ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর যানজট

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৩০ মে ২০১৬

রাজধানীর যানজট

প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা শহরে রাস্তার তুলনায় যানবাহন অনেক বেশি। সে কারণে যানজটও এই শহরে যন্ত্রণার নাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকা যেন এখন ঢাকা শহরের নিত্যদিনের বাস্তবতা। যানজট নিরসনে সরকারের প্রচেষ্টার কমতি নেই। গত সাত বছরে রাজধানীতে কয়েকটি উড়াল সড়ক ও ওভারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। অনেক স্থানের ফুটপাথ দখলমুক্ত করা হয়েছে। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের আংশিক খুলে দেয়া হয়েছে। চালু হয়েছে হাতিরঝিল প্রকল্পও। বাস্তবতা হলো এত কিছুর পরও যানজট কমেনি। গত পাঁচ বছরে রাজধানীতে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি যানবাহন। পরিসংখ্যান মতে, প্রতিদিন গড়ে ৩১৭ নতুন যান নগরীর রাস্তায় নামছে। সব মিলিয়ে দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে নগরীর যানজট সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা। মাসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় নয় হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের অন্য কোন দেশে যানজটের জন্য এত বিপুল অর্থের অপচয় হয় না। শুধু তাই নয়, এ কারণে মহানগরীর ৭৩ ভাগ মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিও হচ্ছে। এসব বিবেচনায় দ্রুত বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে বাধ্য। রাজধানীতে ৩০ ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলছে। রাজধানীতে সোয়া দুই লাখের স্থলে সাড়ে নয় লাখ গাড়ি চলাচল করছে। উল্টোপথে চলা ও আইন না মানা, কার পার্কিংয়ের স্থানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রাস্তা ও ফুটপাথ দখলের কারণে আট ভাগ সড়কের মধ্যে কার্যকর মাত্র আড়াই ভাগ। সিএনজি স্টেশন, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা না থাকা, ট্রাফিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে যানজট হচ্ছে। এমনকি উন্নয়ন কাজ সময়মতো শেষ না হওয়াকেও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। আসলে রাজধানীর যানজটের মোক্ষম সময়টা উপনীত হয় মূলত অফিস সময়সূচীর শুরু এবং শেষটায়। বিশেষ করে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এই সময়সূচীটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই সময়টায় ব্যক্তিগত গাড়িরও ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। ফলে যানজট অনিবার্য। এই সময়টাকে সামনে রেখে যথাযথ কোন পদক্ষেপ নেয়া গেলে যানজটের যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি মিলবে বলে অনেকের ধারণা। যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির নানা পন্থার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে রাস্তার সংখ্যা বাড়াতে হবে। ঢাকার চারপাশে একটি চক্রাকার সড়ক নির্মাণ করতে হবে। ঢাকার ওপর মানুষের চাপ কমাতে আশপাশের শহরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করে সরকারী অফিস-আদালত শহর ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে হবে। আবাসিক এলাকা থেকে সকল প্রকারের বাণিজ্যিক স্থাপনা সরিয়ে নেয়া, এমনকি যানজট সমাধানে ট্রাফিক আইন মেনে চলা, ভিজিলেন্স টিম গঠন, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা, ইন্টার সেকশনের কাছে স্টপেজ বন্ধ করা, অবৈধ পার্কিং, ফুটপাথ ও রাস্তা দখলমুক্ত করাসহ নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিছু কিছু পরামর্শ রাস্তবায়নও হয়েছে; কিন্তু স্থায়িত্ব বেশিদিন হয়নি। এই বিষয়গুলোর প্রতি আবার যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। আসন্ন রমজান ও ঈদ সামনে রেখে এখন থেকেই বাড়বে যানজটের মাত্রা। রমজান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের আসা শুরু হয়েছে। অনেকেই ঈদের বাজার করতে আসেন ঢাকায়। ফলে যানজটের তীব্রতা বাড়বেই। এই ব্যাপারে এখনই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
×