ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নবজাগরণের আহ্বানে শুরু হলো ছায়ানটের নজরুল উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৮ মে ২০১৬

নবজাগরণের আহ্বানে শুরু হলো ছায়ানটের নজরুল উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখন অনেকেই নিজের মতো করে নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করছেন। ফলে নজরুলের সৃষ্ট সুরের বিকৃতি ঘটছে। রক্ষা হচ্ছে না নজরুল চর্চার শুদ্ধতা। তবে ছায়ানটের খুদে শিল্পীদের শুদ্ধ সুরের গান শুনে মুগ্ধ হলাম এবং অনুধাবন করলাম এই প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধানে শুদ্ধভাবে নজরুল চর্চা হচ্ছে। নজরুলের সৃষ্টির চর্চা নিয়ে ছায়ানটের এই প্রয়াসকে আমার কাছে মনে হলো যেন নবজাগরণ। এভাবে চর্চা নজরুল কখনই হারিয়ে যাবে না। আর যারা নিজেদের মতো করে নজরুলের গান গায় সেসব উন্মাদের হাত থেকে রক্ষা জাতীয় কবির সৃষ্টিসম্ভার। ছায়ানট আয়োজিত নজরুল উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। এভাবেই নজরুলের সৃষ্টির নবজাগরণের আহ্বানে শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের সূচনা হয়। সন্ধ্যার সূর্যাস্ত নামার আগে সবে ভেঙ্গেছে বিদ্যায়তনের শিক্ষার পালা। শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করলেন বিশাল মিলনায়তনে। সবাই শান্ত হয়ে বসলেও গানের সুরে ছিল চঞ্চলতার প্রকাশ। দ্রোহ, প্রেম ও সাম্যের কবিকে স্মরণের আয়োজনে প্রথমেই পরিবেশিত হলো আয়োজক সংগঠনের শিল্পীদের সম্মেলক নৃত্য-গীত পরিবেশনা। সবুজ শাড়ি পরা একঝাঁক শিল্পী গেয়ে যায় ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ গানটি। আর লাল শাড়ি পরিহিত অন্য দলটি মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির মেলবন্ধনে পরিবেশন করে নৃত্য। এরপর পরিবেশিত হলো নজরুলের নানা আঙ্গিকের গান। বাকশিল্পীদের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো কবির দোলায়িত ছন্দের কবিতা। এভাবে প্রথম দিনেই মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকীতে ছায়ানটের উৎসব। সাম্যবাদী ও দ্রোহী চেতনার ধারক জাতীয় কবিকে স্মরণ করে তার জীবনবোধ ও দর্শনকে গানে ও কবিতায় মেলে ধরেন শিল্পীরা। কবির সৃষ্টির আস্বাদনে আগত শ্রোতা-দর্শকের আগমনে পরিপূর্ণ হয় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। সমবেত নৃত্য-গীতের পর স্বাগত কথন নিয়ে মঞ্চে আসেন প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীতশিল্পী শাহীন সামাদ। নজরুলকে নিয়ে ছায়ানটের নিবেদনের অতীত তুলে ধরে বলেন, ১৯৬৬ সাল থেকে প্রায় ৫০ বছর একইভাবে নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন করছে ছায়ানট। পাকিস্তান আমলে শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে নজরুলের ভজন, কীর্তন কিংবা শ্যামা সঙ্গীত গাইতে দিত না। একাত্তরের রণাঙ্গনেও মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করেছে নজরুলের গান। এরপর স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে আমরা গাইতে পারছি কবির গান। অনেকের এই ভুল ধারণা রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে তেমনভাবে নজরুল চর্চা হয় না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এখনকার অধিকাংশ খ্যাতিমান নজরুল সঙ্গীতশিল্পী এক সময় এই প্রতিষ্ঠান থেকে দীক্ষা নিয়েছে। আমার জীবনে আমি যা কিছু পেয়েছি তার সবটাই ছায়ানটের। আর ছায়ানট কখনও রাজনীতি করেনি তার বদলে তুলে ধরেছে বাঙালী সংস্কৃতি। প্রথম দিনের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘আমার নজরুল’ শিরোনামে ভাষাসংগ্রামী ও নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের প্রিয় গান নিয়ে শিল্পীদের পরিবেশনা। ব্যতিক্রমী এই পরিবেশনা মন রাঙিয়ে দেয় দর্শক-শ্রোতার। মঞ্চে ছিলেন রফিকুল ইসলাম। আর তাকে নিবেদন করে শিল্পীরা একে একে পরিবেশন করেন তার প্রিয় সব গান। ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল’ শিশুদের সমবতে কণ্ঠে এ গানের পর নাসিমা শাহিন ফ্যান্সী গেয়ে শোনান ‘এ নহে বিলাস বন্ধু’, নবনীতা চক্রবর্তী শোনান ‘আকাশে হেলান দিয়ে’, সুমন মজুমদার ‘আধো ধরণী আলো আধো আঁধার’, রোকসানা হোসেন মুন্নী ‘ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির সুরভি’, শারমীন সাথী ময়না পরিবেশন করেন ‘তুমি শুনিতে চেয়ো না’, রেজাউল করিম ‘সন্ধ্যা গোধূলি লগনে কে’, নাহিয়ান দুরদানা শুচি শোনান ‘হলুদ গাঁদার ফুল’, মাহমুদুল হাসান ‘আমি গগন গহনে সন্ধ্যা-তারা’, শাহীন সামাদ গেয়ে শোনান ‘গুল-বাগিচার বুলবুলি আমি’। কবির রচনা থেকে পাঠ করেন কৃষ্টি হেফাজ ও মাহমুদা আখতার। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শোনান সুমন চৌধুরী, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সালাউদ্দীন আহমেদ, সুস্মিতা দেবনাথ শুচি, তানভীর আহমেদ, প্রিয়াংকা গোপ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, জান্নাত-এ-ফেরদৌসী লাকী, সামিন ইয়াসার জর্জ, মফিজুর রহমান ও যোসেফ কমল রড্রিক্স। ছায়ানটের শিল্পীদের সঙ্গে আমন্ত্রিত শিল্পীদের পরিবেশনায় সাজানো হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। আজ শনিবার উৎসবের সমাপনী দিন। প্রথম দিনের মতো এদিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। আলিয়ঁসে ‘লাইফ, লাইট এ্যান্ড ক্যাওস’ ॥ ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখে আলোকচিত্রী জয় কে রায় চৌধুরী তুলে এনেছেন জীবনের বাস্তবতা, অনুভূতি, সুখ-দুঃখ ও আনন্দ। মানুষের মুখ, তাদের অভিব্যক্তি এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভিন্নধর্মী গল্পকে ধারণ করে সাজিয়েছেন নিজের প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘লাইফ, লাইট এ্যান্ড ক্যাওস’। ‘রঙে রঙে রংধনু’ ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের শিশু অধিকার ইউনিটের আয়োজনে শুক্রবার থেকে শুরু হলো শ্রমজীবী শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী ‘রঙে রঙে রংধনু’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারি দুইয়ে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত স্মরণোৎসব ॥ কেন্দ্রীয় কচিকাঁচা মেলার আয়োজনে শুক্রবার সংগঠনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত স্মরণোৎসব। এ আনন্দানুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন অধ্যাপক কাজী মদিনা, মেলার সহসভাপতি কবি রবিউল হুসাইন, মেলার প্রবীণ সদস্য শামসুল হুদা, তরুণ সদস্য দেবশ্রী মুখার্জী টুনটুনি, শিশু বক্তা আদিবা ও দিবা। সভাপতিত্ব করেন মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। গুলশানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতাসর ॥ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিষদের আয়োজনে শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। গুলশান এ্যাভিনিউয়ে পরিষদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সঙ্গীতাসরে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন অনিল কুমার সাহা। চতুরঙ্গী পরিবেশন করেন দীপন সরকার। শিল্পীদ্বয়ের সঙ্গে তবলায় সহযোগিতা করেন সৈয়দ সাজিদ হোসেন ও জাকির হোসেন।
×