ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর শহরে ইজিবাইকে প্রতি মাসে আদায়

দুই কোটি টাকার চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৩০ মে ২০১৬

দুই কোটি টাকার চাঁদাবাজি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর শহরের ইজিবাইকের সিরিয়াল মেনটেইনের নামে মাসে ২ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছে কয়েকটি চক্র। এ চক্রের সঙ্গে পুলিশের কতিপয় কর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ চালক, মালিক ও যাত্রীরা। তবে খুব তাড়াতাড়ি এসব সমস্যা নিরসনে পৌরসভা টোকেনের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যশোরে ইজিবাইকের যাত্রা শুরু ২০০৮ সালের দিকে। দুই বছর চলাচলের পর ২০১০ সালের দিকে ইজিবাইক মালিকরা পৌরসভায় লাইসেন্স দাবি করেন। তাদের দাবির ভিত্তিতে ৭শ’ ৫০ ইজিবাইককে পৌরসভা লাইসেন্স দেয়। এরপর আর কোন লাইসেন্স দেয়নি পৌরসভা। ফলে ছোট এই শহরে নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই অবাধে চলাচল শুরু করে ইজিবাইক। পৌরসভার হাল ছাড়া ভাবের কারণে শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে শুরু হয় সিরিয়াল মেনটেইনের নামে চাঁদাবাজি। সূত্র মতে, যশোর শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে ৩ হাজার ও শহরের বাইরে থেকে আসা ৩ হাজার ইজিবাইক প্রতিদিন শহরে চলাচল করে। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশের দরুন একটি ইজিবাইক চালককে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ২০ ও ৩০ টাকা করে দিতে হয়। দিন শেষে চালকরা গড়ে ১শ’ ২০ টাকা দেন সিরিয়াল মেনটেইনে নিয়োজিতদের। ১২০ টাকা করে প্রতিদিন ৬ হাজার ইজিবাইক থেকে ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা আদায় করা হয়। যা মাসে দাঁড়ায় ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর এ টাকা সিরিয়াল মেনটেইনের নামে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের লোকজন ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের পালবাড়ি, নড়াইল বাসস্ট্যান্ড, শংকরপুর বাসটার্মিনাল, মুড়লি মোড়, রাজারহাট, মণিহার, নিউমার্কেট, দড়াটানা, ধর্মতলা, আরবপুর, হাইকোর্ট মোড়, হামিদপুর, চাঁচড়া বাজার মোড়সহ কয়েকটি স্থানে ইজিবাইক থামিয়ে সিরিয়ালের নামে চাঁদা আদায় করছে চক্রগুলো। এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পালবাড়ি মোড়ের মনিরুল, ওহিদুল, টাংকু গং। ওই গংয়ের নিয়ন্ত্রণে ১৫ চালকের সমন্বয়ে গঠিত চক্রটি সিরিয়ালের নামে ২ হাজার টাকা করে নিয়ে এ স্ট্যান্ডে ভিআইপি সিরিয়াল দিয়ে থাকে। ওই ১৫ চালক ছাড়া অন্য কেউ এ স্ট্যান্ডে সিরিয়াল দিতে পারে না। তবে ওদের নির্ধারিত জায়গার বাইরে থেকে সিরিয়াল দিতে গেলে ২০/৩০ টাকা ওই গং-কে দিতে হয়। না দিলে চালকদের ওপর নির্যাতন চালায় চাঁদা আদায়কারীরা। এ পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন ৯/১০ হাজার টাকা উত্তোলন হয়। যার সব টাকাই মনিরুল, ওহিদুল, টাংকু গং নিয়ে যায়। একই অবস্থা চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে। সেখানে রানা, শরিফুল, মুন্নাসহ ১০/১২ জন পারিশ্রমিক নিয়ে সিরিয়াল মেনটেইনের নামে চাঁদা আদায় করে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা চাঁচড়া থেকে প্রতিদিন উত্তোলিত প্রায় ১১ হাজার টাকা পকেটস্থ করে। নিউ মার্কেটের ৪ পয়েন্ট থেকে চাঁদা উত্তোলনের তালিকায় রয়েছে আইয়ুব, রাজ ও সাজু। নিউমার্কেট-পালবাড়ি, নিউমার্কেট-মণিহার, নিউমার্কেট-দড়াটানা, নিউমার্কেট বাহাদুরপুর পয়েন্ট থেকে এ চাঁদা আদায় করা হয়। এতে প্রতিদিন প্রতি ইজিবাইক থেকে ২০/৩০ টাকা হারে নিয়ে ১০/১১ হাজার টাকা আদায় করা হয়। যার পুরোটাই ওই চক্রের সদস্যরা পকেটস্থ করে। একইভাবে চাঁদাবাজি চলছে শহরের দড়াটানা হাসপাতাল মোড়ে। এখানে মিঠু, টিপু ও নাসিম প্রতিদিন ৬ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলছে। শংকরপুর টার্মিনালে কামালের নেতৃত্বে চাঁদা উত্তোলিত হয়। মুড়লি মোড়ে সিরাজুলের নেতৃত্বে প্রায় ৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়। মণিহার মসজিদ গেটে চাঁদা আদায় করে রকি, নড়াইল বাসস্ট্যান্ডে সাত্তার, মালেক, ইলিয়াজ, রাজন নসিমন ও ইজিবাইক থেকে সিরিয়ালের নামে প্রতিদিন ১৬ হাজার টাকা উত্তোলন করে। টাকা না দিলে চালকদের ওপর নির্যাতন করা হয় বলে একাধিক ইজিবাইক চালক অভিযোগ করেছেন। মণিহার বিজয় স্তম্ভের সামনে চাঁদাবাজি করে লিটনের নেতৃত্বে কাজল গং। প্রায় ৪ হাজার টাকা এখান থেকে টাকা উত্তোলন করে তারা। এভাবেই প্রতিদিন শহরের মোড়গুলো থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে চক্রগুলো। এছাড়া বাংলাদেশ অটোবাইক কল্যাণ সোসাইটির নামেও চলছে চাঁদাবাজি। তারা রসিদ দিয়ে ১০ টাকা করে নিচ্ছে। অবশ্য তাদের দাবি বিভিন্ন সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত চালক ও অসুস্থ চালকদের পাশে দাঁড়ান। শাহজাহান শিকদার প্রতিদিন সদর উপজেলার লেবুতলা থেকে শহরে ইজিবাইক চালাতে আসেন। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন মোড় অতিক্রম করলে চাঁদাবাজদের ১০/২০/৩০ টাকা করে প্রায় ১২০ টাকার বেশি চাঁদা দিতে হয় বলে জানান। তিনি বলেন, এভাবে দিলে প্রতি মাসে প্রায় ৪ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। এ কারণে দিনের টার্গেট হিসেবে ১২০ টাকা বেশি আয়ের চিন্তা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। তিনি আরও বলেন, পুলিশও এ টাকার ভাগ নেয়। যার কারণে টাকা না দিয়ে উপায় নেই। বাংলাদেশ অটোবাইক কল্যাণ সোসাইটি যশোরের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, তাদের ১২/১৫ জন লোক শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রশিদের মাধ্যমে নির্ধারিত কিছু চাঁদা তোলেন। যা শ্রমিকদের বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যয় হয়। তিনি বলেন, শহরের মানুষ মনে করেন তার সংগঠনের লোক প্রতিদিন বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চাঁদা তোলে যা সঠিক নয়। বরং চাঁদাবাজ চক্রের কারণে তাদের নির্ধারিত কর্মীরা সংগঠনের টাকা উত্তোলন করতে পারেন না। এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ সোহেল হাসান বলেন, ইজিবাইক নিয়ে চাঁদাবাজির কোন খবর প্রশাসনের কাছে নেই। কারণ এটা দেখভাল করে পৌরসভা।
×