ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব যাচ্ছেন ৪ জুন

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৩০ মে ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব যাচ্ছেন ৪ জুন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে ৪ জুন তিনদিনের সফরে সৌদি আরব যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌদি আরব সফরকালে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত, বিনিয়োগ, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পাবে। এছাড়া বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সৌদি আরব সফরকালে আগামী ৫ জুন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। দুই দেশের শীর্ষ নেতার এই বৈঠকে সৌদিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার পুরোপুরি উন্মুক্ত, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সন্ত্রাস প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রকৌশল, হালাল মাংসসহ বিভিন্ন সামগ্রী আমদানি করতে চায় তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব। এসব পণ্যে আমদানিতে বিশেষ সহায়তা চাইতে পারে সৌদি পক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময়সূচী চূড়ান্ত করে বাংলাদেশকে ইতোমধ্যেই জানিয়েছে সৌদি সরকার। গত বছর শেখ হাসিনাকে সৌদি আরব সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। ওই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সৌদি আরব সফরকালে বাদশা আবদুল আজিজ ছাড়াও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও উপ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন। সৌদি রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক সদস্য ও দেশটির শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরের মধ্য দিয়ে সেখানকার শ্রমবাজার বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতাও বাড়তে পারে। সফরকালে দু’দেশের চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে বলে নিশ্চিত করেছে। এছাড়া সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবেন। এর আগে ২০০৯ সালে তিনি দ্বিপক্ষীয় সফরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে ঢাকা ও রিয়াদের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়েও সফর হয়েছে। সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছে। দেশটিতে শ্রম বাজারে আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ সৌদিতে আরও বেশি হারে জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্যে দিয়ে সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আশা করছে উভয় দেশ। এ সফরে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার-নার্সসহ দক্ষ শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে আরেকটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী হিসেবে সৌদি আরব যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এছাড়া সৌদি সফরের সময় সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হবেন। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন আল জুবায়েরের আমন্ত্রণে দেশটি সফর করেন মাহমুদ আলী। সে সময় দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। সৌদি আরবে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর রিয়াদ সফরের বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হয়। সে সময় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য সৌদি আরব প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরে গেলে সৌদি বাদশাহ খুশি হবেন বলেও জানিয়েছিলেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ওষুধ নেয়ার জন্য সৌদি আরবের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসায়িক ভিসা প্রদানের ইস্যুটিও ঝুলে রয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামে বাংলাদেশী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমি দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফরকালে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে আইএসবিরোধী সামরিক জোটের বিষয়ে ইতোমধ্যেই সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের এই সামরিক জোটে যোগ দিলেও বাংলাদেশ সেখানে সেনা পাঠাতে আগ্রহী নয়। তবে আইএসবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব একযোগে কাজ করবে। আইএসবিরোধী জোটে থেকে সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইনফরমেশন বিনিময়, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কাজে যুক্ত থাকবে বাংলাদেশ। তবে সরাসরি আইএসবিরোধী যুদ্ধে অংশ নেবে না বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরকালে আইএস বিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
×