ব্যবহারযোগ্য পানি তো দূরে থাক, ছোঁয়া যায় এমন পানিও পাওয়া যাবে না। ঢাকার চারপাশের ভূপৃষ্ঠের পানির যখন এমন দুরবস্থা ও মহাসঙ্কট তখন মাত্রারিক্ত জনসংখ্যার পানির চাহিদা জোগান দিতে গিয়ে টান পড়েছে ভূগর্ভস্থ পানির ভা-ারেও। শুধু টানই পড়েনি ট্যানারি শিল্প কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক ও জৈব বর্জ্য বুড়িগঙ্গা নদীতে নিক্ষিপ্ত হওয়ায় এর দূষণ ক্রিয়া ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার ভূগর্ভস্থ পানিতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। লন্ডন ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা ইউনিভার্সিটির এ বিষয়ে পরিচালিত এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এমন আতঙ্কজনক তথ্য পাওয়া যায়। সমুদ্রের পানিসহ ভূপৃষ্ঠের সব ধরনের জলাশয়ের পানিই সূর্যের তাপে বাষ্প হয়ে মেঘ আকারে জমা হচ্ছে আকাশে। যথাসময়ে বৃষ্টি হয়ে তা আবার নেমে আসছে ভূপৃষ্ঠে। বৃষ্টির পানি হয়ে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসা পানির একাংশ খাল নদী হয়ে আবার ফিরে যাচ্ছে সমুদ্রে। অবশিষ্ট পানি চুইয়ে গিয়ে জমা হয় ভূগর্ভস্থ পানির ভা-ারে। ভা-ারটি পুরোপুরি ভরে গেলে ভূগর্ভস্থ অদৃশ্য পানির প্রবাহ যেতে থাকে সমুদ্রের দিকে। দেশ-মহাদেশ পেরিয়ে একসময় গিয়ে পৌঁছে সমুদ্রে। এভাবেই পানি চক্র নামের প্রাকৃতিক যন্ত্রটি কাজ করে চলেছে অনাদিকাল থেকে নিরন্তর, অবিরাম। কিন্তু একশ্রেণীর মানুষের অপরিণামদর্শী ও বিবেকহীন কর্মকা- পানি সম্পদের ভারসাম্য পরিবেশ রক্ষার নিয়ামক পানি চক্রের ওপর মারাত্মক আঘাত হেনে চলেছে। অপরিকল্পিতভাবে ঢাকা মহানগরীর আত্মঘাতী বিস্তার, যেখানে সেখানে শিল্পকারখানা ও জনবসতি গড়ে তুলতে গিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে বন ও জলাভূমি, নির্দয়ভাবে নির্মূল করা হয়েছে প্রকৃতির প্রাণ বৃক্ষকে। রাজধানী ঢাকা ঢাকা পড়েছে ইট পাথর আর কংক্রিটে। এ কারণে ভূগর্ভের পানির ভা-ারটির রিচার্জ বা পুনর্ভরণ প্রক্রিয়ায় প্রায় অপ্রতিরোধ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর মানুষের দানবীয় তৃষ্ণা মিটাতে গিয়ে শত শত গভীর নলকূপ বসিয়ে টেনে তোলা হচ্ছে ভূগর্ভের পানি। ফলে ঢাকা মহানগরীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তরটি দ্রুত গভীর থেকে আরও গভীরে নেমে যাচ্ছে। আর পানিশূন্য স্তরটির শূন্যতা পূরণের জন্য ক্রমশ এগিয়ে আসছে আরেক মহাবিপদ- সাগরের লোনা পানি। ‘পানি চক্র’ বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও পানির অপচয় ও অপব্যবহারের সঙ্গে দূষণের ক্ষেত্রও আমরা ব্যাপক বিস্তৃত করেছি। দূষণে বিষাক্ত করে অব্যবহারযোগ্য করে তুলেছি নদ-নদীর পানি। ফলে একটি মাত্র উৎস হিসেবে ভূগর্ভের পানির ভা-ারটির ওপর ঢাকাবাসীর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতা, অসংযত ও যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে নিরবচ্ছিন্ন উৎস এই ভূগর্ভের পানিকেও আর সহজে পাওয়া যাবে না। কারণ পানি চক্রের রিচার্জ প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে মূলত যথেচ্ছ পানি উত্তোলন, পানি ব্যবস্থাপনার অভাব, নদ-নদী দূষণ ও নাব্য কমে যাওয়ায়। এর বিরূপ প্রভাবে পানি সঙ্কটের সঙ্গে বাড়ছে ঢাকার উত্তাপ ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা। একই সঙ্গে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে ভূমিধসেরও। আর এটা হয়েছে আমাদের অপরিসীম লোভ-লালসা এবং অপরিমেয় বোধহীনতার কারণে। লেখক : পরিবেশবিদ
×