ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল নামে ডাকা ফুল, মিষ্টি ঘ্রাণে শুদ্ধ সুন্দর প্রকৃতি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩০ মে ২০১৬

ভুল নামে ডাকা ফুল, মিষ্টি ঘ্রাণে শুদ্ধ সুন্দর প্রকৃতি

মোরসালিন মিজান ॥ অগ্নিজিহ্বার দেহরস পান ক’রে/ শ্মশানমালঞ্চে ফুটে উঠছে অসংখ্য স্বর্ণচাঁপা...। রাজধানী ঢাকায় এখন যত যে পরিমাণ স্বর্ণচাঁপা দেখা যায়, অসংখ্যই বলতে হবে। গ্রীষ্মের শুরুতেই দারুণ ফুটেছিল। এখন আরও বেশি দৃশ্যমান। চোখ জুড়িয়ে যায় দেখে। তারও বেশি টানে ফুলটির মিষ্টি ঘ্রাণ। রাজধানী শহরের ফুটপাথে প্রতিদিন বিকেলে ফুলটি ফেরি করে ছিন্নমূল শিশুরা। আস্ত ঝুড়ি ভর্তি ফুল। বাঁশের ঝুড়ি থেকে উঁকি মারতে দেখা যায়। ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামতেই দূরন্ত ছেলেমেয়েরা ছুটে যায় সেদিকে। ফুল নেবেন? কাঁঠালিচাঁপা ফুল। যারা কেনেন তাদেরও বড় একটি অংশ ফুলটিকে কাঁঠালিচাঁপা ভেবে ভুল করেন। আদতে নামটি স্বর্ণচাঁপা! স্বর্ণের মতো রং। তাই স্বর্ণচাঁপা নাম। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মিষ্টি ঘ্রাণ। শুধু মিষ্টি বললে বোঝানো যাবে না, ভীষণ মিষ্টি। গ্রীষ্মের শুরুতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ফুল ফোটা। এখন যেন উৎসব! স্বর্ণচাঁপা মূলত পাহাড়ী প্রজাতি। সমতলেও বৃদ্ধি স্বাভাবিক। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দৃশ্যমান। ঢাকার কথা বললে আসেÑ বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, সোহ্রাওয়ার্র্দী উদ্যানসহ বেশ কিছু এলাকার কথা। এসব এলাকায় এক বা একাধিক গাছ। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে আছে স্বর্ণচাঁপা গাছ। পাশেই জাতীয় জাদুঘর ভবন। ভবনের ডান পাশের প্রাচীর ঘেঁষে লাগানো আছে কয়েকটি গাছ। আর সব গাছের সঙ্গে এগুলো মিলে মিশে আছে। ফলে হুট করে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। স্বর্ণচাঁপা গাছ চেনার আরও একটি সমস্যা হচ্ছেÑ এর প্রচুর পাতা এবং খুব ঘন। এত ঘন যে, এর আড়ালে ফুল অনেকটা লুকিয়ে থাকে। তবে পাশের ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নাকে ঘ্রাণ এসে লাগে। সেই ঘ্রাণ অনুসরণ করলে খুঁজে নেয়া যায় গাছটি। গাছের এত উপরে উঠে ফুল সংগ্রহ করা দুরূহ কাজ বৈকি। কিন্তু পথশিশুরা কাজটি করে মনের আনন্দে। মূলত এরাই রাজধানীর ফুলপ্রেমীদের সঙ্গে স্বর্ণচাঁপার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মগডাল বেয়ে অবলীলায় ফুল সংগ্রহ করছে দুরন্ত পথশিশুরা। কয়েকটি ফুল সুতোয় বেঁধে ছোট্ট তোড়া তৈরি করছে। দাম দশ টাকা। ফুলটি খোঁপায় গোঁজা যায়। ড্রইং রুমের ফুলদানিতে রাখার পক্ষে খুব উপযুক্ত। ঝুড়িভর্তি ফুল নিয়ে এরা শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত ঘুরে বেড়ায়। এভাবে বিক্রি নয় শুধু, স্বর্ণচাঁপার ঘ্রাণ ওরা গোটা এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। এভাবে আরও শুদ্ধ সুন্দর হয় প্রকৃতি। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, স্বর্ণচাপা ভারতীয় উপমহাদেশীয় ফুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম মাইকেলিয়া চম্পকা। ম্যাগনোলিয়া গোত্রের। স্বর্ণচাঁপার কলি লম্বা ধরনের হয়। দেখতে অনেকটা মেয়েদের আঙ্গুলের মতো। সুন্দর আঙ্গুলের অধিকারী নারীকে তাই চম্পককলিও বলা হয়। এর ছয় বা ততোধিক পাপড়ি। ফুলটি প্রথমে দেখতে সাদা হয়। ক্রমশ সোনালি রং ধারণ করে। মূলত এ কারণে ফুলটিকে স্বর্ণচাঁপা বলা হয়। স্বর্ণচাঁপা গাছে গোলাকার ফল হয়। ডালের মাথায় থোকা হয়ে ঝোলে। পাকা ফল পাখিদের প্রিয় খাদ্য। উদ্ভিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বীজ ও কলমের মাধ্যমে কাঁঠালচাঁপার বংশবিস্তার হয়। চিরসবুজ বৃক্ষ বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। এটুকু নিশ্চিত করা গেলে অতিরিক্ত যতœ ছাড়াও বেড়ে ওঠে। ফুল দেয়। ফল দেয়। স্বর্ণচাঁপার আছে ভেষজগুণও। বাত, চক্ষুরোগ ও পায়ের ক্ষত নিরাময় করে। অবশ্য এসব উপকার নিয়ে সাধারণ মানুষ ভাবেন না। ফুলের রূপ আর ঘ্রাণেই বুঁদ হয়ে থাকেন তারা। এখন ঠিক সে সময়টা। উপভোগ করুন। মোটামুটি বর্ষা পর্যন্ত থাকছে এ সুযোগ।
×