ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবারও ইউরোপসেরা রিয়াল মাদ্রিদ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩০ মে ২০১৬

আবারও ইউরোপসেরা রিয়াল মাদ্রিদ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইতালির মিলানের বিখ্যাত সানসিরো স্টেডিয়াম যেন লাল-নীলের রঙে সেজেছিল। শান্তির প্রতীক সাদা-কালোও ছিল। তবে লাল-নীলের কাছে তা ম্রিয়মাণই লেগেছে! কিন্তু তাতে কি। স্টেডিয়াম জুড়ে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সমর্থকদের আধিক্য থাকলেও মাঠের লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছে রিয়াল মাদ্রিদই। শনিবার রাতে স্পেনের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী দু’দল ময়দানী লড়াইয়ে নেমেছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে। ২০১৫-১৬ মৌসুমের শিরোপা যুদ্ধে আরেকবার এ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিয়াল। সানসিরোতে নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকে। এরপর ভাগ্য নির্ধারণী টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে জিতে উল্লাসে মেতে ওঠেন রোনাল্ডো, বেল, বেনজামা, রামোসরা। গত দুই মৌসুমে এটি রিয়ালের দ্বিতীয় শিরোপা। অবাক করা ব্যাপার, ২০১৪ সালেও এই এ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে একযুগ পর শিরোপা জিতেছিল গ্যালাক্টিকোরা। এবারসহ রেকর্ড সর্বোচ্চ ১১ বার ইউরোপ সেরার মুকুট পড়লো রিয়াল। বার্সিলোনা বিদায় নেয়ায় ম্যাচে কাতালান সমর্থকরা সমর্থন করে এ্যাটলেটিকোকে। যে কারণে সানসিরোতে ভিসেন্টে ক্যালডেরনের দলটির সমর্থনই বেশি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ময়দানী লড়াইয়ে তাদের মাথা নত করতে হয়েছে। তাইতো ম্যাচ শেষে গ্যালারি জুড়ে দেখা মেলে চোখের জল। নিজেদের ইতিহাসে একবারও ইউরোপা সেরা হতে পারেনি এ্যাটলেটিকো। ১৯৭৪ সালে বেয়ার্ন মিউনিখের কাছে ফাইনালে হারের পর ২০১৪ ও ২০১৬ সালে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে তিনবার রানার্সআপ হওয়ার কষ্টে ডুবতে হয়েছে এ্যাটলেটিকোকে। সঙ্গত কারণেই এ কষ্ট মেনে নেয়া কঠিন। তাইতো মাঠে চোখের পানি সংবরণ করতে পারেননি টোরেস, গাবি, জুয়ানফ্রান, কোকেরা। ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে রিয়াল। ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় জিনেদিন জিদানের দল। বক্সের ডান কোণায় গ্যারেথ বেলকে ফাউল করার সুবাদে ফ্রিকিক পায় রিয়াল। বেলের নেয়া ফ্রিকিক থেকে গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন বেনজামা। কিন্তু গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাকের অসাধারণ দৃঢ়তায় রক্ষা পায় এ্যাটলেটিকো। ১৫ মিনিটে রিয়ালকে আর হতাশ হতে হয়নি। টনি ক্রুসের ফ্রিকিক বেলের মাথা ছুঁয়ে পোস্টের সামনে পড়তেই আলতো টোকায় বল জালে জড়িয়ে দেন রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস (১-০)। পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় রিয়াল। বিরতির পরপরই ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ পায় এ্যাটলেটিকো। ফার্নান্ডো টোরেসকে বক্সের কোণায় পেপে ধাক্কা দেয়ায় পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি রিয়ালের খেলোয়াড়রা প্রথমে মেনে নিতে চাননি। তবে রেফারি নিজের সিদ্ধান্তে ছিলেন অটল। কিন্তু পেনাল্টি শট থেকে এ্যান্টোনিও গ্রিজম্যান গোল করতে ব্যর্থ হন। তার শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ম্যাচের ৭০ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ সুযোগ পায় রিয়াল। ডান দিক দিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে জোরালো শট নিয়েছিলেন বেনজামা। কিন্তু গোলরক্ষক তা রক্ষা করেন। পরের মিনিটেই সহজ সুযোগ নষ্ট করেন রোনাল্ডো। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে সমতা ফেরায় এ্যাটলেটিকো। ডানদিক থেকে নেয়া জুয়ানফ্রানের ক্রস থেকে বদলি হিসেবে নামা বেলজিয়ামের ইয়ানিক কারাসকোর জোরালো শট জালে আশ্রয় নেয় (১-১)। বাকি সময়ে কোন দল গোল না পেলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। এই সময়েও ফয়সালা না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শূটআউটে। টাইব্রেকারে প্রথম তিনটি শট থেকেই গোল করে দু’দলের ফুটবলাররা। কিন্তু পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা জুয়ানফ্রান চতুর্থ শটে গোল করতে ব্যর্থ হন। তার শট ফিরে আসে সাইডপোস্টে লেগে। পঞ্চম ও শেষ শটে ঠা-া মাথায় গোল করে রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন করান সুপারস্টার রোনাল্ডো। ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্ব বগলদাবা করার পর রবিবারই নিজ দেশ স্পেনে ফিরেছে রিয়ালের ফুটবলাররা। দেশটির রাজধানী মাদ্রিদে বিজয়ী বীরদের সংবর্ধনা জানায় হাজার হাজার জনতা। এ সময় খোলা বাসে করে সমর্থকদের ভালবাসার জবাব দেন রোনাল্ডো, বেল, রামোসরা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, রিয়ালের সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব বার্সিলোনা। বার্সার অফিসিয়াল টুইটার থেকে ছোট্ট একটি বার্তা দেয়া হয়। তবে এতে ক্ষোভে রীতিমতো ফুঁসছেন বার্সা সমর্থকরা। এদিকে ফুটবলের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ‘গোলডটকম’ এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেরা একাদশ নির্বাচন করেছে। যেখানে চ্যাম্পিয়ন রিয়ালের সর্বোচ্চ পাঁচ ফুটবলার জায়গা পেয়েছেন। রানার্সআপ এ্যাটলেটিকোর তিনজন আছেন দলে। কিন্তু বার্সিলোনার কেউ একাদশে ঠাঁই পাননি।
×