ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৩০ মে ২০১৬

বাজেট ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজেটে ঘাটতি পূরণে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুধু সঞ্চয়পত্র থেকেই ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যা চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাত থেকে নেয়া ঋণের চেয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছর বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় সরকারের বাজেট ব্যয় মেটাতে অন্যান্য খাত থেকে ঋণ করতে হয়েছে। চলতি অর্থবছর বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় অর্থবছর শেষে ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে। এ অবস্থায় আগে থেকেই সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ এ খাতে বেশি বিনিয়োগ করছে। এর ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, বছর শেষে এ বিক্রি ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়েও এ খাতে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ কমানো যাচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সঞ্চয়পত্রে জনগণের অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে সরকারের দায়দেনা বেড়ে যাচ্ছে, যা কি না দীর্ঘমেয়াদে সরকারের ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। তাই এ খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার জন্য সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমিয়ে দেয়া প্রয়োজন। তবে এর বিরোধিতা করেছিল জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর। সংস্থাটি বলেছে, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরও চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বর্তমানে সরকারের বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের উৎসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হলো সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থায়ন। সঞ্চয়পত্র বিক্রির এ গতিধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে এ খাত থেকে ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। এর ফলে সুদ বাবদ সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হবে; যা স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর। এ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগের জনগোষ্ঠী হলো পেনশনার, ওয়েজ আর্নার্স, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী। তাই সঞ্চয়পত্র প্রকল্পগুলো অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পের মতো বিবেচনা করা হলে তা সঠিক হবে না। তিনি বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থায় বিনিয়োগের চেয়ে সঞ্চয় স্কিমগুলোর বিনিয়োগের বিশেষ পার্থক্য হলো- সঞ্চয়পত্রগুলো এক বছর সময়ের আগে গ্রাহক ভাঙ্গাতে পারে না, অর্থাৎ ব্যাংক আমানতের চেয়ে এটি কম তারল্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। আবার জাতীয় সঞ্চয়পত্র প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত মুনাফার হার সরল হারে নির্ধারিত হয়, ব্যাংক আমানতের মতো এটি ‘কমপাউন্ড ইন্টারেস্ট রেট’ দেয়া হয় না। কেবল পাঁচ বছর মেয়াদী ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ক্ষেত্রে কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট রেট দেয়া হয়। এ অবস্থায় গত বছর সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় দুই ভাগ কমিয়ে দেয়া হয়। বাজারে চালু পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গত বছরের শুরুতে ছিল ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ হার প্রায় দুই ভাগ কমিয়ে গত বছরের জুলাই থেকে করা হয় ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও দেড় শতাংশ কমানো হয়েছে বলে সঞ্চয় অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে।
×