ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলে বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনের প্রস্তাব নরওয়ে কোম্পানির

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৯ মে ২০১৬

উপকূলে বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনের প্রস্তাব নরওয়ে কোম্পানির

রশিদ মামুন ॥ নরওয়ের কোম্পানি নরডিক্রাফট বাংলাদেশের উপকূলে ২৪০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নাসার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এখন আধুনিক যে টারবাইন রয়েছে তা দিয়েই সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব। কোম্পানিটি সৈকতের ২৫ কি.মি. অভ্যন্তরে উইন্ডমিল স্থাপন করে বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব বলে সরকারকে জানিয়েছে। কোম্পানির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এক কর্মকর্তা ড. সাইফুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ইউরোপ আমেরিকার উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপকভাবে বায়ু শক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন করা হলেও এখানে তা হচ্ছে না। অথচ একই অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার পরও ভারতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে বায়ু বিদ্যুতের যে বিস্তৃতি বাংলাদেশে তা নেই। তিনি জানান, দেশের পূর্ণাঙ্গ কোন বায়ু বিদ্যুত মানচিত্র নেই। তবে সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আমাদের মনে হচ্ছে সাগরের ২৫ কিলোমিটার ভেতরে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বায়ুর গতি পাওয়া যাবে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এখনও পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার যে আংশিক বায়ু বিদ্যুত মানচিত্র প্রণয়নের কাজ করেছে তাতে বলা হয়েছে দেশে বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। বলা হচ্ছে বাতাসের গতিবেগ (কাট ইন স্পিড) ৫ মিটার/সেকেন্ড না হলে বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের উপকূলে বাতাসের গতিবেগ ৫ মিটার/সেকেন্ডের কম। এছাড়া একটানা বাতাসও পাওয়া যায় না। তবে পূর্ণাঙ্গ বায়ু মানচিত্রর ফল এখন সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়নি। এছাড়া উপকূলের বেশিরভাগ জায়গাই এখনও বায়ু মানচিত্র প্রণয়নের বাইরে রয়ে গেছে। তবে একই ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত ভারত বায়ু থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট, চীনে ৯০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বায়ু প্রবাহ এবং আবহাওয়ায় আমাদের অনেক মিল রয়েছে। যদিও গবেষকরা বলছেন প্রতি সেকেন্ডে বাতাসের গতিবেগ ২ মিটার/সেকেন্ড হলেই বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে এমন টারবাইন আবিষ্কার হয়েছে। ফেনীতে তিন দশমিক পাঁচ মিটার/সেকেন্ড গতিবেগের বাতাস দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়েছে। এখন এর থেকেও ভাল প্রযুক্তি এসেছে। যেসব দেশে বাতাসের গতিবেগ কম তারা এসব টারবাইন ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। আমেরিকায় এ ধরনের টারবাইন ব্যবহার হচ্ছে। একই টারবাইন ব্যবহার করে বায়ু বিদ্যুত উৎপাদন করা সহজ হবে। পিডিবি বলছে ভারতীয় কোম্পানি রিজেন পাওয়ারটেক ফেনীর মুহুরিড্যাম এলাকার সম্ভাবনাময় উপকূলীয় বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা আর কাজ করেনি। নরডিক্রাফট বলছে তারা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন করবে। এখান থেকে প্রায় সারা বছরই রাত-দিন বিদ্যুত পাওয়া যাবে। সাগরের ২৫ কিলোমিটার ভেতরে উইন্ডমিল স্থাপনের জন্য তারা সরকারের কাছে অনুমোদন চেয়েছে। কোম্পানিটি সম্প্রতি বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের আগ্রহ প্রকাশ করে। কোম্পানিটি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও সরকারের কাছে জমা দেয়। প্রতিমন্ত্রী তাদের বিস্তারিত প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দিতে বলেন। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এর আগে নরওয়ে কর্মকর্তা এবং বিদ্যুত সচিব মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। সেখানে বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়ে তারা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় পিডিবির ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় এসব বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তবে এখনও রিজেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করা ছাড়া আর কিছুই করতে দেখা যায়নি। প্রসঙ্গত ফেনীর দশমিক ৯ মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে পিডিবির। কেন্দ্রটি আট বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৪ সালের মার্চে চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রটি থেকে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ কিলোওয়াট আওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব।
×