ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিদানের কীর্তি, সিমিওনের কষ্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩০ মে ২০১৬

জিদানের কীর্তি, সিমিওনের কষ্ট

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একজন অনন্য কীর্তির আনন্দে উড়ছেন, আরেকজন ব্যথার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। রিয়াল মাদ্রিদ ও এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের দুই কোচ জিনেদিন জিদান ও দিয়াগো সিমিওনের অবস্থা এখন এমনই। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল জিতে অনন্য ইতিহাস গড়েছেন রিয়াল কোচ জিদান। আর দুইবার ফাইনালে হারের অগৌরবের রেকর্ড সঙ্গী হয়েছে এ্যাটলেটিকো কোচ সিমিওনের। ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে জিদানের দুর্দান্ত এক গোলের সুবাদেই রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছিল নবম শিরোপা। এক যুগ পর ২০১৩-১৪ মৌসুমে রিয়ালের দশম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জয়ের মুহূর্তেও ডাগআউটে ছিলেন এই ফরাসী কিংবদন্তি। সেবার তিনি ছিলেন তখনকার কোচ কার্লো আনচেলোত্তির সহকারী। আর এবারের মৌসুমে রিয়ালের একাদশতম শিরোপাটি এসেছে জিদানের কোচিংয়ে। ২০১৬ সালের শুরুতে কোচের দায়িত্ব নিয়েই রিয়ালকে ইউরোপ সেরার মুকুট পরিয়েছেন জিদান। মাত্র ছয়মাসের মধ্যে রিয়ালকে অবিশ্বাস্য সাফল্য পাইয়ে দিয়ে তিনি প্রবেশ করেছেন সাত সদস্যের এক অভিজাত ক্লাবে। এবারের আগে খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জয়ের বিরল কৃতিত্বটা ছিল মাত্র ছয়জনের। অভিজাত এই ক্লাবে জিদান যোগ দিয়েছেন সপ্তম সদস্য হিসেবে। ২০০২ সালে খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা জয়ের পর এবারের মৌসুমে কোচ হিসেবেও ইউরোপ সেরার মকুট পরলেন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ী তারকা। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের প্রথম কৃতিত্বটিও ছিল রিয়াল মাদ্রিদের এক কিংবদন্তির। ১৯৫৬ সাল থেকে টানা তিনটি আসরে খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা জিতেছিলেন মিগুয়েল মুনোজ। আর ১৯৬০ ও ১৯৬৬ সালে কোচ হিসেবেও তিনি জিতেছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা। এই ক্লাবের দ্বিতীয় সদস্য জিওভান্নি ট্রাপাট্টোনি। ১৯৬৩ ও ১৯৬৯ সালে এসি মিলানের খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছিলেন ইতালিয়ান এই মিডফিল্ডার। আর ১৯৮৫ সালে জুভেন্টাস প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরা হয়েছিল ট্রাপাট্টোনির কোচিংয়ে। কোচ হিসেবে সবচেয়ে সফল আরেক ইতালিয়ান কার্লো আনচেলোত্তি। দুটি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের হয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জিতেছেন তিনি ২০০৩ ও ২০০৭ সালে এসি মিলানের হয়ে। আর ২০১৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। এর আগে ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে এসি মিলানের জার্সি গায়ে ইউরোপ সেরা হয়েছিলেন আনচেলোত্তি। অভিজাত এই ক্লাবের পরবর্তী দুই সদস্যই হল্যান্ডের। জোহান ক্রুইফ ১৯৭১ থেকে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছিলেন ডাচ ক্লাব এ্যাজাক্সের জার্সি গায়ে। আর ১৯৯২ সালে কোচ হিসেবে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতিয়েছিলেন বার্সিলোনাকে। ২০০৬ সালে কাতালানরা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জিতেছিল আরেক ডাচ কোচ ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের হাত ধরে। তার আগে ১৯৮৯, ১৯৯০ ও ১৯৯৫ সালে খেলোয়াড় হিসেবেও সফল হয়েছিলেন সাবেক এই ডাচ মিডফিল্ডার। মিগুয়েল মুনোজের পর একই ক্লাবের কোচ ও খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জয়ের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন বার্সিলোনার কিংবদন্তি পেপ গার্ডিওলা। ১৯৯২ সালে বার্সিলোনার যে দলটি ক্রুইফের কোচিংয়ে শিরোপা জিতেছিল, সেই দলের অন্যতম খেলোয়াড় ছিলেন গার্ডিওলা। আর বার্সিলোনার কোচ হিসেবে ইউরোপ সেরা হন ২০০৯ ও ২০১১ সালে। জিদানের অবিশ্বাস্য কীর্তির পর নিজের ইন্সটাগ্রাম এ্যাকাউন্টে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও এক সময় রিয়ালে জিজুর সতীর্থ বেকহ্যাম লিখেছেন, আমার বন্ধু শুভেচ্ছা তোমাকে। এমন তারকার হাতেই শিরোপা মানায়... জয় মাদ্রিদের। টানা তিন বছরে দুইবার দলকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে নিয়ে যান সিমিওনে। কিন্তু দুইবারই তীরে এসে তরী ডুবেছে তার দল এ্যাটলেটিকোর। এই কষ্টের কোন ব্যাখ্যা থাকার কথা না। সিমিওনে বলেন, আমি এমন এক পর্যায়ে আছি, বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে। আপনি যখন শরীরের শেষ রক্তবিন্দুও দিয়ে দেবেন, তবু সেটা যথেষ্ট হবে না, কী করে মেনে নেবেন! দারুণ তিনটি বছর কাটালাম, কিন্তু আমি আজ মোটেও এতটুকু খুশি নই। জানি না কোনটার যন্ত্রণা বেশি, এই ফাইনালটি, নাকি গতবারেরটা। ওদের জন্য খারাপ লাগছে, যারা আমাদের খেলা দেখার জন্য এত দূর এসেছে।
×