ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন

সিঙ্গাপুর আদালতে ছয় বাংলাদেশীর বিচার শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ মে ২০১৬

সিঙ্গাপুর আদালতে ছয় বাংলাদেশীর বিচার শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে সিঙ্গাপুরে বিচার শুরু হয়েছে ৬ বাংলাদেশীর। শুক্রবার ছয় বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সিঙ্গাপুরের একটি আদালত। এর মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন আইনে দেশটিতে প্রথমবারের মতো কেউ বিচারের মুখোমুখি হলেন। ইতোপূর্বে সিঙ্গাপুর থেকে জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িত সন্দেহে দু’দফায় বাংলাদেশে ৩১ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এদের মধ্যে ১৯ জন কারাগারে। আর ১২ জনকে ছেড়ে দেয়া হলেও তাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশটির আন্তঃনিরাপত্তা আইনে (আইএসএ) মিজানুর রহমান, লিয়াকত আলী মামুন, রুবেল মিয়া, দৌলাত জামান, জাবেদ কায়সার হাজী নুরুল ইসলাম সওদাগর ও সোহেল হাওলাদার ইসমাইলকে আটক করে সিঙ্গাপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক প্রতিবেদনে ওই ছয় বাংলাদেশীকে সিঙ্গাপুরে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে সিঙ্গাপুর পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারের জন্য অর্থ যোগান অথবা অর্থ সংগ্রহে শুক্রবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে সিঙ্গাপুরের আদালত। ছয়জনের মধ্যে রুবেল মিয়া ও জাবেদ কায়সার হাজী নুরুল ইসলাম সওদাগর সন্ত্রাসী কাজের জন্য সম্পত্তি রাখার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচজনই নিজেদের দোষ স্বীকার করে আবেদন করবেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন। আগামী ৩১ মে মামলার শুনানিতে তাদের এ ব্যাপারে আবেদন করার কথা রয়েছে। আসামিদের মধ্যে লিয়াকত মামুন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার মামলার বিষয়ে আগামী ৯ জুন বিচারপূর্ববর্তী কনফারেন্সে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মে মাসে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৮ জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। আটজনের মধ্যে বিচারের মুখোমুখি হওয়া ছয়জন রয়েছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে ৩১ বছর বয়সী মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে চলতি বছরের মার্চ মাসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া দলটি তৈরি হয়। দলটির নাম দেয়া হয়েছে ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ। অভিযুক্তদের বয়স ২৬ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। তাদের প্রত্যেকের সিঙ্গাপুরে কাজ করার অনুমতি রয়েছে। অভিযুক্তরা সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন নির্মাণ ও মেরিন কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা এবং বিভিন্ন অস্ত্র ও বোমা তৈরি সংক্রান্ত নানা তথ্য তাদের কাছে পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস ও আল কায়েদার ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। বাংলাদেশে আক্রমণে অস্ত্র কেনার জন্য সংগৃহীত তহবিলও তাদের কাছ থেকে জব্দ হয়েছে। দলের পরিধি বাড়ানোর জন্য সিঙ্গাপুরে কর্মরত অন্য বাংলাদেশীদের যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি জঙ্গী সম্পৃক্ততার অভিযোগে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় অনেক বাংলাদেশীকে। তার মধ্যে গত ৩ মে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে মোঃ মিজানুর রহমান ওরফে গালিব হাসান (৩৮), মোঃ রাহা মিয়া পাইলট (২৯), মোঃ আলমগীর হোসেন (৩১), মোঃ তানজিমুল ইসলাম (২৪) ও মোঃ মাসুদ রানা ওরফে সন্টু খানকে (৩১) গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবি সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরে জঙ্গী সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৩ বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের মধ্যে ৫ জনকে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল দেশে ফেরত পাঠায়। সেই পাঁচজনকেই ৩ মে গ্রেফতার করে ডিবি। ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা দেশটিতে অবস্থান করে জঙ্গী কর্মকা-ের জন্য সদস্য সংগ্রহের কাজ করছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে গিয়েছিলেন তারা। প্রতি সপ্তাহের রবিবার সিঙ্গাপুরের মোস্তফা সেন্টারের বিপরীতে সেরাঙ্গুন এলাকার এ্যাঙ্গুলিয়ার একটি মসজিদে বসে বৈঠক করতেন গ্রেফতারকৃত পাঁচজন। সেখানে জিহাদী বয়ান, ওয়াজ ও জিহাদী ভিডিও দেখতেন। তারা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অনুসারী। বাংলাদেশের মসজিদ ও মাদ্রাসার সাহায্য ও উন্নয়নের কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করে তা জঙ্গী সংগঠনের পেছনে ব্যয় করার জন্য তহবিল গঠন করছিলেন। এছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানীকে জামিনে মুক্ত করতে তারা অর্থ সংগ্রহসহ নানাভাবে চেষ্টা করছিলেন। গ্রেফতারকৃতদের মোবাইল ফোনে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীমুদ্দিন রাহমানী, ড. জাকির নায়েক, আবুল কালাম, শাহ মতিউর রহমান মাদানি, আমানউল্লাহ্ বিন ইসমাঈল, আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের ওয়াজের অডিও এবং ভিডিও পাওয়া গেছে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুর থেকে জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৬ বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠায় সিঙ্গাপুর সরকার। এর মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে। আর অপর ১২ জনকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের সার্বিক কর্মকা- গোয়েন্দারা নিয়মিত নজরদারি করে থাকেন।
×