ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত কমিটি গঠন

ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনায় এলাকা উত্তাল

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৮ মে ২০১৬

 ভোলায় পুলিশের  গুলিতে নিহতের  ঘটনায় এলাকা  উত্তাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা, ২৭ মে ॥ ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নে আসামি ধরাকে কেন্দ্র করে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয়দের বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে উঠেছে জনতা বাজার এলাকা। জনতা বাজার এলাকার অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পকে টর্চারসেল আখ্যা দিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য ও নাসির সর্দারের ফাঁসির দাবিতে কয়েক শ’ নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করেছে। এদিকে পুলিশের গুলিতে নিহত রুম্মানের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আকরাম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়ে এলাকাবাসীকে শান্ত করেন। দায়িত্বে অবহেলার কারণে পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল, আসাদুজ্জামান, রাজিব এবং আলালকে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। তার মধ্যে মামলা নং-৬৬/১৬ ও ৬৪/১৬ এর আসামি রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও শিক্ষক মিজানুর রহমানকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পুলিশ গ্রেফতার করে প্রকাশ্যে মারধর করে অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এতে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্প থেকে মিজানুর রহমানকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে রোম্মান (১৮) নামের এক যুবকের মাথায় গুলি লাগলে ঘটনাস্থলেই সে নিহত হয়। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয় আমিরন, নিরব, জসিম ও মনিরসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। নিহতের ফুফু শাহিনাসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনার রাতে যে বাড়ি পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে সে বাড়ির মালিক নাসির সর্দার ঘটনার সময় পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুড়লে তার ভাইয়ের ছেলে রোম্মান নিহত হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই পুলিশ ক্যাম্প হওয়ার পরই একাধিক মামলার আসামি নাসির সর্দার ও পুলিশ আসামিদের আটক করে অর্থ বাণিজ্য করে আসছে। টাকা না দিলে সাধারণ মানুষদের ধরে এনে তারা নির্যাতন করত। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। এদিকে স্থানীয়রা জনতা বাজার থেকে টর্চারসেল নামক পুলিশ ক্যাম্প আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে দোষীদের বিচারের দাবি জানান। এদিন বিকেলে বেল্লাল জর্মাদারের ছেলে নিহত রোম্মানের জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। অন্যদিকে শুক্রবার সকালে বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আকরাম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। ভোলা সদর সার্কেলের এসএসপি মামুনুর রশিদ জানান, তারা রাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। জনতা বাজার পুলিশ ক্যাম্প থেকে ৪ পুলিশকে ক্লোজ করা হয়েছে। জনতার তোপের মুখ থেকে রক্ষা পেতে অভিযুক্ত নাসির সর্দারকে তারা বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ হেফাজাতে থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৮০ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমানকে স্থানীয়দের হেফাজতে ছেড়ে দেয়া হয়। ভোলা থানার ওসি খায়রুল কবির জানান, ওই এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে এবং এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। অপর দিকে সাদা পোশাকে রাজাপুর ইউনিয়নের ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে বলে ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
×