ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলছে খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের কাজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৮ মে ২০১৬

পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলছে খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের কাজ

মশিউর রহমান খান ॥ পুরোদমে এগিয়ে চলছে খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। বাংলাদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী তিন দেশের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ২১ শতাংশ কাজের অগ্রগতি সম্পন্ন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। অতি গুরুত্বপূর্ণ এ রেললাইনটি চালু হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে উন্নত ব্যবসায়িক সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। খুলনা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত এ লাইনটি নির্মাণ করা হবে। পৃথিবীতে মংলাই একমাত্র সমুদ্রবন্দর যার সঙ্গে রেললাইনের কোন সংযোগ নেই। ফলে শুধু রেললাইনের সংযোগ না থাকায় বড় বড় কন্টেনার পরিবহনে প্রতিনিয়ত সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ কারণে বন্দরটিতে বহির্বিশ্বের কোন বড় মালবাহী জাহাজ ভেড়াতে আগ্রহী হয় না বলে জানা গেছে। ফলে বাধ্য হয়েই তারা চট্টগ্রাম বন্দরে তাদের জাহাজ ভেড়ায়। এর ফলে আর্থিকভাবে তেমন লাভবান হতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। রেলসূত্র জানায়, পাকিস্তান আমলে তৎকালীন সরকার এ রেললাইনটি চালু করার উদ্যোগ নিলেও পরে তা অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার এ রেললাইনটি চালুর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেও পুনরায় এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে দেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ৩ দেশের বাণিজ্যিক কর্মকা- সম্প্রসারণের কথা চিন্তা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শুরু করে। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের সংযোগ স্থাপন করতে এ রেললাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের খানজাহান আলী (র.) সেতুর অদূরে রেল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প এলাকায় গত ১৪ এপ্রিল থেকে রেলসেতু নির্মাণের জন্য রূপসা নদী এবং নদীর দুইপারের ১৪৪টি স্থানে সয়েল টেস্ট করা হবে। ইতোমধ্যে ৮টি স্থানে সয়েল টেস্টের কাজ শেষ করা হয়েছে। আরও ৮টি স্থানে বোরিংয়ের কাজ চলছে। নদীর অভ্যন্তরে ও মূল ভূখ-ে সয়েল টেস্টের কাজ চলমান রয়েছে। জানা গেছে, আগামী দেড় মাসের মধ্যে সয়েল টেস্টের কাজ শেষ করা হবে। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে সময় আরও বেশি লাগতে পারে। সয়েল টেস্টের কাজ শেষ করার পর ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু করা হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয় জমি অধিগ্রহণের অনুমতি প্রদান করেছে। জমি অধিগ্রহণের পরই রেললাইন নির্মাণের মূল কাজ শুরু করা হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটি মূলত ৩টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৭৫০ একর জমির প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে অধিগ্রহণের জন্য খুলনার ৪০১.২৭৯০২ একর, বাগেরহাটের ২৭৫.০২৫৭ একর ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭৩.৩৫৭ একর জমি প্রয়োজন হবে। এদিকে প্রকল্পের অধীনে লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। এর মধ্যে রূপসা নদীর ওপর স্থাপিত রূপসা সেতুর দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এছাড়া ২১টি ছোট ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মিত হবে। খুলনার ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হবে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মংলা। ২০১৮ সালের ৩০ জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং ব্রিজ নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খাতে বাকি টাকা ব্যয় করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এরপর ২০১২ সালের নবেম্বরে ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়িজেভি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায়। পরবর্তীতে প্রকল্পের রেললাইন তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকনের সঙ্গে চুক্তি হয়। এছাড়া ব্রিজ তৈরির জন্য একই বছরের ২৪ আগস্ট ভারতের লারসেন এ্যান্ড টার্ব নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়।
×