ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টোকিওতে নিজস্ব নতুন দূতাবাস ভবন উদ্বোধন

বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকবে জাপান ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৯ মে ২০১৬

বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকবে জাপান ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ॥ জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। শনিবার সকালে জাপানের নাগোয়ায় শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় শেখ হাসিনার। বিকেলে টোকিওতে বাংলাদেশের নতুন ও নিজস্ব দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্বিক উন্নয়নে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে কথা দিয়েছেন শিনজো আবে। আমরাও উন্নয়নের আরও কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে এই সহযোগিতার সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে। নতুন দূতাবাস ভবন উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের এই দিনটি সত্যি একটি আনন্দের দিন। আজ সত্যিই আমাদের একটি ঠিকানা হলো। পুরোটাই আমাদের বাংলাদেশ মনে হচ্ছে। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, যিনি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের সঙ্গীদের মধ্যে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। শেখ রেহানাকে ‘জোর করে’ জাপান নিয়ে গেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্রথম জাপান সফরে ‘দুদেশের মধ্যে যে বন্ধুত্ব রচিত হয়েছিল, তার একজন আজ এখানে আছে। ‘ও না এলে এটা অধরাই হয়ে থাকত।’ সেদিন ছোট মেয়ে রেহানার সঙ্গে ছোট ছেলে শেখ রাসেলও বঙ্গবন্ধুুর জাপান সফরের সঙ্গীদের মধ্যে ছিল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা চরম বিপদে পাশে ছিল তাদের কথা ভুলে যাওয়ার নয়। বঙ্গবন্ধু সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণে জাপানের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই বন্ধুত্ব ভুলে যাওয়ার জন্য নয়। জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং সফল হয়েছে মন্তব্য করে সেখানে আমন্ত্রণ জানানোয় শিনজো আবেকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বক্তব্যে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে তিনি বলেন, আগামী বাজেট বিশাল আকারের হবে। এত বড় বাজেট আগে কখনও দেয়া হয়নি। এই সক্ষমতাও আমরা অর্জন করেছি। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছে মন্তব্য করে তা ধরে রাখতে উপস্থিত সরকারী কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। নিজস্ব দূতাবাস ভবন উদ্বোধন ॥ জাপানে বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানী টোকিওর প্রাণকেন্দ্র চিওদা-কু এলাকায় ৭১৪ বর্গমিটার জায়গার ওপর চারতলা নতুন এই দূতাবাস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন। ২০১০ সালের ২৮ নবেম্বর শেখ হাসিনাই জাপানে বাংলাদেশের এই দূতাবাস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জাপানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বাংলাদেশ-জাপান ফ্রেন্ডশিপ লীগের মহাসচিব ইসিরো সুকাদা, জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সেইজি কিহারা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, জাপানের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য অকিহারো নিশিমুরা, জাপানে সৌদি আরব, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, টঙ্গো, কোস্টারিকা, নেপাল, রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া, জাম্বিয়া, জর্দান, ইউএই, থাইল্যান্ড ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। আবে-সিরিসেনার সঙ্গে হাসিনার বৈঠক ॥ এর আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাগোয়ায় জি-সেভেন আউটরিচ বৈঠকের পরদিন শনিবার তাদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় নাগোয়ার ম্যারিয়ট হোটেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত হয় প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার। এরপর একই হোটেলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাপানের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিশ্ব অর্থনীতির সাত পরাশক্তির জোট জি-সেভেনের এবারের সম্মেলন হয়ে গেল জাপানের নাগোয়ায়। সম্মেলনের পাশাপাশি আঞ্চলিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনার জন্য জোটের বাইরে থেকে কয়েকটি দেশকে আলাদা বৈঠক ‘জি-সেভেন আউটরিচ মিটিংয়ে’ আমন্ত্রণ জানানো হয়। শুক্রবার আউটরিচ মিটিংয়ে জি-সেভেনভুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ, জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং সম্মেলনের আয়োজক জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়াও লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাপুয়া নিউগিনি ও শাদের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা অংশ নেন। এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপার্সন এবং বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ প্রধানরাও মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট ওবামা, জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লগার্দসহ অন্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনা নানা বিষয়ে আলোচনা করেন বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন। সার্ক অঞ্চলে কমন অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রস্তাব ॥ বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী সিরিসেনার সঙ্গে বৈঠককালে সার্ক দেশের প্রবাসে কর্মরতদের রেমিটেন্স দেশে পাঠানোর লক্ষ্যে এ অঞ্চলে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রস্তাব করে বলেছেন, শ্রীলঙ্কাও এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় তাদের উদ্যোগ বিনিময় করতে পারে। তিনি বলেন, সার্ক এ অঞ্চলে রেমিটেন্স সরবরাহে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করতে পারে।
×

শীর্ষ সংবাদ: