ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী

সাম্প্রতিক প্রবণতার অনিন্দ্য প্রকাশ, টেকনিকে তারুণ্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৯ মে ২০১৬

সাম্প্রতিক প্রবণতার অনিন্দ্য প্রকাশ, টেকনিকে তারুণ্য

মোরসালিন মিজান ॥ অসংখ্য নবীন শিল্পী দেশে। যে যার মতো কাজ করছেন। কাজে ভুল আছে। অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে। তারও বেশি আছে সম্ভাবনা। নবীনরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিবেদিত। কৌতূহলী। নানা রকমের নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে ভালবাসেন। তবে তারা বিচ্ছিন্নভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন। নবীনদের সমকালীন ভাবনা, শিল্পরুচির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ভাল সুযোগ নেই। চর্চা এগিয়ে নেয়ার, উৎসাহ দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি করছে নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী। বহু বছরের ধারাবাহিকতায় এবার শুরু হয়েছে ২০তম আসর। শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগ আয়োজিত প্রদর্শনী এখন চলছে জাতীয় চিত্রশালায়। পক্ষকালব্যাপী প্রদর্শনী ঘিরে সরগরম একাধিক গ্যালারি। নবীনদের কাজ দেখে মুগ্ধ শিল্পপ্রেমীরা। কাজের প্রতি যতœ, টেকনিক, মিডিয়ার ব্যবহার- আশাবাদী হওয়ার মতো। সমকালীন শিল্পচর্চার সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো সম্পর্কেও ধারণা দেয় চলমান প্রদর্শনী। শুরুর কথাটি বলে নেয়া যাক। অনেক আগে, ১৯৭৫ সালে প্রথম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এর পর থেকে মোটামুটি নিয়মিত। দ্বিবার্ষিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজকের অনেক নাম করা শিল্পীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় শুরু হলো এবারের আয়োজন। এখন শিল্পী সংখ্যা অনেক। প্রদর্শনীর জন্য ৪৬৪ নবীন শিল্পীর ১ হাজার ২০টি শিল্পকর্ম জমা পড়ে। তার পর বাছাই। মোহাম্মদ ইকবাল, আতিয়া ইসলাম এ্যানী ও নাসিমুন খবীরের বাছাই শেষে ১৮৮ শিল্পীর ২২৭ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে রাখা হয়। এগুলোর মধ্যে ১৮০টি পেইন্টিং। ৩০টি ভাস্কর্য। ৭টি ভিডিও পারফর্মেন্স আর্ট, ৮টি স্থাপনা শিল্প আর ২টি পারফর্মিং আর্ট। ভরপুর আয়োজনে জলরং, তেলরং, এ্যাক্রেলিক আর ছাপচিত্রের বিপুল সম্ভার। এসব মাধ্যমের ঠিক গতানুগতিক ব্যবহার নয়, যথেষ্ট নিরীক্ষা চোখে পড়ে। চিন্তা ও টেকনিকের দিক থেকে তো খুবই আধুনিক। আধুনিক বটে। শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। লোকশিল্পের মৌল উপাদানগুলোকে অনেকে চমৎকার ও আধুনিক উপস্থাপনা দিয়েছেন। চিত্রকর্মে হরেক রকমের ফিগার যেমন আছে, তেমনি পরিবেশ প্রতিবেশ থেকে নেয়া নির্যাস। অস্থির পৃথিবী, ধুকতে থাকা জীবন, টিকে থাকার সংগ্রাম, হাজারো সত্য মিথ্যা নানা রঙে রূপে প্রকাশিত। ভাস্কর্য সংখ্যায় কম। এ ক্ষেত্রে ফিগারের চেয়ে ফর্মকে প্রাধান্য দিতে দেখা গেছে। স্থাপনা শিল্পে চিন্তার উৎকর্ষ, অভিনবত্ব স্বীকার করতে হয়। ভিডিও স্থাপনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অপেক্ষাকৃত নতুন মাধ্যমে নিজের বলাটি যথার্থই বলতে পেরেছেন শিল্পীরা। এবারের আয়োজনে নতুন সংযোজন পারফর্মিং আর্ট। দুই শিল্পীর অনবদ্য পারফর্মেন্স স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছে। এবার প্রদর্শনীর বড় স্বীকৃতি নবীন শিল্পী চারুকলা পুরস্কার ২০১৬ লাভ করেছেন সৈয়দ তারেক রহমান। স্থাপনা শিল্প ‘রূপান্তর ৪’ তাঁকে এই সম্মান এনে দিয়েছে। উড কাট মাধ্যমে গড়া ‘সময় এবং বাস্তবতা ৫’র জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছেন ফকরুল ইসলাম মজুমদার। মিশ্র মাধ্যমে গড়া ‘অতিথি অথবা আত্ম বিবর্তন’র জন্য শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছেন সনদ কুমার বিশ্বাস। তেলরংয়ে শ্রেষ্ঠ তানভীর জালাল। নিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ, জয়নুল আবেদীন, জুবলী দেওয়ান, আখিনুর বিনতে আলীকে দেয়া হয়েছে সম্মান সূচক পুরস্কার। ২৬ মে শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ৯ জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে একবারটি ঘুরে আসা গেলে আগামী দিনের চারুকলার ভাব ভাষা ও গতিপথ সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবেÑ এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
×