ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চিত্রা রায়ের গানে মুগ্ধ ঢাকার দর্শক

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৩০ মে ২০১৬

চিত্রা রায়ের গানে মুগ্ধ  ঢাকার দর্শক

গৌতম পাণ্ডে ॥ সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য ছিল এক মনোরম সন্ধ্যা। শুধুমাত্র হিন্দী নয়, বাংলা গানেও মুগ্ধ করলেন ভারতের জনপ্রিয় শিল্পী চিত্রা রায়। মিলনায়তন ভর্তি শ্রোতা শিল্পীর একের পর এক গান শুনছেন আর করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। নিজে গেয়েছেন আর দর্শকদেরও গায়িয়ে ছেড়েছেন। বেশিরভাগ গান ছিল প্রেমের। সুফি, গজল, হিন্দী, আধ্যাত্মিক এমনটি চলচ্চিত্রের গান শুনিয়েও মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। রবি শঙ্করের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর আর্মি গলফ গার্ডেনে শনিবার সন্ধ্যায় ‘গ্রান্ড সাতরঙ্গী’ শীর্ষক চিত্রা রায়ের একক কনসার্টের আয়োজন করে দি আর্ট অব লিভিং বাংলাদেশ। আকাশের চিত্রপটে বিস্তৃত সাতটি রঙে রাঙানো রংধনু যেমন মানুষকে মোহিত করে, ঠিক তেমটি সাতটি সুরের সঠিক সমন্বয়ে সৃষ্ট চিত্রা রায়ের পরিবেশিত সঙ্গীত শ্রোতা-দর্শককে মুগ্ধ করে। মনে হলো ‘গ্রান্ড সাতরঙ্গী’ নামটি দেয়া যথার্থ। চিত্রা রায়ের কনসার্টের আগে ছিল আর্ট অব লিভিং সম্পর্কে আলোচনানুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাই-কমিশনার ড. আদর্শ সোয়াইকা, শিল্পী চিত্রা রায়, আর্ট অব লিভিংয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর বজলুর রহমান ও কো অর্ডিনেটর সজীব মেনন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, রবি শঙ্করের প্রচেষ্টায় সৃষ্ট ‘আর্ট অব লিভিং’ ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করে আসছে। বর্তমানে ১৫৫ দেশে এই শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছে। রবি শঙ্কর যে সংঘাত ও দুশ্চিন্তামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে আর্ট অব লিভিং। বাংলাদেশে বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এ ফাউন্ডেশনটি। এটি মিরপুরে একটি ‘হ্যাপিনেস স্কুল’ পরিচালনা করছে যেখানে বস্তিবাসী দরিদ্রশিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। আর্ট অব লিভিংয়ের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে দরিদ্রশিশুদের জন্য ‘নবচেতনা ওয়ার্কশপ’ এবং এ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার নারী, যৌনকর্মী, পাচারের শিকার নারী এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ ‘ট্রমা রিলিফ প্রোগ্রাম’। দর্শনীর বিনিময়ে শিল্পী চিত্রা রায়ের একক এ কনসার্ট থেকে প্রাপ্ত অর্থ আর্ট অব লিভিংয়ের ফ্রি হ্যাপিনেস স্কুল প্রজেক্টে ব্যয় করা হবে বলে জানান আয়োজকরা। আলোচনা শেষে মিরপুরের হ্যাপিনেস স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ছিল দলীয় নৃত্য। কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গিন পাখা’ গানের সঙ্গে নৃত্য করে তারা। এরপর এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। মঞ্চে এলেন শিল্পী চিত্রা রায়। সঙ্গীতের প্রতি তার অদম্য আগ্রহ প্রকাশ পায় মাত্র চার বছর বয়সে, আর মাত্র ছয় বছর বয়সে শুরু হয় তার ক্লাসিক্যাল কণ্ঠ সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ। তিনি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত বিষয়ে অনার্স পরীক্ষায় শীর্ষস্থান দখল করেন এবং স্বর্ণপদক পান। এছাড়া তিনি ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের ওপর এমফিল করেছেন এবং সেখানেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। গোয়ালিওর ঘরানার প-িত শ্রী লক্ষণ কৃষ্ণ রাওয়ের অধীনে তিনি উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। চিত্রা রায় তার সঙ্গীতকে তিনি ঈশ্বরের কাছে নিবেদিত অর্ঘ্য হিসেবে জ্ঞান করেন। তাই তার সঙ্গীত প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে তিনি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত রয়েছেন। আর্ট অব লিভিং এবং এর ‘গিফ্ট এ ফিউচার’ এবং ‘গিফ্ট এ স্মাইল’ প্রকল্পে তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশে তিনি বেশ কয়েকটি কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। মঞ্চে এসেই সবার উদ্দেশে বলেন, আমি সবকিছু প্রেমের উদ্দেশে গাইব। প্রেম কোন বাঁধা মানে না। আজ আমার সব গান এটা জুড়েই থাকবে। হিন্দী গজল দিয়েই শুরু করেন তার পরিবেশনা। এরপর একে একে গাইতে থাকেন জনপ্রিয় সব হিন্দী গান। এক পর্যায়ে রুনা লায়লার গাওয়া ‘সাধের লাউ বানাইছে মোরে বইরাগী’ গানটি পরিবেশন করেন। গানের সঙ্গে সবাইকে গাওয়ারও আহ্বান জানান। আবারও শুরু করেন গজল। নিজের লেখা ‘ক্যা খুশী ইয়ে’ গানটিও গাইতে ভুল করলেন না। এরপর পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘সেদিন দুজনে দুলে ছিনু বনে ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা’। পরে একটি হিন্দী গান পরিবেশনের পর আবারও বাংলা গান। গেয়ে শোনান ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না’। একটি ভজন পরিবেশনের পর গেয়ে শোনান ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’। সবশেষ পরিবেশনায় ছিল রুনা লায়লার গাওয়া গান ‘দমা দম মাস্ত কালান্দার।’
×