ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া থিয়েটারের তিন দশক পূর্তিতে উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৯ মে ২০১৬

বগুড়া থিয়েটারের তিন দশক পূর্তিতে উৎসব

সাজু আহমেদ ॥ উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক রাজধানীখ্যাত বগুড়ার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বগুড়া থিয়েটার’। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে তিন যুগ ধরে নাট্যচর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্য আঙ্গিক নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সদস্য বগুড়া থিয়েটারের আজ তিন যুগপূর্তি। এ উপলক্ষে তিন দিনের বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। স্থানীয় শহীদ টিটু মিলনায়তনে ৩ দিনের বর্ণিল উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এতে থাকবে আনন্দ পদযাত্রা, স্মৃতিচারণ, ‘বগুড়া থিয়েটার পদক-২০১৬’ প্রদান, ‘খন্দকার গোলাম কাদের স্মৃতি পদক-২০১৬’ প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, থিয়েটার আড্ডা, নাটকের গান, বিভিন্ন জনপ্রিয় নাটকের অংশ বিশেষ প্রদর্শন, র‌্যাফেল ড্র এবং বগুড়া থিয়েটারে ‘দ্রোহ’ নাটকের মঞ্চায়ন। এছাড়া উৎসবে বৈশাখী মেলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান করা হবে। দলসূত্রে জানা গেছে তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে ‘বগুড়া থিয়েটার পদক ২০১৬’ পাচ্ছেন আলোকসজ্জা শিল্পী বাধন দাস এবং ‘খন্দকার গোলাম কাদের স্মৃতি পদক ২০১৬’ পদক পাচ্ছেন নাট্যকার ও গবেষক অধ্যাপক মোস্তাফা আলী। জানা গেছে, ৩ যুগ পূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বগুড়া জেলা পরিষদ প্রশাসক ডাঃ মকবুল হোসেন। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথি থাকবেন পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান, দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু, ঢাকায় বৃহত্তর বগুড়া সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান রন্টু, বগুড়া জজ কোর্টের পিপি এ্যাড. আবদুল মতিন এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার সহসভাপতি আতিকুর রহমান মিঠু প্রমুখ। উৎসবের উদ্বোধনী দিনে আজ বিকেল ৪টায় সদস্য এবং অতিথিদের নিবন্ধন শুরু হবে। বিকেল সাড়ে ৪টায় উৎসবের উদ্বোধনের পর আনন্দ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রাত ৭-৩০ মিনিটে বগুড়া থিয়েটার পদক ২০১৬ এবং খন্দকার গোলাম কাদের পদক ২০১৬ প্রদান করা হবে। আগামী কাল ৩০ মে বগুড়া থিয়েটার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে থিয়েটার আড্ডা, নাটকের গান, নাটকের অংশ বিশেষ এবং র‌্যাফেল ড্র। এছাড়া ৩১ মে উৎসবের শেষ দিন শহীদ টিটু মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৭-৩০ মিনিটে তৌফিক হাসান ময়না রচিত ও নির্দেশিত ‘দ্রোহ’ নাটক মঞ্চায়িত হবে। এ দিকে দলসূত্রে জানা গেছে বগুড়া থিয়েটারের ৩ যুগ পূর্তি উপলক্ষে আগামী অক্টোবর মাসে দশ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। দলের তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে প্রতিক্রিয়ায় দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের মহাসচিব তৌফিক হাসান ময়না শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকার বাইরের একটি নাট্য সংগঠন তিন যুগ পূর্তি সত্যি আনন্দের। আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে ১৯৮০ সালে দলের যাত্রা শুরু করেছিলাম তার কাছাকাছি হাঁটছি। উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক পরিম-লে বগুড়া থিয়েটার একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে। বিশেষ করে গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বগুড়া থিয়েটার। এক্ষেত্রে আমাদের প্রাপ্তি বাংলা নাটকের আঙ্গিক নির্মাণে আমরা কাজ করেছি সেলিম আল দিনের দেখানো পথ ধরে। তিন যুগের এ যাত্রা পথে আমরা ঢাকা থিয়েটার, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং গ্রাম থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ড. সেলিম আল দিনের স্নেহ এবং আশীর্বাদ ধন্য হয়েছি। দলের অসংখ্য সদস্য তৈরি হয়েছে যাদের মাধ্যমে আমরা অনেক ভাল প্রযোজনা মঞ্চে আনতে পেরেছি। দলের সদস্য অনেকেই ছিলেন যারা এখন নেই তাদের আমরা স্মরণ করছি। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ তো বটেই, দেশের সামগ্রিক নাট্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে বগুড়া থিয়েটার কাজ করেছে, ভবিষ্যতে করে যাবে। তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে দলের সদস্য, দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তৌফিক হাসান ময়না। প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া থিয়েটার দেশে এবং দেশের বাইরে নাটক মঞ্চায়ন করে সুনাম অর্জন করেছে। তিন যুগে বগুড়া থিয়েটার ৬৪টি মঞ্চ এবং অসংখ্য পথ নাটকের প্রদর্শনী করেছে। মঞ্চ ও পথ নাটক মিলিয়ে মোট প্রদর্শনীর সংখ্যা ১৫৮০। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো ‘পাপ পুণ্য’, ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’, ‘ইলেকশান ক্যারিকেচার’, ‘স্বাধীনতা কাঁদে আজ’, ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’, ‘বাসন’, ‘শাস্তি’, ‘যে গল্পের শেষ নেই’, ‘ইঙ্গিত’, ‘কবর’, ‘চৈতালী ঘূর্ণি’, ‘নীলা’, ‘যুদ্ধ এবং যুদ্ধ’, ‘সোনাভানের পালা’, ‘মহুয়া’, ‘স্বাধীনতার গপ্পো’, ‘কোর্ট মার্শাল’, ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’, ‘কথা পুন্ড্রবর্ধন’, ‘মাকড়সা’, ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’, ‘শেষের রাত্রি’, ‘দ্রোহ’, ‘কৈবর্ত্য বিদ্রোহ’, ‘ফকির মজনু শাহ’। উল্লেখযোগ্য পথ নাটক ‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল’, ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’, ‘দখল’,‘বন্যা’৮৪’, ‘মহাভারতের যুদ্ধ’, ‘যুদ্ধ স্বাধীনতা’, ‘মড়া’, ‘রাজ্যচোষা’, ‘পাথর’, ‘শান্তি রক্ষক’, ‘হল্লাবোল’, ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’, ‘গণতন্ত্র বিষয়ক গপ্পো’, ‘দেশের মানুষ’, ‘ইঁদারা’, ‘চোর’, ‘নির্বাচন রঙ্গ’, ‘সূক্ষ্ম বিচার’, ‘বিনে পয়সার ভোজ’, ‘বাবুর পুকুরের গণহত্যা’, ‘নারী কথন’ প্রভৃতি।
×