ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জটিলতার মুখে উন্মুক্ত থেকে পাস করা হাজার হাজার শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৯ মে ২০১৬

জটিলতার মুখে উন্মুক্ত থেকে পাস করা হাজার হাজার শিক্ষার্থী

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এসএমএসে আবেদনের জটিলতা কাটলেও এবার কলেজে ভর্তি নিয়ে বড় ধরনের জটিলতার মুখে পড়েছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সাধারণ আট বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগারি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হলেও কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণে তিন দিনেও ভর্তির আবেদন করতে পারেনি উন্মুক্ত থেকে পাস করা কোন শিক্ষার্থী। রোল নম্বরের ডিজিট সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। অনলাইন ও মোবাইলে এসএমএসের কোন পদ্ধতিতেই আবেদন করতে না পারায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠান বুয়েটেরও এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। জানা গেছে, সাধারণ স্কুলের শিক্ষার্থীদের রোল নম্ব^র ৬ ডিজিটের হলেও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রোল নম্ব^র এক্ষেত্রে ১১ ডিজিটের। ফলে রোল নম্ব^র সাপোর্ট না করায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অনলাইনে ভর্তির ফর্ম পূরণ করতে পারছে না। প্রতিবছর ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। এরপর তারা চলে আসে সাধারণ শিক্ষাস্তরের কলেজে। এবার সেখান থেকে এসএসসি পাস করেছে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী। গত বছরও একই সমস্যা তৈরি হয়েছিল জানিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বলছেন, সমস্যা হচ্ছে জেনেও কেন সমাধান না করে ভর্তি শুরু করা হয়? এখন সারাদেশের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে আর উন্মুক্ত থেকে পাস করার পর ৬০ হাজার শিক্ষার্থী দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। দু’একদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ড ও বুয়েটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে কলেজে ভর্তিতে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে তাদের। কিন্তু বারবার কেন একই সমস্যার মুখে আমরা- এ প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের। শিক্ষাবিদসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে সাধারণ শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীরাই মূলত বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এক্ষেত্রে ভাল ফল করে অনেকে আবার সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে আসে। প্রতি বছরই এসএসসি পাস করে সেখানকার শিক্ষার্থীরা সাধারণ কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। আগে সরাসরি কলেজে গিয়ে তারা ভর্তি হতে পারত। কিন্তু গত বছর সকলের জন্য অনলাইন বাধ্যতামূলক করা হলে প্রথমবারের মতো ‘রোল নম্বরের ডিজিট‘ জটিলতায় পড়ে তারা। পরে সমালোচনার মুখে সাধারণ ভর্তির পর তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। সকলের আশা ছিল এবার গত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লগিয়ে উন্মুক্তের শিক্ষার্থীদের জন্য আগেই বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু অনলাইনে ভর্তির আবেদন সকলের জন্য সুফল বয়ে আনলেও যথারীতি দুর্ভোগে পড়েছে উন্মুক্তের শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বলছে, অনলাইনের উদ্যোগের সময় তাদের বিষয়টি ভালভাবে ভাবা হয়নি। ফলে এবার কলেজগুলোতে অনলাইন ভর্তি পদ্ধতির কারণে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। মূলত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রোল নম্ব^র ১১ ডিজিট হওয়ায় তারা ফর্ম পূরণ করতে পারছে না। মিরপুরে কমার্স কলেজে আবেদনে ব্যর্থ হয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাজিব জানিয়েছে, কোন ফর্মেই আমরা ১১ ডিজিট ইনস্টল করতে পারছি না। কলেজে আসার পর বলে বাউবি’তে যেতে, বাউবি’তে যাওয়ার পর বলছে এখানে সমস্যা। আমরা সমস্যা সমাধানে দৌড়াদৌড়ি করলেও সমাধান মিলছে না। আবার অনলাইনে আবেদনের জন্য যে ওয়েবসাইট দেয়া হয়েছে সেখানে গেলেও দেখা যায় আমাদের জন্য কোন অপসনই রাখা হয়নি। ভর্তির জন্য যে ওয়েবসাইট সেখানে কেবল ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর, বাংলাদেশ মাদরাসা ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নাম লেখা আছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজধানীর মিরপুরের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী রিতা আক্তরের মা রুবীনা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কারা যে এসব কাজ করেন? তারা কি জানেন না যে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কি সমস্যা হচ্ছে? শিক্ষার্র্থী রীতা বলেন, অনলাইনে ২৬ তারিখ থেকে আবেদন চলছে। কিন্তু ২৮ তারিখেও আমরা কোন সমস্যার সমাধান পাচ্ছি না। ব্যর্থ হয়ে দোকানে গেছি। সেখান থেকে বলা হয় আপনাদের রোল নম্বর সাপোর্ট করে না। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেন। সেখানে কথা বলতে গেলে তারা কোন কথাই শুনতে রাজি হন না। এখন আমরা কি করব? বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ভর্তি কার্যক্রমের কারিগরি দায়িত্ব পাওয়া বুয়েটের শিক্ষকদের সঙ্গে। কিন্তু তারা যেন বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই রাজি নন। তাদের এক কথা। কাজ চলছে সমাধান হলে জানিয়ে দেয়া হবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুরুল কবীরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার সেলফোনে নাম পরিচয় দিয়ে এসএমএস করা হলে পাল্টা এসএমএস দেয়া হয় তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন। সমস্যার বিষয়ে অবশ্য কথা বলেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মোঃ আশফাকুস সালেহীন। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কাজ করছেন। দ্রুতই সমাধান হচ্ছে সমস্যার। উন্মুক্ত থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। এদিকে এত বড় সমস্যা হলেও তা জানেনই না উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে কোন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেনি বলেও দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, না কেউ আমাদের এ বিষয়টি জানা নেই। কেউ কলেজে ভর্তি হতে পারছে না এটা জানি না। তবে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষবিদ ড. মমতাজ উদ্দিন পাটওয়ারী সমস্যাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেন, গত বছরও একই সমস্যা হয়েছে। এবার নিশ্চয়ই সমাধান করা হবে। তবে এটা নিয়ে খুব একটা কেউ ভাবে না এটাই সত্য। এই সমস্যা হয় উন্মুক্ত থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদালয়ে মাস্টার্স ভর্তি হতে গেলেও। অনলাইনে ১১ ডিজিট সমর্থন করে না। এতে করে তারা অনেক সমস্যায় পড়ছে। অনলাইনে আবেদনকারী তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে ॥ একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিতে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তিন লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী তাদের আবেদন সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে অনলাইনে আবেদন করেছে সোয়া দুই লাখ ও এসএমএসের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ। তবে একজন শিক্ষার্থী একাধিক আবেদন করায় আবেদনের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি সূত্রে জানা গেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন সন্ধ্যায় বলেন, তিন দিনে ১১ লাখেরও বেশি আবেদন পড়ায় বোঝা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ততা। আমাদের সার্ভারে এখন পর্যন্ত কোন জটিলতা হয়নি। টেলিটকের কাছ থেকে ফিরতি এসএমএস পেতে দেরি হওয়ার যে অভিযোগ ছিল সেটাও অনেকাংশে কমে গেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পুরো বিষয়টির তত্ত্বাবধান করছে। আর টাকা পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করছে টেলিটক। আমরা উভয়ের সঙ্গেই সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি গত বছরের মতো এবার শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যায় পড়তে হবে না।
×