ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইন এসএমএসে ভর্তি আবেদনে ব্যাপক সাড়া

দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় কলেজে ভর্তির ভোগান্তি অবসান

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৮ মে ২০১৬

দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় কলেজে ভর্তির ভোগান্তি অবসান

বিভাষ বাড়ৈ ॥ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ায় কলেজ ভর্তির আবেদনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অবসান হয়েছে। টেলিটকে ফি পাঠানোর সমস্যা কেটে যাওয়ায় অনলাইন ও এসএমএসে ভর্তির আবেদনে মিলেছে ব্যাপক সাড়া। স্বস্তি প্রকাশ করছেন অভিভাবকরাও। প্রথম ৩৬ ঘণ্টাতেই আবেদন জমা পড়েছে ছয় লাখ। আবেদন করেছেন দেড় লাখ কলেজ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। কোন রকমের বিড়ম্বনা ছাড়াই দেশব্যাপী একযোগে চলছে ভর্তি কার্যক্রম। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন অনলাইন বা টেলিটকে এসএমএস পাঠিয়ে আবেদন ইস্যুটি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি ও টেলিটক সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন অনলাইনে কোন সমস্যা না হলেও টেলিটকে এসএমএসের টাকা পাঠানোয় যে জটিলতা হয়েছিল তা দ্রুতই নিরসন করা হয়েছে। এর ফলে এখন সাভাবিক গতিতেই আবেদনের ফি পাঠাতে পারছে শিক্ষার্থীরা। সকল বোর্র্ডের হয়ে যিনি বিষয়টিতে সর্বক্ষণিক নজর রাখছেন সেই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মোঃ আশফাকুস সালেহীন রাতে জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষার্থীরা টেলিটক মোবাইল ফোনে এসএমএস এবং অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করছেন এখন স্বাভাবিক গতিতেই। প্রথম দিন যে সমস্যা হয়েছিল তা কেটে গেছে। ফলে আবেদনের পরিমাণও বেড়েছে দ্রুত। আমরা বিভিন্নভাবে খবর রাখছি। সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত আশাপ্রদ। আবেদনের সংখ্যা উল্লেখ করে কলেজ পরির্দশক সন্ধ্যায় বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করেছেন ৯৭ হাজার শিক্ষার্থী। এছাড়া মোবাইলে এসএমএস করে আবেদন করেছে ৪৩ হাজার। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, একজন শিক্ষার্থী গড়ে ৫টি করে আবেদন করছে। কমপক্ষে ৫টি কলেজ পছন্দের তালিকায় রাখছে বলে জানালেন কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীপ্রতি আবেদন সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। এদিকে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আবেদনের সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রথম ৩৬ ঘণ্টায় মোট আবেদন জমা পড়েছে ছয় লাখ। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় কার্যক্রম শুরুর পর অনলাইনে আবেদনে কোন সমস্যা না হলেও সাড়াদেশে টেলিটকে ফি পাঠানো নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে শিক্ষার্থীরা। ফলে আবেদনের গতি শ্লথ হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রথম ১০ ঘণ্টায় আবেদন করতে পারে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জানাতে থাকেন স্বাভাবিক গতিতে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছেন না তারা। কারণ, ভর্তির আবেদনে ফি’র টাকা মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে এসএমএসে দিতে গিয়ে কিছুটা বিপত্তি হচ্ছে। তারা আরও জানান, আবেদনের টাকা পরিশোধ করার জন্য নিয়মানুযায়ী এসএমএস করলেই ফিরতি এসএমএস আসতে দেরি হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বেশ খানিকটা দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছেন। কলেজ পরিদর্শক মোঃ আশফাকুস সালেহীন তখন জানান, প্রথমে কিছুটা সমস্যা হতে পারে তবে টেলিটকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছে, দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। এ সমস্যা সাময়িক। তিনি জানান, টেলিটকের আবেদন বোর্ড থেকে ভেরিফাই হয়ে প্রার্থীর কাছে রিপ্লাই যায়। এক্ষেত্রে একটু সময় লাগছে। তবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সমস্যা দ্রুতই কেটে যাচ্ছে। কথা বলে জানা গেছে, সমস্যা টের পেয়েই সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে বসেন। দ্রুত সমস্যা সমাধানে নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপর টেলিটকের সঙ্গে কথা বলেন কর্মকর্তারা। শুক্রবার সকাল থেকেই পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় কারিগরি সহযোগিতাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফর্মেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি)। শুক্রবার বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকরা জানান, প্রথম দিনেই সার্ভারে অনেক হিট হয়েছে। তাই একটু সমস্যা হয়। তবে তার বড় কোন সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছিল যখন (আবেদনকারী) পেমেন্ট করতে যাচ্ছে, টেলিটকে পেমেন্টটায় দেরি হচ্ছে। এই সমস্যার কথা টেলিটককে জানানো হয়। টেলিটক দ্রুত কাজ করেছে। এখন তেমন কোন সমস্যা নেই। আবেদনের গতিও তা প্রমাণ করে। প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনের আবেদনের গতি কয়েকগুণ। আবেদনের সংখ্যাও সেভাবেই বেড়েছে। দ্বিতীয় দিন অনলাইন ও টেলিটকে আবেদন করেছেন ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শবনম। সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলছিলেন, আমি ভিকারুন নিসা থেকেই এসএসসি পাস করেছি। নীতিমালা অনুসারে আমরা আমাদের কলেজে ভর্তিতে অগ্রাধিকার পাব। তার পরও যাতে কোন সমস্যা না হয় তাই পছন্দের কয়েকটি আবেদন করেছি। নিজের টেলিটক মোবাইল থেকেই এসএমএস করেছি। কোন সমস্যা হয়নি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুর রহমান অনলাইন ও এসএমএস ভর্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলছিলেন, সকল কার্যক্রম অত্যন্ত সুন্দরভাবে চলছে। ঝামেলা ছাড়া আবেদন করছেন প্রার্থীরা। ঝামেলা একদম কমে গেছে কলেজগুলোর। আবেদনের ফি কেটে নেয়া হচ্ছে মোবাইল থেকে, আর প্রার্থীরা দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কোন রকমের ঝামেলা ছাড়া আবেদন করতে পারছেন যোগ্যতাসম্পন্ন অন্তত ২০টি কলেজে। একদিকে টাকা সাশ্রয় হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দৌড়াতে হচ্ছে না কলেজে কলেজ। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলছিলেন, টেলিটকের আবেদন চলছে সুন্দরভাবে। আবেদন নিয়ে কলেজগুলোরও কোন চাপ নেই এখন। আমাদের কাজ শুরু হবে তালিকা প্রকাশের পর ভর্তি শুরু হলে। মতিঝিল আইডিয়াল কলেজের গবর্নিং বডির সদস্য স্থানীয় ১২ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার গোলাম আশরাফ তালুকদার জানালেন, অনলাইনে হওয়ায় আমাদের কোন চাপ নেই। নেই কোন ভর্তির তদ্বিরও। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছে, নতুন ভর্তি নীতিমালা অনুসারে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ প্রক্রিয়ায় আগামী ৯ জুন রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। গত বছর পাঁচ কলেজের সুযোগ থাকলেও এবার ভর্তিচ্ছুরা আবেদন করতে পারছে ২০ কলেজের অনুকূলে; যার ১০টি অনলাইনে ও ১০টিতে এসএমএসে আবেদন করতে হবে। অনলাইনেwww. xiclassadmission. gov.bd ওয়েবসাইট এবং এসএমএস করে শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারছেন। তবে যেকোন মাধ্যমে ১০টির বেশি আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। অনলাইনে আবেদনে ১৫০ টাকা ফি দিয়ে ১০টি কলেজে আবেদন করা গেলেও এসএমএসে প্রতি কলেজের জন্য ফি লাগবে ১২০ টাকা। আবেদনের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন সিম ব্যবহার করতে হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। গত বছর ৫টি কলেজে পছন্দের সুযোগ রেখে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। এবার সমস্যা লাঘবে ২০ প্রতিষ্ঠান পছন্দের সুযোগ করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে (http:// dhakaeducationboard. gov.bd/) ভর্তির নির্দেশিকা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (www.moedu.gov.bd) পাওয়া যাচ্ছে ভর্তির নীতিমালা।
×