ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিসিএল প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৮ মে ২০১৬

বিটিসিএল প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বিটিসিএলের একটি প্রকল্প শুরুতেই অনিয়ম দুর্নীতির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। অনিয়মের কারণে প্রকল্প আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ২০১৩ সালে বিটিসিএল প্রকল্পটি হাতে নেয়। তখন এই প্রকল্পের নামকরণ করা হয় টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ (এনটিএন)। তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিন বছর পরে প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মডানাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেক্টিভিটি। নাম পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অভিযোগ উঠেছে, নাম পরিবর্তন করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়ার কোন প্রকার যুক্তি থাকতে পারে না। প্রকল্পটি চীনের সিএমইসি নামের একটি কোম্পানির বাস্তবায়ন করার কথা। এই কোম্পানির সঙ্গেই বিটিসিএল চুক্তি করেছিল ২০১৩ সালে। অবশ্য বিটিসিএলের কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্পটি শুরুই হয়নি। এখানে দুর্নীতির কোন সুযোগই নেই। সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়নের জন্য ইআরডি চাইনিজ কোম্পানির মধ্যে ‘লিমিটেড টেন্ডার’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি নাম পরিবর্তন করে চীনের জেডটিই হোল্ডিংয়ের কাছে ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি খরচে কাজটি দেয়া হচ্ছে। বিটিসিএলের টেকনিক্যাল কমিটির প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, জেডটিই হোল্ডিং নামক কোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কম যোগ্যতাসম্পন্ন। তারা এর আগে বিটিসিএলের অন্যান্য কয়েকটি প্রকল্পে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ মতে আগ্রহী মোট ৫টি কোম্পানির মধ্যে তিনটি কোম্পানিকে বাদ দিয়ে জেডটিইসহ আরও একটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিটিসিএল ডেটিই নামের কোম্পানির সঙ্গে দর কষাকষির ভিত্তিতে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আরেকটি কোম্পানি প্রকল্প ব্যয় ১৭৫ মার্কিন ডলার ধরে আরেকটি প্রস্তাব বিটিসিএলের কাছে দেয়া দিয়েছে। এই দরের বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী যথাযথ বিবেচনা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই নির্দেশ উপেক্ষা করে বেশি দরেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার সব আয়োজন শেষ করা হয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন পলিসি (আইসিটি) ২০০৯ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই নীতিমালার আওতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে দেশের গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনে ব্যবস্থাকরণ, জাতীয় পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করে সব সরকারী প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্তকরণ ও ইন্টারনেট (আইপিপি) টেলিফোন এবং ভিডিও কনফারেন্সিং চালুর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোকে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিটিসিএলের বিদ্যমান ল্যান্ড টেলিফোন নেটওয়ার্ক পুরনো টেকনোলজিনির্ভর হওয়ায় তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভয়েস কল ছাড়াও যুগের চাহিদার অনুসারে ইন্টারনেট, ডাটা ও ভিডিও আদান-প্রদানের সুযোগ নেই। এজন্য দেশব্যাপী বিদ্যমান পুরনো যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে আধুনিক ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি এবং ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, হাতে নেয়া প্রকল্পে শুরুতেই অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার কারণে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন পলিসি (আইসিটি) বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করবে।
×